চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মেসিময় ফাইনালের অপেক্ষা

নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক

১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকাপের স্বপ্নের ফাইনালে আজ মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স মহারণ। টানা চার বছরের প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল সমর্থকদের। আর মাত্র কয়েকঘণ্টা পরে জানা যাবে বিশ্বফুটবলের শিরোপার মুকট পড়বে কোন দল। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি- স্পোর্টস।

 

লিওনের মেসি। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। পেশাদার ক্যারিয়ারের একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন। গড়েছেন নতুন রেকর্ড। ইতিহাস গড়ে সাতবার ব্যালন ডি অর পুরস্কার এবং ছয়বার ইউরোপীয় গোল্ডেন বুট জয় করেছেন। জিতেছেন অনেক শিরোপা। কিন্তু কিংবদন্তী এ ফুটবলারের একটাই অপূর্ণতা, অধরা বিশ্বকাপের শিরোপা। ক্যারিয়ারে অন্তিম লগ্নে সেই অপূর্ণতা পূরণের সুযোগ এসেছে তার সামনে। আর মাত্র একটি ম্যাচ জিতলেই মুঠোবন্দী হবে সেই স্বপ্ন। আর এর জন্য আজ প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন এমবাপে, জিরুদের ফ্রান্সকে হারাতেই হবে।

 

চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে এই দিদিয়ের দেশমের শিষ্যদের কাছে হেরেই শেষ ষোল থেকে ছিটকে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। চোখের জলে মাঠ ছেড়েছিলেন মেসি-ডি মারিয়ারা। এমবাপের গতি আর গ্রিজম্যানের বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবলের উত্তরই ছিল না জর্জ সাম্পাওলির কাছে। সেই হারের জ্বালা আজও তাজা আর্জেন্টাইনদের মনে। শেষ চারের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের পরই তাই বদলার আগুনে নিজেদের সেঁকে নিয়েছেন আলবিসেলেস্তেরা। শক্তির নিরিখে গতবারের তুলনায় এই ফ্রান্স দলে ভারসাম্য কিছুটা হলেও কম।

 

আক্রমণভাগে এমবাপে, গ্রিজম্যান, জিরুরা দুরন্ত ছন্দে থাকলেও মাঝমাঠে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারের অনুপস্থিতি কিছুটা হলেও চিন্তায় রাখবে কোচ দেশমকে। তার উপর, একের পর এক ফুটবলার ক্যামেল ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় বেশ চিন্তায় রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই তুলনায় এবারের আর্জেন্টিনা দল অনেক বেশি সংঘবদ্ধ। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই কাতারের বুকে ফুল ফোটাচ্ছেন মেসি। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন জুলিয়ান আলভারেজ, এনজো ফার্নান্দেজ, রদ্রিগো ডে পলরা।

 

চোট সারিয়ে ফাইনালে শুরু থেকে মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত এঞ্জেল ডি মারিয়া। রক্ষণে অভিজ্ঞ ওটামেন্ডির সঙ্গে ভরসা জোগাচ্ছেন মোলিনা, লিসান্দ্রো মার্টিনেজরা। আর গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ হয়ে উঠেছেন দুর্ভেদ্য। তবে প্রতিপক্ষে এমবাপের মতো ক্ষুরধার ফুটবলারের উপস্থিতি যে যেকোনও রক্ষণভাগের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপের শিরোপা লড়াইয়ে মাঠে নামবে দু’দল। ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ ট্রফি জেতে আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে ফাইনালে উঠলেও আর্জেন্টিনা শিরোপা জিততে পারেনি। অন্যদিকে, ফরাসীরা বিশ্বকাপ জিতেছে ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে। টানা দ্বিতীয় শিরোপা তারা মুঠোবন্দী করতে চায়। এর আগে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে টানা দুইবার বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের কাছে রাখার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল ব্রাজিল। এছাড়া দেশ্যমের সামনেও সুযোগ একই দলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের। ১৯৩০ সালে ইতালির কোচ ভিত্তোরিও পোজ্জো এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।

 

তবে সবকিছুর ছাপিয়ে আজ পুরো বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে মেসির দিকে। ফাইনাল জিততে হলে আর্জেন্টিনার প্রাণ ভোমরার দায়িত্ব পালন করতে হবে মেসিকেই। যদিও মেসিকে কড়া পাহাড়ায় রাখার পরিকল্পনা থাকবে ফ্রান্স। মেসি ছাড়াও আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় আছেন যারা ফাইনালের ভাগ্য গড়ে দিতে ভূমিকা রাখবেন। ইনজুরি থেকে ফিট হয়ে ডি মারিয়া ফেরায় অনেকটাই চাপমুক্ত কোচ স্কলানি। এছাড়া ডি পল, অ্যাকুইনা, মলিনা, হুলিয়ান আলভারেজরা জ্বলে উঠতে পারলে আকাশী নীল জার্সির দলটি শিরোপা জয়ের উৎসবে মেতে উঠতে পারবে আবারও।

 

অন্যদিকে, গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তিউনিসিয়ার কাছে পরাজয় ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে ফ্রান্স দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। গতিময় ফুটবল ফ্রান্সের দলের বড় শক্তি। এমবাপে, জিরুদ, গ্রিজম্যানরাই ফরাসীদের টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠিয়েছেন। সোনালী ট্রফিটি ধরে রাখতে কাতারের ফাইনালেও তাদের উজ্জ্বলতা ছড়াতে হবে। প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনার কোচ এমবাপে, গ্রিজম্যান, জিরুদদের আটকানোর কৌশল করবেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে বিশ্বকাপ জিততে হলে সব বাধা অতিক্রম করেই নিজেদের সেরাটা যারা খেলতে পারবে শেষ হাসি তাদেরই হবে। ফাইনালে বিজয়ী হবে তারাই।

 

ইতোমধ্যে পাঁচ গোল করে গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবিদার মেসি টুর্নামেন্ট সেরার দৌঁড়েও অনেকখানি এগিয়ে রয়েছে। সতীর্থদের বেশ কিছু বলের যোগান দিয়ে এ্যাসিস্টের দিক থেকে মেসি নিজেকে এবারের আসরে অনন্য করে তুলেছেন। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে আর্জেন্টিনার জয়ে দিয়েগো ম্যারাডোনা যেভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মেসির সামনেও সেই কৃতিত্ব অর্জনের শেষ সুযোগ রয়েছে।

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট