চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পাহাড়ে খাদ্য সংকট, সীতাকুণ্ডে লোকালয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে বানর

প্রাণ হারাচ্ছে বন্যপ্রাণী

সৌমিত্র চক্রবর্তী

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:২৪ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ড পৌরসদর বাজারের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে বানরের ঝাঁক। দোকানে ঝোলানো কলা, অন্যান্য ফল, বা খাদ্য দেখলেই কেড়ে নিতে চায় প্রাণীগুলো। এ অবস্থা দেখে বাজারের কিছু ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাও তাদেরকে কিনে দিচ্ছে নানান ফলমূল। একই অবস্থা উপজেলা পরিষদের ভেতরেও। বানরেরা ঘুরছে খাদ্যের সন্ধানে। ইতিপূর্বে কখনো সেখানে কেউ কোন বানর না দেখলেও এখন প্রায়শই নেমে আসছে এসব প্রাণী। অবশ্য পাহাড়ের এসব প্রাণীকে লোকালয়ে নেমে আসতে দেখে কৌতূহলী মানুষ ভিড় জমাচ্ছে সেখানে। কেউ কেউ খাবার কিনে দিলেও বেশিরভাই মানুষই ভিডিও বা ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ছেন পাহাড়ে কি তবে খাদ্য সংকট?

 

এদিকে এভাবে খাদ্যের সন্ধানে এসে সম্প্রতি একটি বানর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। বানরটি নিজেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

 

এছাড়া নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে একটি অজগর। অজগর হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সীতাকু- পৌরসদরে ঝাঁকে ঝাঁকে বানর লোকালয়ে নেমে এসে খাদ্য কেড়ে নিচ্ছে। এরকম ঘটনা বেশি ঘটছে পৌরসদর বাজার, উপজেলা পরিষদ এবং পাহাড়ে অবস্থিত মঠ-মন্দিরে। পাহাড়ে প্রয়োজনীয় খাবার না পাওয়ায় প্রাণীগুলো এমন করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

সীতাকুণ্ড পৌরসদর বাজারের ব্যবসায়ী নেতা মো. নাহিদ চৌধুরী জানান, আকস্মিক এক ঝাঁক বানর বাজারে এসে এদিক সেদিন ছুটতে থাকে খাবারের জন্য। আমরা কলাসহ বিভিন্ন ফল কিনে দিয়েছি। অনেকেই খাবার কিনে দিয়েছেন। আবার কিছু মানুষ এসব অবলা প্রাণীকে ধাওয়া করে। ফলে একটি বানর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়।  আসলে খাদ্য সংকট না থাকলে এসব বানর বাজারের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নেমে এসে এভাবে বেঘোরে প্রাণ হারাত না বলে মন্তব্য করেছেন বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মো. শাহীন।

 

এদিকে উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর শহীদুল আলম পাপ্পু জানান, সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা পরিষদের ভেতরেও অনেক বানর দেখা যাচ্ছে। আমরাও তাদেরকে খাবার দিচ্ছি। বানরগুলো এতটাই ক্ষুধার্ত যে আমাদের হাত থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছে। এসব দেখে অনেকেই খাবার নিয়ে এগিয়ে আসছে। তবে উল্টো চিত্রও আছে। বানররা গাছের খাবার খেয়ে নেবে এ আশংকায় অনেকে সেগুলোকে তাড়িয়ে দেয়। ইট পাটকেল ছুড়ছে।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাহমিনা আরজু বলেন, বানর লোকালয়ে আসলে নানান বিপদ আছে। কয়েকদিন আগে একটি বানর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। পরে সেটির চিকিৎসা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শেষে সিভাসুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। খাদ্য সংকটে প্রাণীগুলো ঝুঁকি নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসে যাচ্ছে।

 

এদিকে খাদ্যের জন্য লোকালয়ে নেমে এসে শুধু যে বানর প্রাণ হারাচ্ছে তাই নয়, খাদ্য সংকটে লোকালয়ে এসে প্রায়শই ধরা পড়ছে অজগর, চিত্রা হরিণসহ নানান প্রাণী। গত মাসে পৌরসদরের চৌধুরীপাড়ায় খাদ্যের সন্ধানে নেমে আসা একটি অজগরকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী।

 

সীতাকু- বোটানিক্যাল ইকোপার্ক ও গার্ডেন (পর্যটন) এর রেঞ্জার মো. আলাউদ্দিন জানান, খাদ্যের সন্ধানে প্রায় প্রতিদিনই বানরসহ নানান পশুপাখি পাহাড় ছেড়ে নিচে নেমে আসছে। আসলে এসব প্রাণীর খাবারের মূল উৎস গাছপালা অসচেতনতার কারণে দিনদিন কমছে। আকাশ মনির মতো গাছ যত্রতত্র লাগানোয় ফলের গাছগুলো কমে যাচ্ছে। যা বিরুপ প্রভাব ফেলছে। বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট তীব্র হচ্ছে। জুলাইয়ের শেষ দিকে খাদ্য সংকটে লোকালয়ে এসে চৌধুরীপাড়ায় একটি অজগর সাপ নির্মমভাবে খুন হয়েছে। কেটে সেটি মেরে ফেরার অভিযোগে আমরা মামলা দায়ের করেছি। সম্ভব হলে এসব প্রাণীদের খাবার সরবরাহ করে রক্ষায় সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট