চট্টগ্রাম বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

কেন মেয়েদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলাম না?
সুন্দর ছবির মত এক দেশ

কেন মেয়েদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলাম না?

মাহবুব কবির মিলন

২৯ এপ্রিল, ২০২৫ | ১০:৪৩ অপরাহ্ণ

এই পথ দিয়ে প্রতিদিন বিকেলে হাঁটি আর ভাবি, এই যে সুন্দর ছবির মত এক দেশ। উন্নত জীবন, উন্নত পরিবেশ ও প্রতিবেশ। নিশ্চিত নিরাপত্তা, নিরাপদ সব খাবার। কিন্তু বাচ্চাকে বাবা মায়ের কোলছাড়া করে বিদেশ পাঠিয়ে কি ভুল করেছি!! হিসেব মেলাতে পারি না।

বাচ্চাদের ভাল জীবন বড়, নাকি সারাজীবন বাচ্চা এবং নাতিপুতিসহ পাশে থাকবে, বাবা মায়ের সেই চাওয়া বড়। মনটা খুব খারাপ হয়ে থাকে। হিসেব মেলাতে পারি না।

দুই মেয়ে বড় হয়েও মায়ের পাশ দখল নিয়ে যুদ্ধ করত, একটা পাশ খালি হয়ে গেল মনে হয় চিরতরে। ছোট মেয়ে মায়ের এক পাশে শুয়ে ঝিম মেরে থাকে। তাকে আর কারো সাথে যুদ্ধ করতে হয় না।

এখানে আসার পর থেকে একটা গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেতে হয়নি। আমার ক্রনিক আইবিএস। তাই মারাত্মক ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। জীবনে এক কাপ দুধ খেতে পারিনি। এবার এখানে প্রতিদিন এক বাটি করে দুধ খাচ্ছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে আমাদের দুধ কী! আর এদের দুধ কী! বুঝে আসে না।
ফুড সেইফটিতে যখন ছিলাম, তখন সমস্ত খাদ্য পণ্য পরীক্ষা করার পর, প্রতিবেলা খাবার টেবিলে বসে ঝিম মেরে থাকতাম। আমার সামনে আমার বাচ্চা, পরিবার প্রতিবেলা বিষ খাচ্ছে সব খাবারের সাথে। আমি এক অসহায় পিতা, কিছু করতে পারছি না।

তখুনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বাচ্চাকে রাখব না দেশে। তাহলে যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের সন্তানদের কী হবে!! সেজন্যই এখন পর্যন্ত প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, এই ভূমিকে বসবাসযোগ্য করে তুলতে, যাতে আল্লাহপাকের কাছে জবাবদিহি করতে না হয়।

শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ড. হাফিজুর রহমান ও তাঁর দল বাংলাদেশের মাটিতে থাকা হেভিমেটাল মানবদেহের কতটা ক্ষতি করতে পারে, সেটা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গত বছর।

গবেষণা চলাকালীন তিনি জানতেও পারেননি, সেটাই তার জীবনকে ঘিরে ফেলেছে। তাঁর ৪র্থ স্টেজ স্টোমাক ক্যান্সার ধরা পড়েছে।

আমরা সবচেয়ে বেশি খেয়ে থাকি ভাত মানে চাল আর আলু। এ দুটিতে কী পরিমাণ হেভিমেটাল আছে জানেন!!

আমার সাথে চ্যালেঞ্জ নেয়ার কেউ কি নেই এই দেশে? বিশ কোটি মানুষের কারোই কি সেই সামান্য সাহসটুকু নেই!!

যেখানে বাবার কবর জেয়ারত করতে গিয়ে মেয়েকে রেপ হতে হয়। অবশেষে লজ্জায় আত্মহত্যা করতে হয়। যেখানে এই বিপর্যস্ত মেয়েকে সামলে রাখার কেউ ছিল না।

সেখান থেকে যে দেশে রাত তিনটার সময়েও একাকী একটি মেয়ে নির্ভয়ে ফাঁকা রাস্তায় চলতে পারে। সেখানে বাচ্চা পাঠিয়ে কি ভুল করেছি!!

কেন আমাদের সোনার বাংলায় মেয়েদের জন্য এমন নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলাম না? কেন নিরাপদ খাবার দিতে পারছি না আমাদের বাচ্চাদের? কেন একটি দেশে এত হাসপাতাল আর ফার্মেসি? কেন একটা দেশের প্রায় সবাই মিথ্যা কথা বলে? মানুষের এত হক নষ্ট করে? দুর্নীতি আর লুটপাট করে?

 

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট