চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চিকিৎসাবঞ্চিত জাহাজ ভাঙা শ্রমিকরা

লক্ষ্যহীন বিএসবিএ হাসপাতাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, সীতাকুণ্ড

৩০ মে, ২০২২ | ৮:০২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স এসোসিয়েশন হাসপাতালটিতে (বিএসবিএ) আইসিইউ-এনআইসিইউ, বার্ণ ইউনিট, পঙ্গু বিভাগ সাপোর্ট না থাকায় জরুরি চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে অর্ধলক্ষ শ্রমিক। ফলে হাসপাতালটি স্থাপনের যে উদ্দেশ্য ছিলো তা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাটিয়ারী স্টেশান রোড এলাকায় ২০১৫ সালে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৬ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স এসোসিয়েশন (বিএসবিএ) হাসপাতাল। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি চালুর শুরু থেকে কয়েকজন ডাক্তারকে পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেয়া হলেও জাহাজ ভাঙা শ্রমিকদের সুচিকিৎসার কথা চিন্তা করে অল্প সময়েই সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে হাসপাতালটি নিজেরাই পরিচালনা শুরু করে বিএসবিএ। বর্তমানে বিএসবিএর একটি পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে।

সরেজমিনে এই হাসপাতাল পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বর্তমানে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে এই হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। সার্বক্ষনিক চিকিৎসার জন্য এখানে আছেন ৯ জন স্থায়ী চিকিৎসক, ৫২ জন ষ্টাফ ও নার্স। ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখন ২০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। এখানে আছে ২টি স্বয়ং সম্পূর্ণ অপারেশন থিয়েটারও। কিন্তু আইসিইউ-এনআইসিইউ, হাইফ্লো অক্সিজেন, বার্ণ ইউনিট, পঙ্গু ইউনিটসহ বিভিন্ন পরীক্ষা ও জরুরি চিকিৎসা না থাকায় গুরুতর আহত অবস্থায় আসা রোগিরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন।

পরিদর্শনকালে ভাটিয়ারী ইউনিয়নের মোস্তফা গেট এলাকার বাসিন্দা নাদিয়া সুলতানা ও অপর এক রোগী মেহেরুন্নেছা (১৭) জানান, তারা এখানে ডেঙ্গু, জ্বর, ডায়রিয়ার মতো রোগগুলোতে সুচিকিৎসা পেলেও সড়ক দুর্ঘটনা, জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে দুর্ঘটনা কবলিত জটিল রোগীরা এখানে তেমন কোন চিকিৎসা পান না। তাদের কথার সাথে সহমত প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিপ ইয়ার্ড মালিক বলেন, এই হাসপাতালটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যেই ছিলো জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় আহত রোগিরা হাতের কাছে জরুরি সেবা পাবে। আমাদের আর বাইরের কোন হাসপাতালে রোগী নিয়ে ছুটতে হবে না।

কিন্তু বাস্তবে তা কখনোই হয়নি। এখনো জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে দুর্ঘটনা হলে আমরা শ্রমিকদের চট্টগ্রামের মেডিকেল সেন্টার, পার্কভিউ, মেট্টো কিংবা চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। কারণ, জরুরি কোন সেবাই বিএসবিএ হাসপাতালে দেয়ার মতো ডাক্তার বা চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই! একই কথা বলেন, এক জাহাজ ভাঙা শ্রমিক মাঈন উদ্দিন।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে তার এক ভাই শিপইয়ার্ডের অক্সি এসিটিলিন শিখায় অগ্নিদ্বগ্ধ হবার পর তাকে বিএসবিএ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ডাক্তাররা তাকে দ্রুত চমেকে নিয়ে যেতে বলেন। কোন চিকিৎসায়ই দেয়া হয়নি। তাহলে হাসপাতাল কেন করা হলো-প্রশ্ন তার। এদিকে এসব বিষয়ে বিএসবিএ নিযুক্ত ম্যানেজার (এডমিন এন্ড এইচআর) মো. জামান উদ্দিন বলেন, বিএসবিএ হাসপাতালের মতো অবকাঠামো ও পরিচ্ছন্ন হাসপাতাল খুব কমই আছে। যে অপারেশন থিয়েটার আছে তাতে সব ধরনর অপারেশন করা সম্ভব। কিন্তু সব অপারেশন করার মতো চিকিৎসক এখানে আনা সম্ভব হচ্ছে না অত্যাধিক ব্যায়ের কারণে। তবুও এর মধ্যে আমরা কম খরচে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে থাকি।

হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. রোকন উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমি নিজেও সেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডিউটি করি। অন্যান্য ডাক্তার-নার্স স্টাফ সবাই আন্তরিকভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন এখানে। কিন্তু আইসিইউ, এনআইসিইউ, এইচডিইউসহ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলো হলে রোগিরা আরো বেশি সেবা পেতো।

এদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) এর সভাপতি মো. আবু তাহেরকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট