চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গণিত-বিজ্ঞানসহ ১৬ শিক্ষকের পদ শূন্য, রুটিন মাফিক হয় না ক্লাস

মনোরম বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট

জাহাঙ্গীর আলম রাজু , দিঘিনালা

১৮ আগস্ট, ২০২৩ | ৬:৩২ অপরাহ্ণ

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন মনোরম হলেও শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ নেই। ২৩ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন।

প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ১৬ জন শিক্ষকের পদ শূন্য দীর্ঘদিন ধরে। শিক্ষক সংকটে রুটিন মাফিক হয় না ক্লাস। তাই ক্লাস চলাকালীন সময়ে গল্প ও আড্ডায় সময় পার করে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। তাই জরুরি ভিত্তিতে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। জানা যায়, উপজেলার একমাত্র এই সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ গণিত ও বিজ্ঞান বিভাগের কোনো শিক্ষক নেই। অন্য বিভাগের শিক্ষকরা নিচ্ছেন বিজ্ঞান ও গণিতের ক্লাস। ইংরেজি বিভাগের ২ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য দীর্ঘদিন ধরে। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়ের ৫৮০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মরত শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রূদ্র দেব, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিনা শিকদার, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিত্য দে, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জয়শ্রী ত্রিপুরা ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তুষার দেওয়ান জানায়, শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক ক্লাস হয় না। তাছাড়াও গণিত ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি বিষয়ে আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। ইংরেজি বিভাগে একজন শিক্ষকের পক্ষে ৫৮০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাও সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনেক চেষ্টা করেও আমরা ভাল ফলাফল অর্জন করতে পারছি না। তাই জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানায় এ শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক জ্ঞানেশ্বর চাকমা ও মনির হোসেন জানান, ভাল লেখাপড়ার আশায় আমাদের ছেলে মেয়েদের সরকারি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেছি। পাঠদানের ক্ষেত্রে একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তার কিছুই নেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিজ্ঞান ও গণিতসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা প্রত্যাশা অনুসারে জ্ঞানার্জন করতে পারছে না। এমতাবস্থায় আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। বিদ্যালয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জরুরি ভিত্তিতে শূন্যপদে শিক্ষক পূরণের জন্য জোর দাবি জানান তারা।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ এখতার আলী জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে ২৩ জন শিক্ষকের দায়িত্ব ৭ জনে পালন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার মধ্যে বিজ্ঞান ও গণিত বিভাগের শিক্ষক না থাকায় পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও অদ্যাবধি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। এমতাবস্থায় ৫ জন খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ে মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ করা জরুরি বলে জানান তিনি। শিক্ষক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম জানান, ৭ জন শিক্ষক দিয়ে ৫৮০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা আদৌ সম্ভব নয়। তারপরেও পাঠদানের ক্ষেত্রে কর্মরত শিক্ষকরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শিক্ষক সংকটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে একাধিকবার জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট