ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা দলীয়করণ করার বিপক্ষে। তারেক রহমানের নির্দেশ, আমরা কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করতে চাই না। বাংলাদেশটা ধ্বংস হয়ে গেছে দলীয়করণের কারণে। প্রত্যেকটি জায়গায় দলীয়করণ করতে করতে দেশ আজ এ জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে।
নতুন বছরের প্রথমদিন বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগস্থ বাসভবনে চট্টগ্রাম বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বঞ্চিত ব্যাবসায়ী ফোরামের আহবায়ক এস এম সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও ফোরামের পরিচালক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন মাহমুদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
ব্যবসায়ীদের হয়ে কে নেতৃত্ব দিবে তা নিজেদের মধ্যে ঠিক করতে হবে জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, যখন আমি মন্ত্রী ছিলাম তখন কে কোথাকার, কোন চেম্বারের, কোন এসোসিয়েশনে কে হবে, সেসবে মাথা ঘামায়নি। কারণ, এটা একেবারে উচিত না। আপনাদের নেতা আপনাদের নির্ধারণ করতে হবে। কে নেতৃত্ব দিবে সেটার সিদ্ধান্ত আপনাদের। সেখানে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমরা (বিএনপি) চাইও না।
দেশের মানুষের মনোজগতের বিশাল পরিবর্তন হয়েছে, তা ধারণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশটা শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে মানুষের মনোজগতের যে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না। এই পরিবর্তনের সাথে যারা নিজেদের ধারণ করতে পারবে না, আগামী দিনে সে রাজনীতিবিদ হোক, আর যেই হোক তার কোনো ভবিষ্যৎ নেই দেশে। মানুষের প্রত্যাশা, আকাঙ্ক্ষা, ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে গেছে। রাজনীতিও আগের মতো চলবে না।
ব্যবসায়ে নতুন ধারণা, সততা ও স্বচ্ছতা আনতে হবে জানিয়ে সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের (ব্যবসায়ী) ট্রেড বডিও চলবে না। এগুলোর মধ্যে নতুন ধারণা আনতে হবে। এখানে সততা আনতে হবে, স্বচ্ছতা আনতে হবে। মানুষ যাতে বাইরে থেকেও দেখতে পারে, ভেতর থেকেও দেখতে পারে। এরমধ্যে ঘোলাটে করার সুযোগ নেই। তাই এটা আমাদের সকলকে ধারণ করতে হবে।
দেশকে পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি দিয়ে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, এ সুযোগ যদি আমরা দেশকে পরিবর্তন করার জন্য এবার ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে আমরা সকলে ডুবে যাব। রাজনীতিবিদরা ডুববে, দেশের জনগণ ডুববে, ব্যবসায়ীরা ডুববে, সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনও কাজ করতে পারবে না। তাই এ সুযোগটা নিতে হলে সকলের মধ্যে সততা, স্বচ্ছতা, নতুন ভাবনা এবং নতুন চিন্তায় আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশটা যেভাবে দলীয়করণ এবং লুটপাটের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন কিন্তু তার বাইরের কেউ না। শুধু যে চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন ধ্বংস হয়েছে তা নয়, দেশে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই এভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত করে সকলের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেওয়া। দল হিসেবে এ দায়িত্বটা পালন করছি। কে নেতৃত্বে যাবে, কোন দল যাবে, এসবের মধ্যে আমরা (বিএনপি) নেই। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারি।
ব্যবসায় নেতৃত্ব ভালো না হলে প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, আপনারা নেতৃত্ব যদি ভালো আনতে না পারেন, এতে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের তো হবেই, অর্থনীতিরও হবে। তবে সবচেয়ে বেশি আপনাদের প্রতিষ্ঠান ক্ষতি হবে। আপনারা যারা মেম্বার আছেন, তাদের নিজেদের স্বার্থ এবং দেশের স্বার্থ দেখতে হবে। কিন্তু আমরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে এতো গভীরে চলে যায়, তখন আমরা দেশের স্বার্থ দেখি না।
প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে হলে দোসরদের জায়গা দেওয়া যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে হলে দোসরদের জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি দোসরদের জায়গা দেওয়া হয় তাহলে নিজেদেরই ক্ষতি হবে। তাই আপনাদের নিজেদের অবস্থান নিতে হবে। বাইরে থেকে গিয়ে কিছু করতে পারবেন না। দোসররা যাতে ফিরে না আসে, যারা লুটপাট করেছে, দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে, দেশের রাজনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে, প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে, সেই দোসররা যদি আবার আপনাদের এখানে ফিরে আসে। তাহলে সেখানে তো আপনারা নিজেরাই আত্মহত্যা করবেন। এরজন্য আপনাদের যে অবস্থান নেওয়া দরকার, তা আপনাদের (ব্যবসায়ী) নিতে হবে। বাকিরা আপনাদের সহযোগিতা করতে পারবে, কিন্তু আপনাদের কাজ আর কেউ করতে পারবে না। এজন্য শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
মাঝামাঝি অবস্থানে কোনো লাভ হবে না জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, এখানে মাঝামাঝি কোনো অবস্থান নেই। মাঝামাঝি গেলে আপনাদের কোনো লাভ হবে না। দোসরদের বিরুদ্ধে যারা শক্ত অবস্থান নিয়েছে, তারা সফল হয়েছে। আর যারা নিতে পারে নাই, চেষ্টা করেছে, আবার ভাবছে সম্পর্কের কথা এখানে এসবের কিন্তু কোনো জায়গা নেই।
দোসরদের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আপন ভাই হলেও দোসরদের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। আমরা আত্মীয়স্বজন আছে যারা দোসরদের সঙ্গে ছিল, তাদের আমি বাসায়ও প্রবেশ করতে দিই না।
দোসরদের নির্বাচন তো দূরের কথা আগে জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, যারা এত বছর লুটপাট করেছে, এদের ফিরে আসার কোনো অধিকার নেই। আর ফিরে আসার দরকারও নেই, এদের তো হাজার হাজার কোটি টাকা হয়ে গেছে। তাদের আর ব্যবসা করার দরকার নেই। এদের এখন জেলে দেওয়া দরকার শুধু। তাদের যারা হাজার কোটি টাকার মানুষ হয়েছে, তারা কেউ নিয়মের মাধ্যমে হয়নি। অনিয়মের মাধ্যমেই হয়েছে, তাই এদের জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে। নির্বাচন করা তো দূরের কথা, তাদের তো দেশের মানুষের সামনে, আইনের সামনে জবাবদিহিতা করতে হবে। প্রথমে জবাবদিহি তারপর নির্বাচনের ব্যাপার। সেটা অনেক পরের কথা। শেখ হাসিনার মতো বিভিন্ন এসোসিয়েশনের যারা পালিয়ে গেছেন তারাও মেসেজ কলের মাধ্যমে নির্দেশ দেন। যারা এসব নির্দেশ গ্রহণ করে তাদেরও জেলে দেওয়া দরকার।
ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শওকত আলী, আবু ছালেহ, এড. ওমর ফারুক, আবদুল্লাহ আল মিলন, ওয়াহিদ মুরাদ, নুরুল হক, নুরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, আলী আহসান, আলমগীর সরকার, এনামুল হক চৌধুরী, এ এস এম ইসমাইল খান, মোরশেদুল আলম, শাহনেওয়াজ রুমি, তাজুল ইসলাম, গোলাম নবী, মো. আলমগীর, আবু তাহের। উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী ফোরামের জয়নাল আবেদীন জিয়া, হুমায়ুন কবির সোহেল, জামাল উদ্দিন বাবলুসহ বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ