চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান-জমিন সৃষ্টি

১৫ মে, ২০২২ | ৫:১০ অপরাহ্ণ

গণনার সুবিধার জন্য আল্লাহপাক বছরকে ১২ মাসে ভাগ করেছেন। আরবির চলমান মাস ‘শাওয়াল’। এর অর্থ হল উঁচু করা বা উন্নতকরণ। শাওয়াল মাসের ইবাদত ৬টি রোজা রাখা। এই মাসের আমলের দ্বারা পুণ্য লাভ হয়। নেকির পাল্লা ভারী হয় এবং সাফল্য আসে। একমাস ফরজ রোজা পালন শেষে নফল রোজার প্রতি মনোনিবেশের মাস এটি। রমজানে গুনাহ বর্জনের যে অভ্যাস তৈরী হয়, তা বজায় থাকে এই মাসে। তাই রমজানের সাথে সম্পৃক্ত করে ৬টি রোজা রাখলে আল্লাহপাক সারাবছর রোজা রাখার সাওয়াব দিবেন।

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন, আল্লাহপাক শাওয়াল মাসের ছয়দিনে আসমান এবং জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যাক্তি এই মাসে রোজা রাখবে আল্লাহপাক তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দিবেন। সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যাক্তি রমজানের রোজা ঠিকভাবে রাখল এবং শাওয়ালে আরো ৬টি নফল রোজা রাখল আল্লাহপাক ওই ব্যাক্তিকে সারাবছর নফল রোজা রাখার সওয়াব দান করবেন।’

এ হাদিসটি মূলত পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতের সমর্থন করে। সেখানে আল্লাহপাক বলেন- ‘যে কেউ কোনো নেক আমল করবে, তাকে তার দশগুণ সওয়াব প্রদান করা হবে।’ এ আয়াতের আলোকে রমজান মাসের রোজার ১০ গুণ সাওয়াব দেয়া হলে তা হবে ৩০০ দিন আর শাওয়ালের ৬ রোজার সাওয়াব ১০ গুণ হলে তা হবে ৬০ দিন। মোট ৩৬০ দিনে আরবি বছর পূর্ণ হয়ে যায়। আর সে হিসেবেই সারা বছর সাওয়াব লাভ করে মুমিন। যার পরিপূর্ণতা আসে এ শাওয়াল মাসে।

কিন্তু কোন কারণে যাদের রমজানের ফরজ রোজা ছুটে গেছে আগে ওই রোজাগুলো রাখতে হবে। ছয় রোজার আগে কাযা রোজা শেষ করতে হবে। তারপর ছয় নফল রোজা একত্রে কিংবা বিরতি দিয়ে রাখা যাবে।

 

রমজান ছাড়াও মুসলিমদের জন্য বছরে ৫১টি রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। প্রতি আরবি মাসের চাঁদের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখে তিনটি করে ১১ মাসে ৩৩টি। জিলহজ্জ মাসের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯টি, শাওয়াল মাসে ৬টি, মহররম মাসে ২টি এবং শবেবরাতে ১টি রোজা রাখা মোস্তাহাব।

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। এই দু’দিন ফেরেশতারা আমাদের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করেন। তাই রোজা থাকা অবস্থায় যাতে আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ হয় নবীজি সেই চেষ্টা করতেন। এছাড়া তিনি রবিউল আউয়াল মাসের যেকোন সোমবারে তাঁর জন্মের কারণে শুকরিয়া আদায়ের জন্য রোজা রাখতেন।

 

রমজান মাসের কাজা রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ কিংবা সফরে থাকবে, সে (রমজানের পরে) অন্য দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)। তাই যাঁরা সফরের ক্লান্তি বা অসুস্থতার কারণে রমজানের রোজা পূর্ণ করতে পারেননি, তাঁরা সেগুলো রমজানের পর অন্য সময়ে আদায় করে নেবেন। কাজা রোজা রেখে ভেঙে ফেললে পুনরায় একটার পরিবর্তে একটা কাজা আদায় করতে হয়, কাফফারার প্রয়োজন হয় না।

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা মূলত সুন্নাত। যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এটি আমল করেছেন এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আরবি পরিভাষায় এগুলোকে নফল রোজা বলা হয়; কারণ এগুলো ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয়, নফল তথা অতিরিক্ত।

 

হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, শাওয়াল মাসে বিয়ে করা সুন্নাত। যেরূপ শুক্রবারে, জামে মসজিদে ও বড় মজলিশে আকদ-নিকাহ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ, মা আয়িশা (রা.)-এর বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল।

আল্লাহ পাক শাওয়াল মাসের ছয়দিনে আসমান, জমিন সৃষ্টি করেছেন। আসমান, জমিন সৃষ্টির বিষয়টি তিনি কুরআনে একাধিকবার বলেছেন। সূরা আল আরাফের ৫৪, সূরা ইউনুসের ৩, সূরা হুদের ৭, সূরা আল ফুরকানের ৫৯, সাজদাহ’র ৪, ক্বাফ’র ৩৮ এবং হাদিদের ৪ নম্বর; এই সাতটি স্থানে ছয়দিনে পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

 

‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের ওপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পেছনে আসে। তিনি স্বীয় আদেশের অনুগামী সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন। শুনে রেখো, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ বরকতময়, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’ (সূরা আরাফ-৫৪)

‘তিনিই আসমান ও জমিন ছয়দিনে তৈরি করেছেন, তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে। তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যে, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত উঠানো হবে, তখন কাফেররা অবশ্য বলে, এটা তো স্পষ্ট জাদু।’ (সূরা হুদ-৭)

‘তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়। তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত, তাকে জিজ্ঞেস করো।’ (সূরা ফুরকান-৫৯)

নবীজি (সা.) উম্মতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘রোজা রাখ, সুস্থ থাক।’ আল্লাহ আমাদের নবীজির কথামতো রোজা রাখা এবং সুস্থ থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ব্যুরো চিফ, বাংলাভিশন চট্টগ্রাম

 

পূর্বকোণ/এস/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট