চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

বাংলাদেশ ‘বদলে দেওয়া’ ২০২৪ বিদায় নিচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১২:২০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের জন্য পরিবর্তন আর উত্তেজনায় ভরা এক বছর ২০২৪। ছাত্রজনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সমকালীন বিশ্বের বিরল এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই বছরই বিদায় ঘটে টানা ১৫ বছরের ‘কর্তৃত্ববাদী’ শেখ হাসিনা সরকারের। সূচিত হয় রাজনৈতিক পালাবদলের নতুন অধ্যায়।

 

বাংলাদেশকে ‘বদলে দেওয়া’ গণঅভ্যুত্থানই শুধু নয়, এমন অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষী ২০২৪ বিদায় নিতে যাচ্ছে আজ। সকালে পূর্বদিকে ওঠা নতুন সূর্য বিকেলে পশ্চিমে অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে মহাকালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে আরেকটি বছর। আগামীকাল নতুন ভোর দিয়ে শুরু হবে নতুন বছর ২০২৫।

 

ঘটনাবহুল ২০২৪ : জানুয়ারির ৭ তারিখ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয় তার সরকার।

 

বিপদের ছায়া : বছরের প্রথম বড় ধাক্কা আসে ২৯ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণ যায়। মার্চ মাসে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হয়। এতে ২৩ বাংলাদেশি নাবিক জিম্মি হন। কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনার পর নাবিকরা মুক্তি পান। এরপর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপক‚লে আঘাত হানে, যার প্রভাবে সাত জেলায় ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আগস্টের শেষদিকে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বৃহত্তর নোয়াখালী এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল।

 

আন্দোলনের জোয়ার : হাইকোর্ট ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করলে পরদিন শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। তাদের এই বিক্ষোভ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ১ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা বড় আকারের আন্দোলন শুরু করেন। ১৫ জুলাই থেকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় সহিংসতা। ১৭ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে সরকার দেশব্যাপী কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। তবে প্রতিবাদের ঢেউ এতটাই বেগবান হয় যে, তুমুল গণআন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন; টানা ১৫ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

 

সরকারবিহীন তিনদিন : সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পুলিশকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন হামলার জেরে তারা প্রায় উধাও হয়ে যায়। সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেন। জনসাধারণ ডাকাত আতঙ্কে লাঠিসোঁটা নিয়ে নিজ উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করে। দেয়ালগুলোতে আন্দোলনের সময় লেখা স্লোগান মুছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে আঁকেন নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

 

সরকারে নতুন নেতৃত্ব : নোবেলবিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৮ আগস্ট রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। তার নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কারে কাজ করছে উপদেষ্টা পরিষদ, গঠন করা হয়েছে ১১টি সংস্কার কমিশন। বছরের শেষদিকে বারবার আলোচনায় উঠে আসে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রসঙ্গ।

 

পরীক্ষার জটিলতা : ছাত্রজনতার আন্দোলনের জেরে এইচএসসির সব বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অবশিষ্ট থাকা পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়। ১৫ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশেও আগের মতো আনুষ্ঠানিকতা দেখা যায়নি।

 

গর্বের অর্জন : অক্টোবরের শেষদিকে এসে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে নতুন ইতিহাস গড়েন মেয়েরা। উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট ধরে রাখার উচ্ছ্বাসে মাতে গোটা দেশ। আর ডিসেম্বরের শেষদিকে ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট বাংলাদেশকে বর্ষসেরা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সংকট ও পরিবর্তনের মধ্যেও এই অর্জনগুলো বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও অগ্রগতির প্রতীক হয়ে ওঠে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট