চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব ৭৫ শতাংশ তরুণের মানসিক স্বাস্থ্যে : বিওয়াইএলসি

অনলাইন ডেস্ক

২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:০৪ অপরাহ্ণ

দেশের প্রায় ৭৫ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব ফেলছে। এমনকি গত ২ থেকে ৩ মাস ধরে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় ৮৩ দশমকি ৫ শতাংশ তরুণ মনে করেন, তাদের জন্য সামাজিক ও মানসিক কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন। বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালী মেডোনা টাওয়ারে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমসাময়িক বাংলাদেশে যুব সমাজের অবস্থান, ভাবনা ও প্রত্যাশা প্রসঙ্গে ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে’ শীর্ষক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন— মনিটরিং অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন রিসার্চ ম্যানেজার আবুল খায়ের সজীব।

১৫৭৫ জন তরুণের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে (সরাসরি) পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন ৭৫.১ শতাংশ তরুণ। এছাড়াও ৪৩.৮ শতাংশ মনে করেন সামাজিক প্রত্যাশা ও পারিবারিক দায়িত্ব তাদের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে। এমনকি ব্যক্তিগত জীবন ও কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতার প্রভাব ফেলছে ৪৩.৬ শতাংশের এবং বর্তমান সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন আরও ৩৭.৯ শতাংশ তরুণ।

তবে অনলাইন প্লাটফর্মে পরিচালিত জরিপের ফলাফলে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। ১৬৬৩ জন তরুণের মধ্যে অনলাইনে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন ৬৪.৮ শতাংশ তরুণ, বর্তমান সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণ প্রভাব ফেলছে ৫৪.৭ শতাংশের মধ্যে, চাকরিতে নিরাপত্তাহীনতা প্রভাব ফেলছে ৫৩.৬ শতাংশ তরুণের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে।

জরিপ ফলাফলে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে তরুণরা। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫৫.১ শতাংশ তরুণ সরাসরি জরিপে ও ৭৩.১ শতাংশ তরুণ অনলাইন জরিপে এমনটাই মত দিয়েছে। এ তথ্যই বলে দেয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তরুণেরা এখন আগের চেয়ে আরও বেশি সচেতন। এছাড়াও জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হবার মানসিকতা দিন দিন বাড়ছে বলে জরিপে উঠে এসেছে। বর্তমানে ৫২.৫ শতাংশ তরুণ সরাসরি ও ৫১.৫ শতাংশ তরুণ অনলাইন জরিপে ভবিষ্যৎ পেশা হিসেবে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছে।

এদিকে দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন তরুণরা। সরাসরি ও অনলাইন জরিপে যথাক্রমে ৭১ শতাংশ ও ৮৬.৪ শতাংশ তরুণ মনে করেন ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার অবাধ পরিবেশ বজায় রাখার অন্তরায়। এছাড়া সরাসরি জরিপে ৭৭.৪ শতাংশ তরুণ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চাকরীর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদান করে মনে করলেও অনলাইন জরিপের ক্ষেত্রে ৭৯.৩ শতাংশ তরুণ তা মনে করে না বলেও জরিপের ফলাফলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির মনিটরিং অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন রিসার্চ ম্যানেজার আবুল খায়ের সজীব জানান, সমগ্র বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ১৫৭৫ জন তরুণ মাঠ পর্যায়ে এবং এছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমে আরও ১৬৬৩ জন তরুণ এই জরিপে অংশ নেয়। দেশজুড়ে অক্টোবর ও নভেম্বর মাস এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে তরুণদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সুশাসন, তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিপ্রয়াণ বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। এ জরিপের ফলাফলে তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ উভয়ই উঠে এসেছে।

তিনি আরও জানান, বিওয়াইএলসি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বিশেষত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এই জরিপ পরিচালনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে- বিওয়াইএলসি। বিগত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে যে পরিবর্তিত পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে তাতে তরুণরা আগামীর বাংলাদেশ গঠনে কোনো কোনো বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তা তুলে ধরাই এ বছরের জরিপের মূল উদ্দেশ্য।

জরিপ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ বলেন, যুব সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামীর রূপরেখা তৈরির জন্য ইয়ুথ ম্যাটারস সার্ভে একটি প্রমাণভিত্তিক দলিল। এই সমীক্ষণটি আমাদের দেখিয়েছে যে দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যুব সমাজ সবার আগে সংস্কার চায়। তারা চায় দেশে দুর্নীতি বন্ধ হোক, স্বজনপ্রীতি দূর হোক, নাগরিকদের- বিশেষ করে নারীদের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত থাকুক।

তিনি বলেন, দেশের তরুণরা এখন নির্ভয়ে কথা বলার পরিবেশ চায়। তারা দেশের উন্নয়ন ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ চায়। তারা বলেছে যে এইসব সংস্কার কার্যকর করার জন্য সরকারকে সময় দিতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সরকারের সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে তারা কাজ করতে চায়। কিছু সংখ্যক নতুন রাজনৈতিক দল আসুক তা চাইলেও বেশিরভাগ তরুণ তরুণী চায় যে পুরানো দলগুলোর সংস্কার হোক, রাজনীতিতে ভাল মানুষ প্রার্থী হিসেবে আসুক।

 

এক্ষেত্রে এই তরুণ সমাজের যাবতীয় আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়ন করা প্রত্যেকের দায়িত্ব বলেও মনে করেন তাহসিনাহ আহমেদ।

এ সময় বিওয়াইএলসি’র স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের ডেপুটি ম্যানেজার মুনিরা সুলতানা বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে পারছে না। এ সমস্যার সমাধানে বিওয়াইএলসি তাদের প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে সমস্যা সমাধান, সংঘাত নিরসন, এবং জনসমক্ষে কথা বলার মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলো অন্তর্ভুক্ত করছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শ্রম বাজারের চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির অফিস অব প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট’র ডেপুটি ম্যানেজার আহসান হাবিব বলেন, শান্তি, ন্যায়বিচার এবং সুশাসন প্রচারে যুব সমাজের ভূমিকা নিয়ে আমরা ক্রমাগত কাজ করে আসছি। যদি সরকার একটি সক্ষম পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়, তবে যুব সমাজ কীভাবে নেতৃত্বের মাধ্যমে জবাবদিহিতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করবে?

তিনি আরও বেলেন, ইয়ুথ ম্যাটারস সার্ভে দেখিয়েছে যে, যুব সমাজ রাজনৈতিক দলে সংস্কার দাবি করছে, প্রচলিত পদ্ধতিগুলো প্রত্যাখ্যান করছে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থবহ পরিবর্তন চাইছে। তারা শুধু পরিবর্তন চায় না-তারা পরিবর্তনের অংশ হতে চায়, এবং বিওয়াইএলসি সবসময় তাদের মূল্যবোধ, দক্ষতা, এবং মানসিকতায় উন্নত করতে পাশে থাকবে।

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট