চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চলতি মাসেই কালুরঘাট সেতু সংস্কার কাজ

পূজন সেন, বোয়ালখালী

১ জুন, ২০২৩ | ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত বৃটিশ আমলের কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ চলতি মাসে শুরু করতে চাচ্ছে রেলওয়ে। বুয়েটের পরামর্শক দলের পরামর্শে জরাজীর্ণ সেতুটিকে কক্সবাজারের রেল যাতায়াতের জন্য উপযোগী করে তোলা হবে। সংস্কারের পর আগামী সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজার রুটে রেল চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ১৫ জুনের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, টেন্ডারের পরপরই সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। সংস্কার কাজ চলাকালীন সময়ে সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে এখনো সেতু বন্ধ রাখার বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়নি।

 

সংস্কার চলাকালীন সময়ে সেতু বন্ধ থাকলে নদী পারাপারের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কালুরঘাটে চলাচল করবে ফেরি। এ লক্ষ্যে আনা হয়েছে তিনটি ফেরি। এরমধ্যে দুইটি ফেরি যানবাহন পারাপার করবে। অপরটি রিজার্ভে থাকবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফেরি চালুর সার্বিক প্রস্তুতি সস্পন্ন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে টোলের হার নির্ধারণ না হওয়ায় প্রস্তুতিা তিন মাসেও ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

 

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা ফেরি চালু করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ফেরি সার্ভিস চালু করতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে।’

 

গত ৬ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর বলেছিলেন, ‘জুন মাসে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হবে। পুরনো সেতুর সংস্কার কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ছয় মাস। তবে সেতুর মূল রেললাইনের সংস্কার কাজ তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হবে।’

 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৩১ সালে নির্মিত কালুরঘাট রেল সেতু এর আগে দুইবার বড় ধরণের সংস্কার করা হয়েছিলো। এখন কক্সবাজারে ভারী ইঞ্জিনের রেল যাবে। তাই কালুরঘাট সেতু আবারো সংস্কার করতে হচ্ছে। বর্তমানে এই সেতুতে রেলের গতি ১০ কিলোমিটার। সংস্কারের পর তা ৫০-৬০ কিলোমিটারে উত্তীর্ণ হবে। এবারের সংস্কারকাজে লাগবে অন্তত ৫৫ কোটি টাকা। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল।

 

চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে একজোড়া ডেমু রেল চলাচল করে এ সেতু দিয়ে। এছাড়া দোহাজারী-কালিয়াইশ পিকিং পাওয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস তেলবাহী ওয়াগন রেল চলাচল করে।

 

এদিকে দোহাজারী-কালিয়াইশ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি মাসে গড়ে ২৫-৩০টি ফার্নেস অয়েল ওয়াগন ট্রিপ পরিচালনা করে রেলওয়ে। সেতু বন্ধ রাখার খবরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে চিঠি দেয় রেলওয়েকে। চিঠি পাওয়ার পর ৯ মে থেকে ট্রিপ সংখ্যা দ্বিগুণ করায় ২১ মে পর্যন্ত ওয়াগনে জ্বালানি পরিবহন করা হয়েছে ২৭টি। যদিও মে মাসের শুরুতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুরোধে জ্বালানি তেল পরিবহন তিন দিন বন্ধ রাখা হয়।

 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কালুরঘাট নতুন সেতু নির্মাণ করতে পারেনি। এ কারণে পুরনো সেতুটি সংস্কারের মাধ্যমে সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বাড়তি ট্রিপের বিষয়ে চিঠি দেয়ার পর আমরা প্রতিদিন দুটি ট্রিপে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি পরিবহন করছি।’

 

দোহাজারী-কালিয়াইশ ১০০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর সংস্কার শুরু হলে আমাদের জ্বালানি পরিবহন সংকটে পড়বে। এজন্য আমরা প্রতিদিন এক ট্রিপের পরিবর্তে দুই ট্রিপে ৪০০ টন ফার্নেস অয়েল সংগ্রহ করছি। মজুদ শেষ হয়ে গেলে বিকল্প উপায়ে ফার্নেস অয়েল সংগ্রহের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।’

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট