ইসলাম সর্বোত্তম ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এখানে যেমনি বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই তেমনি গভীর আধ্যাত্মিক সাধনা ছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভেরও সুযোগ নেই। বান্দা তার স্রষ্টার সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য ই‘তিকাফ সর্বোত্তম পদ্ধতি।
ই‘তিকাফ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা। সাধারণত মাহে রমজানের শেষ দশ দিন তথা নাজাত দশকে মুমিন বান্দা সংসারের দৈনন্দিন কাজকর্ম ত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মসজিদে নিয়ত সহকারে অবস্থান করাকে ই‘তিকাফ বলে। ই‘তিকাফ বিশ দিন কিংবা একমাসব্যাপীও হতে পারে। নিয়ত সহকারে তিনদিন কিংবা একদিন মসজিদে অবস্থান করলেও ই‘তিকাফ হিসেবে ধর্তব্য হবে।
আল কুরআনে ই‘তিকাফ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করো না। এগুলো আল্লাহ পাকের সীমারেখা। সুতরাং এর ধারে কাছেও যেয়ো না’- সুরা আল বাকারা- ১৮৭। অন্যত্র এসেছে, ‘আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের প্রতি আদেশ দিলাম যে তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই’তিকাফকারী এবং রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।’ (সুরা আল-বাকারা-১২৫)।
উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়িশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বরাবরই ই‘তিকাফ করেছেন। তার ওফাতের পর তার স্ত্রীগণ ই‘তিকাফ করতেন।’
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা ও হাদীসে রাসুল দ্বারা বুঝা যায় যে ই‘তিকাফ একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। মহল্লা বা সমাজের মসজিদে যদি প্রতিনিধিত্বমূলকভাবে কয়েকজন ব্যক্তি ই‘তিকাফ পালন করে থাকে তাহলে সবার পক্ষ হতে এ সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। মহিলারাও নিজেদের ঘরে নির্জন কক্ষে ই‘তিকাফ পালন করতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ধ্যান-জ্ঞান,ইবাদত-বন্দেগী ও তাসবীহ-তাহলীলে যেন কোন ধরনের বিঘ্ন না ঘটে। ই‘তিকাফ অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। এতে অস্থির আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। সাধনায় সিদ্ধি লাভ হয়। সংসার জীবনের শত সংকট ও সমস্যার মাঝে একাগ্রচিত্তে পরমাত্মা প্রভুর দরবারে আত্মবিলীন হতে পারলে যে সুখ অনুভূত হয়, তা-ই ই‘তিকাফের মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করা যায়।
ই‘তিকাফ যেমন যন্ত্রণাদায়ক দুনিয়াবি জীবন থেকে মুক্তির সাধনা তেমনি পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত এ জগত সংসারের সমস্ত দুঃখ-তাপ ও কষ্ট-ক্লান্তি ভুলে থাকার মানসিক শক্তি অর্জনের সবক। আত্মবিশ্বাস ও আত্মোপলদ্ধি জাগ্রত করতে চাইলে ই‘তিকাফের বিকল্প নেই।
ই‘তিকাফের দিনগুলো রমজানের নাজাত দশকের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং এদিনসমূহে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ-অনুভূতি উজাড় করে আল্লাহ তা‘আলার শাহী দরবারে ধর্ণা দিতে হবে। মাঝরাতে আরামের ঘুম পরিহার করে দু‘আ-দরুদ পাঠ করত অকুন্ঠচিত্তে সিজদাবনত হয়ে অঝর ধারায় কান্নাকাটি করে নাজাত লাভ করতে হবে।
পূর্বকোণ/ইব