চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ঘোর মৌসুমেও কাক্সিক্ষত ইলিশ মিলছে না সাগরে

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

১ আগস্ট, ২০২৩ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে জীবন বাজি রেখে গভীর সমুদ্রে গিয়েও কাক্সিক্ষত ইলিশ পাচ্ছে না জেলেরা। দীর্ঘ ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধ রাখার পরেও ঘোর মৌসুম ও পূর্ণিমার জো’তে এভাবে মাছ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরছেন তারা। তবে আগামী অমাবস্যার জো’তে আশানুরুপ ইলিশ মিলতে পারে বলে জেলে ও মৎস্য কর্মকর্তারা মনে করছেন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলায় মোট ৩৮টি জেলে পল্লী আছে। এসব পল্লীতে বসবাসকারী অর্ধ লক্ষাধিক জেলের জীবন চলে সাগরে মাছ শিকার করে। সারাবছর বিভিন্ন প্রকার মাছ শিকার করলেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে বর্ষায় ইলিশ শিকার। মূলত বর্ষায় এই ইলিশ শিকার ও বিক্রির টাকাতেই পুরো বছর সংসার চলে তাদের।

 

বলাবাহুল্য প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। যা বিক্রি করে দুঃখ দূর করেন জেলেরা। জেলেদের এই ইলিশের মৌসুম ছিলো মূলত জুন-জুলাই-আগস্ট। প্রাচীনকাল থেকে এই তিন মাসে প্রচুর ইলিশ শিকার করতেন জেলেরা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার মে মাস থেকে জুলাই মাসের মোট ৬৫ দিন পর্যন্ত সাগরে মাছ শিকার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে।

 

জেলেরা জানান, উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে তাদেরকে এবারও ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিন মাছ শিকার বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় এই ৬৫দিন মাছ শিকার বন্ধ রাখলে মা ইলিশ সাগরে ডিম ছাড়বে তাতে ইলিশ যেমন বাড়বে তেমনি ইলিশগুলোর আকারও বেশ বড় হবে।

 

নির্দেশনা মেনে ইলিশ শিকার বন্ধের পর সম্প্রতি জেলেরা আবারো জীবন বাজি রেখে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যেতে শুরু করেন। কিন্তু মাছ শিকার বন্ধের যে সুফল তা এখনো মেলেনি। বেশিরভাগ জেলে নৌকা নিয়ে ফিরে আসছে, হাতেগোনা কিছু ইলিশ নিয়ে।

 

সরেজমিনে গতকাল (সোমবার) দুপুরে উপজেলার অন্যতম জেলে পল্লী বাঁশবাড়িয়ার বোয়ালিয়াকূল ও কুমিরা ঘাটঘরে ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা মাছ শিকার করে খুবই হতাশ হয়ে ফিরছেন। বাঁশবাড়িয়া বোয়ালিয়াকূল সাগরপাড়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করে দেখা যায় এ সময়ে শতাধিক জেলে নৌকা গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করে ফিরেছে। এসব নৌকাগুলোর কোনটিতে ২-৩ কোজি, কোনটিতে ৪-৫ কেজি হারে মাছ এসেছে।

 

এখানেই কথা হয় স্থানীয় জেলে বিকাশ জলদাশ, হিরো লাল জলদাশ, কমল জলদাশসহ আরো বেশ কয়েকজন জেলের সাথে। তারা জানান, ৬৫ দিন বন্ধের পর তারা অনেক অপেক্ষায় ছিলেন যে সাগরে বড় বড় মাছ ধরা পড়বে। কিন্তু দুর্ভাগ্য কাক্সিক্ষত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

 

কেন মাছ নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলেরা বলেন, একদিকে বৃষ্টি না থাকায় সাগরে স্রোত নেই। ইলিশ সবসময় স্রোতে থাকে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে সন্দ্বীপ চ্যানেলের বেশ কিছু স্থানে চর পড়ে গেছে। এ কারণেও ইলিশ আসতে বাধা পাচ্ছে।

 

কুমিরা ঘাটঘর জেলে পাড়ার জেলে কৃষ্ণ জলদাশ ও আকাশ জলদাশ বলেন, সামনের অমাবস্যার জো আসতে এখনো ১৫-১৬ দিন। আমরা অপেক্ষায় আছি। হয়ত সে জো’তে আশানুরুপ ইলিশ মিলবে।

 

এদিকে জেলেদের হতাশার বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বৃষ্টি না থাকায় স্রোতহীন সাগরে আশানুরুপ ইলিশ মিলছে না একথা ঠিক। আবার সাগরের বিভিন্ন স্থানে চর পড়ে যাওয়ারও একটি প্রভাব পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে আমরা আশাবাদী, সামনে বৃষ্টি হবে ইলিশও আসবে।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট