চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

‘ঈদ সেলামির’ হিসাব–নিকাশ  

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৬ মে, ২০২২ | ৩:৪৫ অপরাহ্ণ

২০২০ সাল। বছরটি নাজিয়াদের পরিবারের জন্য ছিল বিষণ্নতার বছর। এদিকে করোনা অতিমারির ভয়াবহতা, অন্যদিকে নাজিয়ার সদ্যোজাত ভাই জীবন-মৃত্যু সন্ধিক্ষণে। তার মা-বাবা ও স্বজনরা ভাইকে নিয়ে আছে যুদ্ধের ময়দানে। হাসপাতাল হয়ে পড়ে তাদের পরিবারের দ্বিতীয় আবাস। নাজিয়া তখন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেই করুণ দিনগুলো আবছা আবছা মনে থাকার কথা। সেদিনের ছোট্ট ভাইটি এখন নাজিয়াকে গালভরে আ-পু বলে ডাকে। অনেক সময় ‘নাইয়া’ (নাজিয়া) বলেও ডাকে। সেই ডাক শোনে অমানিশার দিনগুলো এখন ভুলে যায়। আরেকটি কথা ভুলে গেছে নাজিয়া। সেই বছরের ঈদের আনন্দ- বিষাদের কথা। তাও দু’ বছর আগেরকার কথা। চলছে লকডাউন। যানবাহন, দোকানপাট, অফিস-কাছারি বন্ধ। কঠোর বিধিনিষেধ। ঘর থেকে অকাজে বেরোনো মানা। তখনই হাজির হয় ঈদুল ফিতর। মার্কেট বন্ধ। আর ভাইকে নিয়ে কঠিন সময় পার করছেন মা-বাবা। এ ঈদে নতুন জামা কাপড় পরা হবে না। মা- বাবার মন তো মানে না। কেনা হল নতুন জামা কাপড়। ঈদের দিন। বিধিনিষেধ মেনে আদায় করা হল ঈদের নামাজ। মোলাকাত, কোলাকুলি নিষিদ্ধ। নতুন জামা কাপড় পরে রেব হল জিয়াদ, নাজিয়া, নাজিফারা। অবুঝ মনগুলো বের হয় বাড়ির বড়দের কদমবুসি করার জন্য। ঈদ সেলামির আশা নিয়ে। একঘর, দু’ ঘর করে তিন ঘরে যায়। কেউ ঘরে ঢুকায় না। তাড়িয়ে দেয়, সহপাঠী শিশুরাও কাছে আসে না। বড়োরাও দূরে ঠেলে দেয়। আপনজনগুলোকে কত পর হয়ে গেল। ঈদের দিনে এ শিশুগুলো ঠেলে হল দূরে, আপনজনের ভালবাসার পরশ থেকে। তারা যেন সমাজবিচ্ছিন্ন, একঘরে। ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দপূর্ণতার ঈদ কচিহৃদয়ে হোঁচট খেল। নাজিয়ার ভাইকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে তাদেন মা- বাবা। দিনরাত পরিশ্রমের পর গায়ে জ্বর জ্বরভাব। কোভিড সংক্রমণের ভয়ে একলা হয়ে যায়। ঘর থেকে বের হযনি। রটে যায় নাজিয়ার বাবার করোনা হয়েছে। পাপ হয়েছে। তার জন্য সন্তানদের ঈদেরদিনও ঘরে ঢুকতে দেয়নি কাছের মানুষগুলো। অথচ তার পিতার সেদিন করোনা আক্রান্ত ছিল না। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তার করোনা হয়েছে। নাজিয়া ও জিয়াদ এখন যষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। এবার ঈদে রাজ্যের আনন্দ তাদের মনে। ইচ্ছে মতো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ-বাড়ি ও-বাড়ি ঘুরে টইটই করছে ভাইবোন ও পড়শিদের নিয়ে।দলবেঁধে আনন্দ- উচ্ছ্বাসে টইটম্বুর তারা। সেমাই, ফিরনি, পায়েস, নুডলস, হালিম, বিরানি কত খাবারের স্বাদ নিচ্ছে শিশু কিশোরের দলগুলোর। আর কদমবুসি ও সেলামি নিতে ভুল করছে না তারা। ঈদ সেলামির বকশিস চেয়ে নিতেও ভুল করছে না। তিন দিন ধরে চলছে রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। রৌদ্রেরঝাঁজ মিষ্টময় করে দিচ্ছে বৃষ্টিসিক্ত হয়ে। গ্রামের অনিন্দ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে শিরশির বাতাসে ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে ডানাকাটা পরিগুলো। বাঁধনহারা পাখির মতো। পুরোদিন পুরোদস্তুর ঈদ ভ্রমণে কাটাচ্ছে শিশু- কিশোরের দল। দিনশেষে খানাপিনার হিসাব নিকাশ চুকিয়ে বসে ঈদ সেলামির হিসাব নিয়ে। নগদ ও বাকি দুই ধরনের হিসাব কষা হয়। দাদা- দাদী, চাচা- চাচী, মামা- মামী, খালা-খালু কে কত ঈদ বকশিস দিয়েছেন তার পুনঙ্কানুপুঙ্ক হিসাব করা হয়। বাকির হিসাবও মনে ঠুকে রাখা হয়। জিয়াদ তার বাড় আম্মু আক্ষেপ করে বলল, ‘সবার আগে বড় বাপ্পাকে সালাম করেছি। এখন বকশিস দেয়নি।’ নাজিয়াও কয়েকবার বাবাকে বকশিস না দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ঈদের তিন দিন পর চুকিয়ে দেওয়া হয় ঈদ সেলামির হিসাব। ঈদ সেলামির বকশিস না দিলে চেযে নেয়। তবে ছোটরাও বকশিস দেয় ছোটদের, ৫-১০ টাকা। আবার ছোটদের পাওয়া সেলামি তছরুফও করছে ছোটরা। বকশিস থেকে থেকে খরচাপাতি ও চলছে। আইসক্রিম, চকলেট, চিপস খাওয়া চলছে সমানতালে। একে আবার অন্যকে উপহারসামগ্রীও দিচ্ছে। ঈদের তিন পর চলছে কে কত টাকা বকশিস পেযেছে তার হিসাব – নিকাশ। একেকজন খরচাপাতি শেষে হাজার দেড় হাজার বা দুই হাজার টাকা করে বকশিস পেয়েছে। টাকা গুণাগুণিতে মহাখুশি তারা।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট