চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

লোহাগাড়ার জনপদে বিলুপ্তপ্রায় শাপলা

এম.এম.আহমদ মনির হ লোহাগাড়া

১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২৯ পূর্বাহ্ণ

শাপলা ফুল আমাদের দেশের জাতীয় ফুল। এটি গ্রাম বাংলার মানুষের গৌরব ও অহংকার। অতীতে অত্র উপজেলার বিভিন্ন জনপদের পুকুরে, ডেবায় ও দিঘিতে শোভাবর্ধন করতো শাপলা ফুল। এই অপরূপ সৌন্দর্য অনেকেই উপভোগ করতেন। ভাবুক মনের কবি-সাহিত্যিকেরা এই ফুল নিয়ে কবিতা ও ছড়া লিখেছেন। আবার শিশু বয়সীরা শাপলা ফুল খুশি মনে খেত এবং শাপলার গোড়ায় কাদা মাটির ভেতর জন্মাতো শালুক। তাও শিশুরা আনন্দ সহকারে খেত। আবার দেখা যেত শাপলা গাছ অনেক পরিবারে তরকারি হিসেবেও রান্না হতো। পাতাগুলো বড় থালার মতো। কা-টি লিকলিকে লম্বা। কাদা মাটির সহিত সংযুক্ত পানির ওপরের অংশে মাথায় ফুটন্ত সুন্দর একটি ফুল। অকাতরে রূপ ও সৌন্দর্য বিলিয়ে কীট-পতঙ্গ ও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। এ শাপলা গাছ কাউকেও রোপণ করতে হয় না। প্রকৃতির খেয়াল-খুশি মতে জন্মে জলাশয়ে। ফুল যখন ফুটে তখন প্রকৃতির বর্ণিল শোভা নতুন একরূপ ধারণ করে এবং ওই নয়নাবিমোহী বর্ণিল শোভায় আকৃষ্ট হয়ে পাগল মনে ছুটে যায় শিশুরা। লাল-সাদা ও খয়েরি রঙের শাপলা ফুল দেখা যেত একদা গ্রামীণ জনপদের পুকুর, দিঘি, ডেবা ও জলাশয়ে। কিন্তু তা বর্তমানে নেই।

কোন কোন প্রবীণ লোকেরা জানান, শাপলা ফুল গ্রাম বাংলার জনপদের এক প্রাচীন স্মৃতি। এ স্মৃতি প্রাচীনকালে গ্রাম বাংলার জনপদের মানুষের মনের খোরাক ছিল। শাপলা ফুলের ছড়া গেয়ে শিশুরা ঘুরে ফিরে বেড়াত। রসিক বয়ষ্করা শাপলা গাছে ভূতের বাসা আছে বলে রূপকথার কাহিনী দিয়ে শিশুদেরকে ভয় দেখাত। এরপর ও শিশুরা দলবেঁধে পুকুরে গিয়ে সাঁতার কেটে কেটে শাপলা ফুল খুশিমনে তুলতো। আমিরাবাদ, পদুয়া, চুনতি, বড়হাতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার জলাশয়ে এ শাপলা ফুল ফুটতো বলে কোন কোন প্রবীণ লোক জানান।

গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য এ শাপলা ফুল জাতীয় ফুলের মর্যাদা লাভ করেছে। শাপলা ফুল বিলুপ্তির কারণ সম্পর্কে স্থানীয় পরিবেশবাদীদের জানান, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে মানুষের চাহিদা, জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে। সার্বিক উন্নয়নে দেশের অগ্রযাত্রা ও গতিশীল হয়। চাহিদা পূরণে উৎপাদন ও বৃদ্ধি হয়। চাহিদা-সরবরাহ ও উৎপাদন এ তিন বিষয়ের প্রতিযোগিতায় অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটে। যে কারণে প্রভাব পড়েছে মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্রেও। চাহিদানুসারে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য মানুষ মৎস্য চাষে ঝুঁকে পড়েন। এতে পুকুর, দিঘী, ডেবা, জলাশয় প্রভৃতি সংস্কার করে মৎস্য উৎপাদনে আগ্রহী হন। এ কারণে জলাশয় থেকে নিশ্চিহ্ন হয় শাপলা গাছসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ। এরপরেও এ প্রাচীন ঐতিহ্য আজও টিকে আছে আমিরাবাদ ইউনিয়নের বার আউলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পুকুরে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট