চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সৌখিন আঁকিয়ের নান্দনিক সম্ভার ‘মানডালা’

প্রজ্ঞা পারমিতা

৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চারুকলায় পড়াশোনা না করেও যে দক্ষ আঁকিয়ে আর সুনিপুণ শিল্পী হওয়া যায় তার জলন্ত উদহারণ নাবিলা নুসরাত আর জাকিয়া মাহবুব রাফা। দুজনেই চবির সামুদ্রিক বিজ্ঞান এর মাস্টার্স এর শিক্ষার্থী। কিন্তু চিন্তা চেতনায় মননে ধ্যানে রীতিমতো একজন চারুশিল্পীকেও ছাড়িয়ে যায়। সমুদ্রবিজ্ঞানের মতো এমন একটি কঠিন বিষয়ে পড়শোনা করে তারা কেবল শখ আর সৃজনশীলতার চর্চায়, মনের তৃপ্তিতে বিভিন্ন নান্দনিক কাজ করে চলেছেন নিরবে নিভৃতে। কোন বাণিজ্যিক আকাঙ্খায় নয়, বলা যায় পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত করার তাগিদে। তাদের অনলাইন ভিত্তিক একটি পেজ রয়েছে নাম ‘মানডালা’। ২০১৮ সালে ২৭ মে এর যাত্রা শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে তারা বিভিন্ন হাতের কাজ অত্যন্ত সুনিপুণ আর যত্ন সহকারে করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। যেহেতু এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি তাই খুব বড় অর্ডার বা বেশি কাজ করতে পারছেন না সময়ের অভাবে। কিন্তু যা করছেন তা এক কথায় সত্যিই অনেক সুন্দর, নান্দনিক তো বটেই। একাডেমিক বিষয়ে কোন নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াই ‘মানডালা’ এগিয়ে চলছে ধীরপায়ে, অত্যন্ত সুচারু আর নিঁখুতভাবে, কোন তাড়াহুড়ো না করেই। কি নেই তাদের কাজে! এককথায় অনেক কিছু। জলরং আর তৈলচিত্রের ওয়াল পেইন্টিং, কাঠের উপর বিভিন্ন মেটিভের পেইন্টিং, কাঠ খোদাই করে নানান ডিজাইন করা ব্যতিক্রমী নেইম প্লেট, চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান যেমন চন্দনপুরা মসজিদ, শহীদ মিনার, চেরাগী মোড়, শহীদ জিয়া কমপ্লেক্স, কোর্ট বিল্ডিং, র‌্যাডিসন ব্লু নাবিলার রং তুেিলতে পায় অসাধারণ শিল্প মর্যাদা। অন্যদিকে রাফা সুতা আর উলের সমন্বয়ে করেছেন এমন কিছু কাজ যা ব্যাতিক্রমী। বিশেষ করে উল আর ক্রুশি কাটা দিয়ে তৈরি পর্দাগুলো রাফার নিপুণ হাতে অন্যরকম শিল্পময় হয়ে উঠেছে। সচরাচর দশজন শিল্পী থেকে তাদের কাজগুলোকে ভিন্নই বলা চলে। এ প্রসঙ্গে নাবিলা বলেন, ছোট বেলা থেকেই আঁকাঝোঁকার প্রতি প্রচ- ঝোঁক ছিল। তবে ফুলকিতে প্রাথমিক ক্লাসে পড়াকালীন সময়ে ছবি আঁকার প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হই। বিশেষ করে ফুলকির বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনী, বৈশাখী মেলা যখন হতো, তখন শিক্ষার্থীদের আঁকা বিভিন্ন কাজগুলো আমি দেখতাম মুগ্ধ চিত্তে। ভীষণ উপভোগ করতাম। মূলত: তখন থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয়। পরে দেশীয় পণ্যের অন্যতম শো রুম ‘আড়ং’ পণ্যগুলো দেখে ভাবতাম, যদি এরকম কিছু করা যায়। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার সময় অনেক চেষ্টা করেছি চারুকলায় পড়ার জন্য। তবে আব্বুর কারণে চারুকলায় পড়তে পারলাম না। এখন মনে হচ্ছে চারুকলায় পড়লে সৃজনশীল কাজগুলো আরো ভালো করে করতে পারতাম। নাবিলা তাঁর এসব কাজে পরিবারের সহযোগিতার কথা বারবার বলেন। পড়াশোনাকে বেশি প্রাধান্য দেয়ার কথা বলে নাবিলা জানান, “আমার একাডেমিক বিষয়টি একটু ডিফারেন্ট, তাই আমি যাতে আমার একাডেমিক দিকটা যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয়, তা বরাবরই খেয়াল রাখি। আর পড়াশোনার পাশপাশি ছবি আঁকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তিনি বলেন, যখন দেখি আমার কাজগুলো মানুষে পছন্দ করছে, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, চারপাশের মানুষের সাথে নতুন করে পরিচয় হচ্ছে, তখন খুবই ভালো লাগে। এই ভালো লাগার কোন তুলনা নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট