চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘পূর্বকোণ অনলাইন’ চট্টগ্রামে ডিজিটাল জার্নালিজমে নতুনত্বের সংযুক্তি

ওয়াহিদ জামান

৫ মে, ২০২২ | ১০:২৮ অপরাহ্ণ

সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটি তার প্রাক-শিল্প বিপ্লবের শুরু থেকে বর্তমানে নাগরিক সাংবাদিকতা এবং নিউ মিডিয়ার আবির্ভাব -পরিবর্তনের পুনরাবৃত্তিতে বিকশিত হয়েছে। সময়ের সাথে সাংবাদিকতার এমন বিকাশ অবশ্যই আশা জাগানিয়া একটি বিষয়। দৈনিক পূর্বকোণ অনলাইন বিভাগ তিন বছর অতিক্রম করেছে। অনলাইন বিভাগের সংযুক্তির কারণে এই পত্রিকাটির প্রিন্ট ভার্সনের জনপ্রিয়তা, খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে অসংখ্য অপেশাদার সাংবাদিক, ভূঁইফোঁড় পোর্টালের বিপরীতে পূর্বকোণ অনলাইন, একজন সাংবাদিক হিসেবে আমাকে আশাবাদী করেছে। প্রিন্ট ভার্সনের নিয়মিত পাঠক ছিলাম অনেক আগে থেকেই। তারপরও ডিজিটাল ভার্সনের সংযুক্তিকে আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবি সাংবাদিকতার জগতে সাম্প্রতিক সময়ের কিছু পরিবর্তন বাস্তবতার কারণে। বলতেই হবে চট্টগ্রামে পাঠকপ্রিয় গণমাধ্যম হিসেবে দৈনিক পূর্বকোণই ডিজিটাল জার্নালিজমে প্রবেশ করেছে সবার আগে। নগরীতে কিছু পেশাদার অনলাইন পোর্টাল দাঁড়িয়েছে এটা যেমন আমাকে আশান্বিত করেছে আমার কাছে তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ডিজিটাল সাংবাদিকতার জগতে দৈনিক পূর্বকোণের যাত্রা।

নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, একবিংশ শতাব্দীর সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা শিক্ষার্থীদের নতুন প্ল্যাটফর্ম হবে ডিজিটাল জার্নালিজম। প্রিন্টিং প্রেস, সংবাদপত্র , টেলিভিশন এবং সরাসরি সংযোগ, সংবাদ পরিবেশন সবখানেই প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এসেছে। গণমাধ্যমের এই বিবর্তন আগে যে সমস্ত গণমাধ্যমে পরিবর্তন এনেছিল – তার মতোই স্বাভাবিক। স্বীকার করে নিতে হবে ইন্টারনেট কেবল সাংবাদিকতার পদ্ধতি, সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য পরিবর্তন করেনি, বরং সংবাদ মাধ্যম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাও পরিবর্তন করেছে। কোন ঘটনার সংবাদ দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেবার পদ্ধতি এবং ভূদৃশ্যকে অবিশ্বাস্যভাবে পরিবর্তন করেছে আধুনিক ডিজিটাল সাংবাদিকতা। নিশ্চিতভাবে বলা যায় দৈনিক পূর্বকোণের অনলাইন ইউনিট, প্রিন্ট ভার্সনের মতো বড় আড়ম্বরে শুরু হয় নি। অনলাইন ভার্সনের সফলতা হিসেব করার সময়ও এখনো আসেনি। প্রযুক্তিগত বিবর্তনের পথে আমাদের (সাংবাদিকদের) হাঁটতে শিখিয়েছে -এটুকুই যথেষ্ট।

দৈনিক পূর্বকোণ অনলাইন ভার্সনের কর্ণধার হিসেবে অভিজ্ঞ সাংবাদিক সাইফুল আলমের দায়িত্ব নেয়া আমাদের প্রত্যাশা বাড়িয়েছে বহুগুণ। বছরখানেক আগে দৈনিক পূর্বকোণের স্টুডিও দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। তখনও ডিজিটাল জার্নালিজমে এই স্টুডিও সংযুক্ত হয়নি। পুরোপুরি কাজ শেষ হয় নি। তবে চট্টগ্রামের কোন আঞ্চলিক পত্রিকা সাংবাদিকতার পরিসরকে বিস্তৃত করার জন্য ডিজিটাল স্টুডিও স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে – এটা এই অঞ্চলের সাংবাদিকতার জগতকে অনেকদূর এগিয়ে নেবে। এই ধারণা, প্রত্যাশা আমার তৈরি হয়েছে । এর পেছনে একটি কারণ রয়েছে। কারনটি হলো সাংবাদিকতায় আমার হাতেখড়ি ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায়। ২০০৬-০৭ সালে লন্ডনে বিবিসি একাডেমিতে কিছু প্রশিক্ষণ কোর্স আমাকে করতে হয়েছে, পেশার প্রয়োজনে। তখন থেকেই প্রযুক্তিগত সাংবাদিকতায় আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি এমন হতাশা আমাকে তাড়া করেছে। এছাড়া ব্রডকাস্টের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত জ্ঞানে এ অঞ্চলের গণমাধ্যমগুলি পুরোপুরিভাবেই ঢাকা নির্ভর। যেহেতু স্থানীয় কোন ব্রডকাস্টার চট্টগ্রামে নেই, পিছিয়ে পড়া এই আমাদের এগিয়ে নেবার দায়িত্ব দৈনিক পত্রিকার। এমন দায়িত্ব আঞ্চলিকে সেরা গণমাধ্যম হিসেবে দৈনিক পূর্বকোণই কাঁধে নিয়েছে, সেটা অকপটে স্বীকার করে নিতে হবে। সারাদেশের ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, খবরের জগতে ব্যবহারকারীদের সহজ অ্যাক্সেস একসাথে সাংবাদিক এবং সংবাদ সম্পর্কে সমাজের ঐতিহ্যগত ধারণায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে ।

সাংবাদিকতায় সবচেয়ে বড় দুটি পরিবর্তন সাংবাদিক এবং সংবাদ সংস্থাকে ঘিরে প্রচলিত ধারণার কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত করেছে। প্রথমত, ব্লগার এবং ব্যবহারকারী-ভিত্তিক সাংবাদিকতার উত্থান। দেশের অনেক পেশাদার সাংবাদিকও এখন নিজের ব্লগে কনটেন্ট তৈরি করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত হয়েছে দেশজুড়ে অসংখ্য মানহীন অনলাইন পোর্টালের সৃস্টি। আইপি টিভির অপ-সাংবাদিকতা -যেটা সাধারণ পাঠক দর্শকদের কাছে সাংবাদিকতার ভুল বার্তা দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায় নতুন এবং পুরানো প্রিন্ট ইলেকট্রনিকস মিডিয়া বিষয়টি ভালো ভাবে নিতে না পারলেও, দর্শক -পাঠকদের কাছে এদের কিছু কিছু অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এমন পরিবর্তন একজন সাংবাদিকের কাজের সংজ্ঞায়, কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন করেছে।

দ্বিতীয়ত,বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটে গুগল নিউজ বা দ্য হাফিংটন পোস্টের মতো সংযুক্ত সাংবাদিকতার প্রকৃতি যেমন পরিবর্তন করেছে, তেমনিভাবে সারাবিশ্বে অসংখ্য কনটেন্ট সংগ্রহকারীদের জন্ম দিয়েছে। ফলে আর সংবাদ সরবরাহের জন্য পৃথক সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করছেন না এক শ্রেণির দর্শক। এমন বিপত্তি কোন একটি এলাকায় তথ্য সংগ্রহ ও সংগ্রহ করায় গণমাধ্যমের ক্ষমতার পরিবর্তন, সেই সংবাদ পরিবেশনে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়েই কাটিয়ে উঠা সম্ভব। তাই সংবাদ সংগ্রহে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ডিজিটাল জার্নালিজমে সাংবাদিকদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অপেশাদার সাংবাদিকদের কুকীর্তি রুখে দিতে বর্তমান সময়ের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত হতে হবে। নিজেদের দক্ষতার উৎকর্ষ সাধনের কোনও বিকল্প নেই। কারণ সাংবাদিকদের কর্মযজ্ঞ কার্যকরভাবে সম্পাদন করে গণমানুষের মুখপাত্র হতে হলে ডিজিটাল জার্নালিজমের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। যদিও আশংকা করা হচ্ছে নিকট ভবিষ্যতে সাংবাদিকরা একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তির বিকাশ, নতুন প্রযুক্তির সংযুক্তি, মানবিকতা বোঝার সাথে সাথে সাংবাদিকদের জন্য আকর্ষণীয় গল্প বলার সুযোগ সবসময়ই থাকবে। সামাজিক বাস্তবতায় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের যে নামেই ডাকি না কেন, এটা অবশ্যই সাংবাদিকতার সংজ্ঞা।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

 

পূর্বকোণ/রাজীব/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট