চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

ছবি: বিবিসি বাংলার সৌজন্যে

সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে : বিবিসি বাংলাকে ফখরুল

অনলাইন ডেস্ক

২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:২২ অপরাহ্ণ

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব।

 

সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে ভাবনা, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সংস্কার প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়াসহ আরও অনেক বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দুই পর্বে বিএনপির মহাসচিবের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। প্রথম পর্বটি এখানে তুলে ধরা হলো:

মি. আলমগীর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারে যোগ দেওয়ার জন্য। কেমন আছেন আপনি?

মির্জা ফখরুল: ভালো, ভালো। অনেক ভালো।

মির্জা ফখরুল: আমরা তো চাই আর্লি ইলেকশন। আগেও বলেছি আমরা। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার, যেটা ন্যূনতম সংস্কার, সেগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। এটা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এবং আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের যে অভিজ্ঞতা দেখেছি আমরা অতীতের কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টগুলোতে, তাতে করে এটা অসম্ভব কিছু না। এটা পসিবল, যদি গভর্নমেন্ট চায় যে ইলেকশন তারা করবে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে বা অগাস্টের মধ্যে, তারা করতে পারে।

 

বিবিসি বাংলাআপনারা সুনির্দিষ্ট করে কি বলবেন যে আপনারা এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন চান?

মির্জা ফখরুল: আমরা সুনির্দিষ্ট সময় ওভাবে বলতে চাই না এ জন্য যে তাতে তো লাভ হবে না। কারণ, গভর্নমেন্টকেও চাইতে হবে। আলাদা পলিটিক্যাল পার্টিগুলোরও চাইতে হবে—সবাই মিলে একসঙ্গে চাইতে হবে। তবে আমাদের দিক থেকে আমরা মনে করি, এটা কোনো অসম্ভব কিছু না। এটা খুবই সম্ভব এবং যত দ্রুত হয়, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।

বিবিসি বাংলাকিন্তু আপনাদের কোনো ডেডলাইন বা সময়সীমা নেই?

মির্জা ফখরুল: ডেডলাইন আমরা দিইনি এখনো।

 

বিবিসি বাংলাযদি আপনারা দেখেন, নির্বাচনটা আপনারা যে সময়ের মধ্যে আশা করছেন, সেটা হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপটা কী হবে?

মির্জা ফখরুল: সে ক্ষেত্রে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের পার্টিতে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব এবং আমাদের সঙ্গে যাঁরা আন্দোলনে ছিলেন, আছেন—তাঁদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করব। আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেব।

বিবিসি বাংলাঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে তাঁরা কিছু সংস্কার কাজ করতে চান এবং সেই সংস্কারগুলো শেষ হলে তখন তাঁরা একটা নির্বাচনে যাবেন। তো আপনারা কি অপেক্ষা করতে রাজি আছেন সংস্কারকাজ শেষ করা পর্যন্ত?

মির্জা ফখরুল: আমরা আমাদের কথাগুলো স্পষ্ট করে বলে আসছি। বলেছি যে তিনি যতগুলো সংস্কারের মধ্যে হাত দিয়েছেন, অতগুলো সংস্কার করতে গেলে ১০ বছরের মধ্যেও শেষ হবে না। আর সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। দুই বছর আগে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দিয়েছি আমরা। তার মধ্যে এই বিষয়গুলো তো রয়েছে।

 

সংবিধান সংস্কারের বিষয় রয়েছে, জুডিশিয়াল কমিশনের কথা আমরা বলেছি, আমরা ইলেকশন কমিশনের কথা বলেছি, আমরা ব্যুরোক্রেসি সংস্কারের কথা বলেছি ৩১ দফায়, আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছি—এগুলো আমাদের সব বলা আছে। এখন সে ক্ষেত্রে তারা যেটা করেছে, সেটা কী রিপোর্ট নিয়ে আসছে আমরা জানি না।

যদি রিপোর্টগুলোয় দেখা যায়, আমাদের সঙ্গে মিলে গেছে, তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যেগুলো মিলবে না, সেগুলো তো একটা ন্যূনতম কনসেনসাস হতে হবে। এরপর সেটা হতে হবে।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আপনি সংস্কার দিলেন, কিন্তু সেটাকে অ্যাপ্রুভ করবে কে? তার জন্য তো আইনগত যাদের অধিকার আছে, তারাই করতে পারবে। দ্যাট ইজ পার্লামেন্ট।

 

পার্লামেন্ট ছাড়া কিন্তু কোনো সাংবিধানিক সংস্কার কঠিন হবে। এমনকি অন্য কতগুলো বিষয় আছে, যেগুলো সংবিধানে কিছু কিছু পরিবর্তন আনার দরকার আছে। কিন্তু সেগুলা পার্লামেন্ট ছাড়া সম্ভব নয়। সে জন্যই আমরা মনে করি, দ্য সুনার দ্য ইলেকশন ইজ বেটার।

বিবিসি বাংলাআপনি কি মনে করেন যে নির্বাচিত সরকার আসার আগপর্যন্ত এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের যাওয়া উচিত হবে না বা তারা যেতে পারে না?

মির্জা ফখরুল: যাওয়া উচিত হবে না আমরা বলছি না। কিন্তু যেতে তারা পারবে না এ জন্য যে সব দলের কনসেনসাস না হলে কোনোটাই যাওয়া তাদের ঠিক হবে না।

 

বিবিসি বাংলাএই সরকারের মেয়াদ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং নির্বাচন পর্যন্ত তো এই সরকারের মেয়াদ থাকবে—এটাই সবার ধারণা।

মির্জা ফখরুল: যদি সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন করে, তাহলেই তারা নির্বাচন কনডাক্ট করা পর্যন্ত থাকবে। তা না হলে তো নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।

বিবিসি বাংলাআপনার কি ধারণা যে এই সরকারের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে?

মির্জা ফখরুল: নিরপেক্ষতার প্রশ্ন আসতে পারে। কেননা, এখানে আমরা জিনিসটা লক্ষ করছি যে ছাত্ররা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে, সম্ভাব্য কথা। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে (সরকারে) থেকেই তারা নির্বাচন করবে, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।

 

বিবিসি বাংলাআপনার কি মনে হয়, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে এখন কোনো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে?

মির্জা ফখরুল: এখন কোনো প্রশ্ন নেই। আমাদের কাছে কোনো প্রশ্ন নেই।

বিবিসি বাংলা৫ অগাস্টের পর যখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা হচ্ছিল, সে আলোচনায় আপনারাও ছিলেন। সেই আলোচনার ভিত্তিতে পরে সরকার গঠন করা হয়। এই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল কী হবে, সেটা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি?

মির্জা ফখরুল: না। তখন তো ইলেকশন দ্রুত করার কথাই হয়েছে। দ্রুত ইলেকশন করার কথাই হয়েছে।

 

বিবিসি বাংলাদ্রুত বলতে কত সময়? কোনো ধারণা, সময়সীমা—এ ধরনের কিছু নিয়ে কথা হয়নি?

মির্জা ফখরুল: না, সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তখন তো সেই সুযোগ ছিল না।

বিবিসি বাংলাতো অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আপনি নিজেই বলেছিলেন যে এই সরকারকে আপনারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।

মির্জা ফখরুল: করছি।

বিবিসি বাংলাএটা এখনো অব্যাহত আছে?

মির্জা ফখরুল: অব্যাহত আছে। তারা যখনই ডাকে, তখনই আমরা যাই, কথা বলি। না ডাকলে তো যাওয়া যায় না, এরপরও আগ বাড়িয়েও কথা বলি। আমরা যেগুলো মনে করি যে এগুলো করা উচিত, সেগুলো তাদের আমরা জানাই। অ্যান্ড উই আর কো–অপারেটিভ। এখন পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনো আন্দোলনও করিনি, কথাও বলি না কোথাও। তবে দু-একটা ভুলত্রুটি তো দেখিয়ে দিতেই হয়।

 

বিবিসি বাংলাশুরু থেকে আপনাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যে সম্পর্কটা ছিল, এখনো কি তাই আছে? নাকি এখানে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে?

মির্জা ফখরুল: আমরা মনে করি যে তা–ই আছে।

বিবিসি বাংলাসরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রায়ই সময় একটা বিষয় বলা হয় যে তারা যে সংস্কারগুলো করছে বা করতে চাইচ্ছে, তার একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে—যে ধরনের একনায়কতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী সরকার তৈরি হয়েছিল, সে ধরনের একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে বাংলাদেশে আর তৈরি না হয়। আপনার কী মনে হয়, এর দ্বারা আপনাদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়?

মির্জা ফখরুল: কোনোমতেই না। কারণ, আমরা কখনোই স্বৈরতান্ত্রিক ছিলাম না। আমরা সব সময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম। এখানে মাল্টি পার্টি ডেমোক্রেসি আমরাই নিয়ে আসছি। একদলীয় শাসনব্যবস্থা শেখ মুজিবের, সেখান থেকে ট্রানজিশন টু মাল্টি পার্টি সিস্টেম তো জিয়াউর রহমান সাহেব করেছেন। গণমাধ্যমকে মুক্ত করা, আমরাই করেছি। পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি তো আমরাই নিয়ে আসছি। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সিস্টেম আমরাই চালু করেছি। আপনি প্রতিটিই দেখেন। সুতরাং প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদেরকে কেউ স্বৈরাচারী বলে আঙুল তুলবে—এ কথা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারব না।

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট