টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে সাতকানিয়ার সতেরো ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে পানির নিচে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। স্বাধীনতার পরে এ ধরনের বন্যা দেখেনি ওই এলাকার মানুষ। বিদ্যুৎ সাব স্টেশন পানিতে ডুবে যাওয়ায় দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বন্ধ হয়ে গেছে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক। পানিবন্দী মানুষের সাথে বন্ধ হয়ে গেছে স্বজনদের যোগাযোগ। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই পানিবন্দী হয়ে পড়ায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনি কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। তাঁর সাথেও সারাদিন কারো মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তীর ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে শঙ্খ, ডলু ও হাঙ্গরখালের পানি। কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দুই দিন ধরে সারাদেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান। দ্রুত সময়ে পাহাড়ী ঢলে সাতকানিয়ার জনপদ পানিতে তলিয়ে যাবার অন্যতম কারণ হিসাবে সাতকানিয়ার বুক চিরে যাওয়া কক্সবাজার রেললাইনে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকাকে প্রধান কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের মৌলভীর দোকান থেকে সাতকানিয়া রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের উপর অন্তত পাঁচ ফুট পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও বুক আবার কোথায় কোমর পানিতে পানিতে ভাসছে সাতকানিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা কেরানীহাট, সাতকানিয়া সদর। কোমর পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাতকানিয়া থানা ভবন। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। এ অবস্থায় পানিবন্দী মানুষ উদ্ধারে গতকাল বিকেলে এক প্লাটুন (১২০ জন) সেনাবাহিনী পৌঁছেছে সাতকানিয়ায়। আজ বুধবার সকাল থেকে সেনা সদস্যরা উদ্ধার কাজ শুরু করবেন এমনটি আশা করা যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেনা দলের নেতৃত্বে থাকা মেজর মোহাম্মদ শাকিল জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা সাতকানিয়ায় পানিবন্দী মানুষ উদ্ধারে কাজ করব। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে এক প্লাটুন (১২০জন) সেনা সদস্য সাতকানিয়ায় কাজ করবে। জরুরি সহযোগিতার জন্য আমার মুঠোফোন নম্বরে (০১৭৬-৯১০-২৮২২) বন্যাকবলিত যেকোনো মানুষ যোগাযোগ করতে পারবে। যথাসাধ্য সহযোগিতা করার চেষ্টা থাকবে আমাদের।
সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওচমান আলি জানান, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে সোমবার সকাল থেকে পানি বাড়তে থাকে। বিকেলের দিকে ইউনিয়নের গ্রামগুলো তলিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর পর পানি বাড়তে থাকে অস্বাভাবিকভাবে। রাতে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কের কেরানীহাট বাজার এবং বান্দরবান সড়ক উপচে পানি ঢুকে যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দ্রুত পানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ডুবে যায় বিদ্যুতের সাবস্টেশন। টানা বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ মানুষের মুঠোফোন বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবেশীর পাকা বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে অনেক লোকজন। পানি বেড়ে যাওয়ায় স্বজনরা যোগাযোগ করতে পারছেনা পানিবন্দী মানুষের সাথে। পানির প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা যেন সোনার হারিণ।সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের।
পূর্বকোণ/পিআর