চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মোবাইল ফোন আসক্তি কেড়ে নিচ্ছে ঘুম-স¤পর্ক-কর্মঘণ্টা

মেহের নিগার

৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ

অফিসের কাজ, আড্ডা, পড়াশোনা, রাস্তা চেনা, খবরের কাগজ পড়া, সবকিছুর সহায় তালুবন্দি ফোনটি। প্রয়োজনের হাত ধরে নেশার রাস্তাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই রাতে ঘুমের সময়ও খোলা থাকে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেইল, টুুইটার, ইউটিউব-আরও কত কি। ঘুম কমে যায়। টান পড়ে ব্যক্তিগত স¤পর্কে। মানসিক চাপ বাড়ে। ঘুম ভাঙলে প্রথম হাত যায় মোবাইলে।

মোবাইলের এই নেশার কবলে পড়তে বয়স একেবারেই বাধা নয়। শিশু বা বাড়ির সবচেয়ে প্রৌঢ় সদস্য, সহজেই মোবাইলসর্বস্ব হয়ে উঠছেন। পড়াশোনা যেমন শিকেয় উঠছে, তেমনই আবার কমছে কাজের গতি। মোবাইলে বুঁদ দুনিয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মুখোমুখি আলাপ, আড্ডার অবসর। আবার এই অমোঘ নেশার দুনিয়ায় যাঁর টেকনোলজি ফোবিয়া আছে, তিনি এত কিছুর সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারছেন না বলে তার স্ট্রেস ও উদ্বেগ বাড়ছে। কাছের স¤পর্কে কখনও তার আঁচ এসে পড়ে। কখনও সেই চাপ এত বেশি হয়ে পড়ছে যে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ডি টক্সিংয়ের প্রয়োজন হয়। তবে ডি টক্সিং মাত্রই তা যে চিকিৎসকের ক্লিনিকে বা হাসপাতালে উপস্থিত থেকে করাতে হবে এমন নয়। মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, প্রথম প্রথম বাড়িতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শুরু করা যেতে পারে এই কাজ। খুব সহজ ক’টা উপায় অবলম্বন করলে বাড়িতেও ডি টক্সিংয়ের প্রাথমিক ধাপগুলো শুরু করতেই পারেন।

ডি টক্সিংয়ের উপায়
: টেকনোলজির জন্য যদি স্ট্রেস বাড়ে, অশান্তি শুরু হয়, বুঝতে হবে আপনি ব্যাপারটা সামলাতে পারছেন না। তখন কাজের ও ব্যক্তিগত সময়কে আলাদা করে নিন। বন্ধু ও সহকর্মীদের জানান যে একটা সময়ের পর আর আপনাকে ফোনে, মেইলে বা চ্যাটে ধরা যাবে না।
: সব যোগাযোগ ছিন্ন করতে অসুবিধা হলে আলাদা ফোন রাখুন, জরুরি দরকারে যেখানে যোগাযোগ করা যাবে।
: অবসর সময়ে মেইল বা টেক্সট পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব না হলে চেষ্টা করুন নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে চেক করতে।
: ই-বুকের পাশাপাশি বই পড়ার অভ্যাস বজায় রাখুন।
: গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সামনা-সামনি করার চেষ্টা করুন। কম সময়ে, ভুল বোঝাবুঝি এড়িয়ে সমাধানে পৌঁছতে পারবেন।
: ব্যক্তিগত স¤পর্কের ক্ষেত্রেও টেক্সটিং বা মেলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সামনে বসে কথা বলা। এতে স্ট্রেস অনেক কম থাকে। তাই খুব দরকার না পড়লে টেক্সট বা হোয়াটসঅ্যাপ অথবা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ছেড়ে ফোনে কথা বলুন বা সামনা-সামনি দেখা করুন।
: ডিজিটাল স্ট্রেসের সবচেয়ে বড় কারণ টেকনোলজি ফোবিয়া। সবাই শিখে নিল আর আপনি পিছিয়ে রইলেন এই দুঃখ থেকে চাপের জন্ম। টেকনোলজি ফোবিয়া কাটাতে চাইলে প্রথমে বুঝে নিন, যে ব্যাপারগুলো কঠিন কিছু নয়। চাইলেই শিখতে পারবেন। কিন্তু কতটুকু চাইবেন বা আদৌ চাইবেন কি না সেটা আপনার ব্যাপার। কাজের বা আনন্দের জন্য যতটুকু দরকার, ততটুকু শেখাই যথেষ্ট। ট্রেন্ডি হওয়ার লোভে এর চেয়ে বেশি কিছু করলে স্ট্রেসই বাড়বে কেবল।
বাঁচুন ভরপুর বাস্তব পৃথিবীতে
: পরিবার ও নিজের জন্য রাখা সময়ে যেন টান না পড়ে। একঘণ্টা, দু’ঘণ্টা, যতটুকু সময়ই রাখছেন তা যেন যথাসম্ভব ক¤িপউটার বা মোবাইল ফ্রি থাকে।
: নেটে পড়াশোনা করার পাশাপাশি বই পড়াও বজায় রাখুন।
: বিছানায় যাওয়ার অন্তত দু’এক ঘণ্টা আগে থেকে নেট, মোবাইল সব বন্ধ করে দিন। অনিদ্রার প্রকোপ কমবে।
: সপ্তাহে অন্তত এক বেলা টেকনোলজিকে যথাসম্ভব বর্জন করে যা করতে মন চায়, তাই করুন। কানে আইপডের তার না গুঁজে শুনুন পাখির ডাক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট