বাংলাদেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, ততদিন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যে স্বাভাবিক হবে না, তা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী।
দুই দেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক এখন ‘নিখুঁত’ আছে, এ কথা জানানোর পাশাপাশি তিনি যোগ করেন— দুই দেশের সম্পর্ক তখনই স্বাভাবিক হবে, যখন একটি (মানুষের ভোটে) ‘নির্বাচিত সরকার’ বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে।
‘যদি আপনারা দুই দেশের সম্পর্কের কথা বলেন, সেটা ওখানে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত সম্ভব নয়। তবে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক একদম ঠিক আছে, সব দারুণভাবে চলছে’, মন্তব্য করেন ভারতীয় সেনাপ্রধান।
এছাড়া বাংলাদেশে যখন গত আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান ও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়, তখন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী ও বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নিজেদের মধ্যে সব সময় যোগাযোগে ছিলেন বলেও জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কোনও দেশেরই কোনও ভালনারেবিলিটি নেই। আমার সঙ্গে ওই দেশের সেনাপ্রধানেরও নিয়মিত যোগাযোগ আছে।’
‘এমনকি সে দেশে যখন পটপরিবর্তন ঘটলো, তখনও আমরা নিজেদের মধ্যে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছি। পরে ২০ নভেম্বর আমরা দু’জনে একটি ভিডিও কনফারেন্সও করেছি, ফলে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক একদম ঠিকই আছে।’
এর আগে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশের একটি সামরিক এয়ারক্র্যাফটে করে ঢাকা ত্যাগ করেন এবং দিল্লির কাছে হিন্ডনে এসে নামেন। তারপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন।
এর পরদিনই ভারতের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি যাতে দিল্লিতে এসে অবতরণ করতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দিল্লির কাছে ‘ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স’ বা আগাম অনুমতিও চাওয়া হয়েছিল।
সোমবার ভারতের সেনাপ্রধানের কথায় পরিষ্কার ইঙ্গিত মিললো যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছাড়ার বিষয়টা দুই দেশের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের মধ্যে কথাবার্তা বলেই চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের কথা তুলে জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী আরও বলেন, ‘উনি বলেছেন, ভারত তাদের জন্য স্ট্র্যাটেজিকালি গুরুত্বপূর্ণ, কথাটা উল্টোদিক থেকেও সত্যি। মানে বাংলাদেশও আমাদের জন্য স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।’
‘শুধু তাদের দক্ষিণ-পূর্বে একটা ছোট অংশ ছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তে পুরোটা জুড়েই ভারত। আমরা একে অন্যের প্রতিবেশী, আমাদের চিরকাল একসঙ্গেই থাকতে হবে ও পরস্পরকে জানতে হবে– ফলে যেকোনও ধরনের বিদ্বেষ আমাদের উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর’, আরও বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতাও আগের মতোই অব্যাহত আছে বলে দাবি করে তিনি জানান, দু’দেশের যৌথ সামরিক মহড়া হওয়ার কথা ছিল, সেটা শুধু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে স্থগিত করা হয়েছে। তবে ‘পরিস্থিতির উন্নতি হলে’ সেটাও কিছুদিন পরে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেনারেল দ্বিবেদী।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ