আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনাচার হয়েছে। এ জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। চূড়ান্ত খসড়া করবো।’
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর কলেজ রোডে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৪’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটা যদি নষ্ট করা যায়, তাহলে দেশের যেকোনও সরকার এসে সব ধরনের মানবাধিকার হরণ করার অবাধ সুযোগ পেয়ে যাবে। গত ১৫ বছর এ কাজটা করা হয়েছে। উচ্চ আদালত মানবাধিকার হরণ করার, মানুষকে নির্যাতন করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।’
তিনি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘এমন দুর্ঘটনাও দেখেছি, আপিল বিভাগ দিনের পর দিন জামিনের শুনানি ডিলে (দেরি) করেছে খাদিজাকে (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা) বিচার ছাড়াই জেলে রাখার জন্য। জঘন্য সব ঘটনা ঘটেছে। এই উচ্চ আদালতের অনাচার, আদালত ব্যবস্থার মাধ্যমে নিপীড়ন নির্যাতনের সবচেয়ে প্রবলেমেটিক বিধানটা হচ্ছে, আদালতের বিচারক নিয়োগ আইন। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের নামে কী হয়েছে, বহু উদাহরণ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উচ্চ আদালতে এমন বিচারক নিয়োগ পেয়েছে, যে নিম্ন আদালতে বিচারক হওয়ার পরীক্ষায় ফেল করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি, ল কলেজ থেকে পাস করেছে। এমন বিচারক আছে কোনোদিন কোর্টে প্রাকটিস করেননি। ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটে গেছে।’
বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনাচার হয় না, ওনাদের আপিল বিভাগে দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনাচার হয়। বেঞ্চ গঠনের ক্ষেত্রে অনাচার হয় এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে অনাচার হয়। প্রত্যেকটা জিনিস অ্যড্রেস করার চেষ্টা করবো। অন্তত ভালো কিছু আইন করে যাই। ভালো কিছু নিয়োগ দিয়ে যাই।’
অন্তর্বতী সরকারের সময় ২৩ বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের বারবার বলা হচ্ছে- হাইকোর্টে যারা বিচারক ছিলেন, তারা প্রচণ্ডভাবে একটি দলের প্রতি অনুগত ছিলেন। তাদের অনেকে অনাচার করেছে। ৯০ ভাগের ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল। বার বার বলা হচ্ছিল, কিছু বিচারক নিয়োগ দিতে। আমরা আইনের জন্য অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। জুডিসিয়াল ক্যু হওয়ার পর্যন্ত আশঙ্কা ছিল, দ্রুত করতে বলা হয়েছে। এ জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভুল থাকতে পারে, সবাই মিলে করেছি। প্রধান বিচারপতির অফিস, অ্যাটর্নি জেনালের অফিস, তিন জন উপদেষ্টা ইনভলব ছিল। আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু আমাদের সময় ছিল না। নেক্সট টাইম যখন নিয়োগ হবে, আমরা যদি ভালো আইন করতে পারি। ৩০-৪০ জন বিচারক নিয়োগ দিতে পারি, ওনারা ২০-৩০ বছর দেশকে সার্ভ করবেন। কিছুই না করার চেয়ে কিছু করা ভালো।’
মতবিনিময় সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার জ্যের্তিময় বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ