বড় কোনো মন্তব্য করার জন্য এটা হয়ত সঠিক সময় নয়! ৪৬ দিনের দীর্ঘ টুর্নামেন্টে অনেকটা পথই পাড়ি দিতে হবে জফরা আর্চারকে। তবে তাকে শেষ মুহূর্তে হলেও কেনো দলে টানা জরুরী ছিল, কেনো ‘এক্স ফ্যাক্টর’ বলা হচ্ছে, সেটি শুরুর ম্যাচেই বুঝিয়ে দিলেন ২৪ বছর বয়সী ডানহাতি ইংল্যান্ড পেসার। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে সাউথ আফ্রিকাকে ৩১২ রানের লক্ষ্য দিয়ে ইংল্যান্ড যে ১০৪ রানের উড়ন্ত জয় তুলে নিতে পারল, তাতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন আর্চার। দিনশেষে ৭ ওভার বল করে একে মেডেনে ২৭ রানে ৩ উইকেট দখলে। লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হিসেবে ডেভিড উইলিকে প্রস্তুত করেছিল ইংল্যান্ড। সেই উইলিকে হার মানতে হয়েছে আর্চার নামের আনকোরা এক বোলারের কাছে। যিনি আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে মাত্র মাত্র ২২ ওভার বল করে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন। ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত এই পেসার ৪৬টি ওয়ানডে খেলা উইলিকে দর্শক বানিয়ে জায়গা করে নেন স্বাগতিকদের বিশ্বকাপ স্বপ্নে। কোথায় অভিজ্ঞ উইলি আর কোথায় আর্চার নিজে! কেউ মুখে না বললেও অদৃশ্য এক চাপ তো ছিলই। সময় মতো সেই চাপ ছুঁড়েই ফেললেন পেস সেনসেশন। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দেখিয়ে দিলেন তিনি ইংলিশদের লম্বা দৌড়ের ঘোড়াই হতে চলেছেন। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে যে ৩ উইকেট নিলেন আর্চার, সেটি কেবল উইকেট দিয়ে বিচার করা যাবে না। অতিরিক্ত গতির ঝড় তোলা, অতিরিক্ত বাউন্স আদায় করে নেয়া, আমলাকে শুরুতেই আহত করে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া, প্রোটিয়াদের রানতাড়ায় ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়ার মতো সব কাজই করেছেন তিনি। কোটার তিন ওভার বল করার সুযোগ পাননি প্রতিপক্ষ দ্রুত অলআউট হয়ে যাওয়ায়। কিন্তু সাত ওভারেই দেখিয়ে দিয়েছেন আর্চার, কেনো তাকে দলে পেতে হৈচৈ করেছেন বেন স্টোকস, নাসের হুসেইন, অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফদের মতো বর্তমান-সাবেক ক্রিকেটাররা। আর্চার পরশু একের পর এক ভয়ঙ্কর বাউন্সারে কাঁপিয়ে দিয়েছেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের, বোলিংয়ে ছিল যুতসই সুইং। ছোট রানআপে গতি ছিল কখনও ৯০ মাইল, কখনও তার আশেপাশে। তোপদাগা সব বাউন্সার সইতে পারেননি সাউথ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা।
তেমনি এক বাউন্সারে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় হাশিম আমলাকে। নষ্ট হয় প্রোটিয়াদের পারফরম্যান্সের ধারা! সুইংয়ে প্রতিপক্ষকে কাঁপুনিতে রেখেছিলেন আর্চার। তারা টানা ছোবলে গুঁড়িয়ে যায় সাউথ আফ্রিকার মিডলঅর্ডার। নাকাল হয়ে একে একে ফেরেন অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস, এইডেন মার্করাম ও ফিফটি পাওয়া ফন ডার ডুসেন। মিডলঅর্ডারের সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে ওঠা হয়নি প্রোটিয়াদের। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচ সেরা হয়েছেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস, কিন্তু আসল কাজটা আর্চার আগেই সেরে রাখায় বাকিটা সহজ হয়ে গেছে ইংলিশদের জন্য!