চট্টগ্রাম সোমবার, ১৭ জুন, ২০২৪

চান্দা-ধান্দা, নোট-ভোটের নেতাগিরি এবং সাংবাদিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা

আনিস আলমগীর

২৪ মে, ২০২৪ | ৬:০৫ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে সাংবাদিক হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নেই। সাধারণ সংবাদ কর্মী দূরের কথা সম্পাদকের ক্ষেত্রেও দেখি না। নয়তো এসএসসি পাস লোকজন সম্পাদক হয় কি করে!
তবে মাঝে মাঝে আওয়াজ ওঠে সাংবাদিককে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। কয়দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছি প্রেস কাউন্সিলের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে যে সাংবাদিক হতে হলে নূন্যতম যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে। আর এটা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক করছেন কিছু সাংবাদিক, যদিও সিংহভাগ সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পক্ষে মত দিচ্ছেন।
আমি মনে করি, বুদ্ধিভিত্তিক যে কোনো পেশার জন্য নূন্যতম একটা শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা উচিত। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হলে সাংবাদিকের নয় কেন! জানিনা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এই যোগ্যতার প্রশ্ন আসলে সাংবাদিকতা করার মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে বলে আওয়াজ ওঠে কেন!
আমার মতে সাংবাদিক হতে হলে একজন ব্যক্তির প্রধান যোগ্যতাই হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতা। সেই ক্ষেত্রে-
* সাধারণত, সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকা ভালো।
* তবে, অন্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েও সাংবাদিকতায় আসা যায়। সমস্যা দেখি না।
* কিছু প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্সও অফার করে।
তার থাকতে হবে কিছু ব্যক্তিগত গুণাবলীও: যেমন,
*যোগাযোগ দক্ষতা*:
সাংবাদিকদের স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয়ভাবে লিখতে এবং বলতে সক্ষম হতে হবে।
*গবেষণা দক্ষতা:*
তথ্য সংগ্রহ, যাচাই এবং বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
*সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা:*
তথ্যের সত্যতা ও নিরপেক্ষতা নির্ধারণ করতে সক্ষম হওয়া প্রয়োজন।
*সাহস:*
ঝুঁকি নিতে এবং কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে সক্ষম হওয়া প্রয়োজন।
*নৈতিকতা:*
ন্যায্যতা, সত্যতা এবং স্বচ্ছতার নীতি মেনে চলতে হবে।
*সময় ব্যবস্থাপনা:*
একাধিক কাজ একসাথে পরিচালনা করতে এবং সময়সীমা পূরণ করতে সক্ষম হওয়া প্রয়োজন।
*প্রযুক্তি জ্ঞান:*
বিভিন্ন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
এছাড়াও তার থাকতে হবে:
* ভালো ভাষা জ্ঞান, বিশেষ করে বাংলা ও ইংরেজি।
* সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা।
* দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা।
* মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা।
২০১৭ সালে এক বক্তৃতায় প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক প্রয়াত শাহ আলমগীরকে আমি প্রথম এই শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা বলতে শুনি। তিনি বলেন, ‘স্নাতক ডিগ্রি অর্থাৎ বিএ পাস ছাড়া নতুন কেউ সাংবাদিক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন না। তবে যারা ইতোমধ্যে সাংবাদিকতায় ১২ বছর অতিবাহিত করেছেন তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য হবে।
আমি জানি না প্রেস কাউন্সিল এবার কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং এই বিষয়ে সাংবাদিকরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে কী সমস্যা, যখন যে কেউ নিজেকে সাংবাদিকতা দাবি করে এই পেশাটিকে কলুষিত করছে, শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি করছে।
এতো চাঁদাবাজের মাঝখানে কে আসল কে নকল সাংবাদিক সেটা জানাটাও তো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে অনলাইন ডট কম, ইউটিউব চ্যানেল খুলে যে কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিতে পারে। তাহলে প্রকৃত সাংবাদিকদের পেশাগত দায়, সম্মান কোথায়!
একদিকে ব্যাঙের ছাতার মত সাংবাদিক এবং মিডিয়া গজাচ্ছে, অন্যদিকে তাদেরকে নিয়ে ইউনিয়নবাজী হচ্ছে। সাংবাদিকতা না করলেও, বা প্রধান পেশা অন্য কিছু হলেও দলীয় দালালীর সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোতে সদস্য হতে পারছে তারা। এদেরকে সদস্য করে, নোট দিয়ে তাদের ভোট কিনে আরেকদল ধান্দাবাজ সাংবাদিক নেতা সাজছে। সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতা নির্বাচনে খরচের দিকে তাকালে বুঝা যাবে কোন ধান্দায় এরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে নির্বাচন করে।
এইসব দলীয় সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো যখন তাদের দল ক্ষমতায় থাকে তাকে কাজে লাগিয়ে মালামাল কামায়। সাংবাদিকদের কোনো প্রয়োজনে, সাংবাদিকতার উন্নয়নে এদের কোনো ভূমিকা নেই। এরা বিভিন্ন গুষ্টিকে চান্দা দিলে ধান্দা পাইয়ে দেওয়ার কাজটি করে, পদ পদবী বিক্রি করে তদবির এবং সরকারি দালালির কাজে।

সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ফেসবুক থেকে নেয়া

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট