চট্টগ্রাম সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

ভিক্ষার জমানো ‘৯৩ হাজার টাকা’ ব্যাংকে রাখতে গিয়ে খোয়ালেন বৃদ্ধা

অনলাইন ডেস্ক

২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৩১ অপরাহ্ণ

ভিক্ষা করে তিলে তিলে ৯৩ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন নুরজাহান খাতুন (৬৫)। বয়সের ভারে শরীর এখন আর চলে না। প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে জীবনের বাকি সময়টা কোনোমতে খেয়েপরে ঘরে বসে কাটাতে চেয়েছিলেন।

 

এ জন্য জমানো টাকাগুলো আজ রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ব্যাংকে হিসাব খুলে জমা রাখতে যান এই বৃদ্ধা। এ সময় লেখাপড়া না জানা ভিক্ষুকের সহায়তায় এগিয়ে আসেন এক যুবক। নুরজাহানের কাছ থেকে সেই টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা বলে প্রতারক সেই যুবক পালিয়ে যান।

 

সর্বস্ব হারিয়ে ব্যাংকের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দরিদ্র বৃদ্ধা নুরজাহান। আজ দুপুরে কুষ্টিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের শাখায় এই ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টার দিকে শহরের বড় বাজার অগ্রণী ব্যাংক শাখায় গিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা।

 

ব্যাংকের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে টাকা খোয়ানোর দৃশ্য দেখা গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত করতে পারেননি সেখানে কত টাকা ছিল।

 

নুরজাহান খাতুন শহরের চাউলের বর্ডার নামক এলাকার মৃত ককিল উদ্দিন শেখের স্ত্রী। তিনি শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করেন।

 

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সকালের দিকে নুরজাহান খাতুন ও তাঁর মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শাবানা খাতুন ব্যাংকের ভেতরে গিয়ে টাকাগুলো জমা দিলে নতুন ব্যাংক হিসাব নম্বর খুলতে ব্যাংক কর্মকর্তারা কয়েকটি টিপসই নেন। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে এক ব্যক্তি টাকা জমা দিয়ে দেওয়ার কথা বলে বৃদ্ধা নুরজাহানের কাছ থেকে ৯৩ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় ওই ব্যক্তির পরনে ছিল কালো রঙের সোয়েটার, নীল প্যান্ট ও কালো জুতা।

 

নুরজাহান খাতুন বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই মা-মেয়ে একসঙ্গে থাকি শহরের চাউলের বর্ডার এলাকায়। ভিক্ষাবৃত্তি করে এই টাকাগুলো গুছিয়ে ছিলাম। আজ নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সেই টাকাগুলো রাখার জন্যই মা-মেয়ে সকালে ব্যাংকে আসি। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তারা কয়েকটি টিপসই নেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই প্রতারক টাকা জমা দিতে বলে আমার কাছ থেকে ৯৩ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

 

বৃদ্ধা আরও বলেন, ‘প্রতারক আমার শেষ সম্বলটুকু নিয়ে গেছে। আমি পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার টাকা উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে নেওয়া আমার টাকাগুলো উদ্ধার করে দিন। এই টাকা ফেরত পেলে আমি আমার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে জীবনযাপন করতে পারব। তাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে টাকাগুলো উদ্ধারে সহযোগিতা চাই।’

 

অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়ার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। পুলিশ এসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে গেছে।’

 

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, ভুক্তভোগী নুরজাহান খাতুন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে চোরকে ধরতে পুলিশ কাজ করছে। সূত্র: আজকের পত্রিকা

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট