চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ যাচ্ছে ঈদের পর

নতুন দিনের অপেক্ষা কুতুবদিয়ায়

মিজানুর রহমান 

৩ এপ্রিল, ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

শেষ হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর। প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ যাচ্ছে ‘দ্বীপকন্যা’ কুতুবদিয়ায়। সাবমেরিন কেবল ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরের তলদেশ দিয়ে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কক্সবাজারের এই উপজেলায়। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের প্রি-কমিশনিং কাজ শেষ হয়েছে। ঈদের আগেই কমিশনিং কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

দেশের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় ২ লাখ বাসিন্দার দ্বীপ- কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে এই জনপদের মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। মাছ ও লবণ ব্যবসার পাশাপাশি পর্যটন খাতেও গতি ফিরবে। কুতুবদিয়ায় ‘বিদ্যুতময়’ নতুন দিন শুরুর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হবে। পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের অধীন সব উপজেলা সরাসরি জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের আওতায় আসবে।

সমতল, পাহাড়ি এলাকার পাশাপাশি সাগরের বুক চিরে গড়ে উঠা দ্বীপাঞ্চলের মানুষকেও জাতীয় গ্রিডের আওতায় আনতে ২০২০ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় পিডিবি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের কুতুবদিয়া উপজেলা এবং নিঝুম দ্বীপসহ হাতিয়া উপজেলায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ নেওয়ার কাজ শুরু হয়। আগামী জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে সাগরের তলদেশ দিয়ে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হবে।

এরমধ্যে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ নেওয়া হবে মহেশখালীর মাতারবাড়ি সাবস্টেশন ব্যবহার করে। এই সাবস্টেশন থেকে পেকুয়ার মগনামা ঘাট ল্যান্ডিংস্টেশন হয়ে ডাবল সার্কিট সাবমেরিন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ যাবে কুতুবদিয়ার সাবস্টেশনে। সেখান থেকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। সংযোগ দিতে ইতোমধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া শুরু করেছে পিডিবি। তবে প্রথম পর্যায়ে সংযোগ পাবেন ৩০ হাজার গ্রাহক।  বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মু. আবুল হাসনাত পূর্বকোণকে জানান, প্রকল্পের অধীনে মগনামা ঘাট ও কুতুবদিয়ায় ২টি ল্যান্ডিংস্টেশন এবং কুতুবদিয়ায় ১টি সাবস্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ। মাতারবাড়ি থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার ৩৩ কেভি রিভার ক্রসিংসহ সঞ্চালন লাইন এবং মগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট সাবমেরিন লাইনও নির্মাণ শেষ। কুতুবদিয়ার অভ্যন্তরীণ সঞ্চালন লাইন এবং মাতারবাড়িতে সোর্সিং লাইনে অল্প কাজ বাকি আছে।

আবুল হাসনাত বলেন, কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে আবেদন জমা নিচ্ছি আমরা। জাতীয় গ্রিড থেকে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রি-কমিশনিং কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ঈদের আগেই কমিশনিং কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদের পর জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছাবে কুতুবদিয়ায়। ধাপে ধাপে কুতুবদিয়ার সব মানুষ পাবেন জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সুবিধা।

প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত কুতুবদিয়ার মানুষ। তারা বলছেন- জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পেলে কুতুবদিয়ায় ফিশ প্রসেসিং জোন, লবণ কারখানা, বরফ মিল স্থাপনের পথ সুগম হওয়ার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। কম খরচে মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন। উচ্ছ্বসিতদের একজন আনোয়ার হোসেন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, বিদ্যুতহীন ঘরে থাকার কষ্ট শহরের লোকজন হয়তো বুঝবেন না। এখন বিদ্যুৎ পেলে জীবনযাপন সহজ হবে। ব্যবসায় সুবিধা হবে।

কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছানোর মাধ্যমে পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের অধীন সব উপজেলা জাতীয় গ্রিডের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, বায়ু বিদ্যুৎ এবং জেনারেটরের মাধ্যমে কুতুবদিয়ার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও জাতীয় গ্রিডের বাইরে ছিল এই দ্বীপ উপজেলা। এখন সেখানেও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে। এটি দেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটি মাইলফলক। সরকারের বড় অর্জন।

 

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট