চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

টেকনাফে সুপারির বাম্পার ফলন

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম , টেকনাফ

১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২৯ পূর্বাহ্ণ

টেকনাফে সুপারির বা¤পার ফলন হয়েছে। সেইসাথে আগাম পেকেছে। সাধারণতঃ কার্তিক-অগ্রহায়ণ তথা নভেম্বরের দিকে গাছে সুপারি পাকার নিয়ম চলে আসলেও প্রাকৃতিক বিবর্তনে এবারে আগাম পেকেছে। গ্রাম্যপ্রবাদ চালু আছে ‘আশি^ন কাতি-গোলা বাতি’। তার মানে হচ্ছে আশ্বিন-কার্তিক মাসে গাছের ফল-ফলাদি পেকে থাকে। আর এখন চলছে ভাদ্র মাস। মৌসুমের শুরুতে বিনা খরচে এ ফসলে কৃষকরা বেশি লাভবান হওয়ায় সুপারি চাষের জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। তাছাড়া সকলের মুখে মুখে প্রবাদ চালু আছে- ‘টেকনাইফ্যা সুপারি-গালত দিলে মিশ্রি’।

জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে সুপারি বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আশানুরূপ ফলন এবং দামও বেশি হওয়ায় সুপারি বাগান মালিকদের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে।

অন্য চাষাবাদের মতো কোনরকম ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়ায় কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন বলে জানা গেছে। টেকনাফ উপজেলা সুপারি চাষের উপযোগী আবহাওয়া এবং মাটি হওয়ায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও উৎপাদিত সুপারি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরী সহযোগিতা পেলে গ্রামীণ কৃষকরা সুপারি চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলে আরো সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে সচেতন মহলের ধারণা। উন্নত জাতের সুপারি একবার চাষ করে সারাজীবন আয়ের মুখ দেখতে পান কৃষকরা। এতে পরিবারে প্রচুর টাকা আয়ের মাধ্যমে জীবন জীবিকায় অবদান রাখে।

সরেজমিন দেখা যায়, সুপারির বাগান মালিকগণ আগাম পাকা উৎপাদিত সুপারি টমটম, রিকশা, জিপ, ভ্যানগাড়ি যোগে বিক্রি করার জন্য বাজারে নিয়ে আসছেন। আবার পথিমধ্যে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা সুপারি কিনে বাজারে আনছেন। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীগণ এসে সুপারি কিনে কাঁদি থেকে ছিঁড়ে বস্তায় ভরে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন। টেকনাফ থানার সামনে এবং হোটেল দ্বীপপ্লাজার সামনে সাপ্তাহিক রবিবার ও বৃহস্পতিবার বসে সুপারি বাজার। টেকনাফ পৌরসভাসহ উপজেলার সব ইউনিয়নেই কম-বেশি সুপারি বাগান রয়েছে।
বিশেষতঃ টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালিয়াপাড়া, তুলাতলী, উত্তর লেঙ্গুরবিল, দক্ষিণ লেঙ্গুরবিল, জাহালিয়াপাড়া, মাঠপাড়া, দরগারছড়া, রাজারছড়া, পশ্চিম গোদারবিল, বড় হাবিবপাড়া, উত্তর লম্বরী, দক্ষিণ লম্বরী, মিঠাপানিরছড়া, বরইতলী, কেরুনতলী, সাবরাং ইউনিয়নের ম-লপাড়া, ডিগিল্যারবিল, সিকদারপাড়া, মু-াল ডেইল, নোয়াপাড়া, আচারবনিয়া, মগপাড়া, হারিয়াখালি, লাপারঘোনা, কচুবনিয়াপাড়া, ফতেহআলীপাড়া, কুরাবুইজ্জ্যাপাড়া, শাহপরীরদ্বীপ, হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং, উলুচামরী, রঙ্গিখালী, পানখালী, মোচনী, মরিচ্যাঘোনা, হোয়াইক্যংয়ের মরিচ্যাঘোনা, কম্বনিয়া পাড়া, খারাংখালী, নয়াবাজার, কাঞ্জরপাড়া, রইক্ষ্যং, দৈংগ্যাকাটা, লাতুরীখোলা, হরিখোলা ও বাহারছড়া ইউনিয়নের পুরো এলাকায় কৃষক সুপারি চাষ করে থাকেন।

উপজেলার ১টি পৌরসভা এবং ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুপারির বাগান রয়েছে সাবরাং, টেকনাফ সদর ও বাহারছড়া ইউনিয়নে। এখানকার কৃষি-অকৃষি পরিবারগুলো সহজে সুপারি চাষ করে প্রচুর টাকা আয় করছেন। সুপারি চাষীদের দেখাদেখিতে অন্য চাষে নিয়োজিত কৃষকগণও বর্তমানে এ চাষের দিকে মনোযোগী হচ্ছেন। কেননা এ গাছ একবার রোপণ করলে প্রতি মৌসুমে ফল পাওয়া যায়। টেকনাফের আবহাওয়া ও মাটি চাষাবাদের উপযোগী হওয়ায় সার বা বিষ কোন কিছু প্রয়োগ করতে হয় না বিধায় চাষীদের কোন খরচ নেই বললে চলে।
একেকটি গাছে কমপক্ষে ৪-৫ পন (৮০টি সুপারিতে ১ পন) সুপারি ধরে। বর্তমানে আগাম পাকা এক পন সুপারি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে সুপারি বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তা সত্ত্বেও উৎপাদন আশানুরূপ হবে বলে আশা করছি। আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। যেকোন চাষে কৃষকদের কারিগরি সহায়তার ও পরামর্শের জন্য আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়োজিত আছেন। চলতি মৌসুমে টেকনাফ উপজেলায় ১ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষাবাদ হয়েছে।
প্রতি হেক্টরে ২২ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক সচেতন সুপারি বাগান মালিক শুকনো মৌসুমে গাছে সার ও সেচ দিয়েছেন। এজন্য এবারে টেকনাফের সর্বত্রই সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট