রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পক্ষে-বিপক্ষে যে বির্তক তৈরি হয়েছে তা এখনও মীমাংসা হয়নি। এ ইস্যুতে সমন্বয়ক ও জামায়াত চাচ্ছে অপসারণ, অপরদিকে বিএনপি অপসারণ চায় না। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ এ নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এই ইস্যুতে সংকট বা সাংবিধানিক শূন্যতা চাইছি না দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বার্থে।’ কারণ হিসেবে বিএনপি অবশ্য বলছে- এই মুহূর্তে এ সংকট তৈরি হলে তা অন্য কোন অসাংবিধানিক শক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সাংবিধানিক সংকটের চেয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুটি আরও বেশি রাজনৈতিক। বিএনপি খুব ভালো করে জানে এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারবে। আর রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যু সামনে আসলে তখন নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে। সে কারণেই হয়তো বিএনপির আপত্তি।
এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজেই পদত্যাগের দাবির মুখে পড়েন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তার পদত্যাগসহ বেশকিছু দাবিতে আলটিমেটাম দিয়ে বঙ্গভবনসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করেছেন। অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রপতির শপথভঙ্গেরও। তবে স্পিকার পদত্যাগ করায় রাষ্ট্রপতি কার কাছে পদত্যাগ করবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় সাংবিধানিক প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বিষয়ে দেশ বড় ধরনের সাংবিধানিক সংকটের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন আইন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও পক্ষে-বিপক্ষে বির্তক তৈরি হয়েছে।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর যেহেতু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন, সেহেতু তার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়াটা আর গুরুত্বপূর্ণ নয়; কিন্তু ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিটি যে সামনে এলো, এর মীমাংসা কীভাবে হবে? এ প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সবার মুখে মুখে। সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদে আছে, ‘রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ক্ষেত্রমতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, স্পিকার তো পদত্যাগ করেছেন।
সংবিধান মানলে নতুন স্পিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনিই স্পিকারের দায়িত্ব পালন করবেন; পদত্যাগ করুন আর সংসদ ভেঙে যাক, যাই হোক না কেন। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর পঞ্চম সংসদের সূচনা অধিবেশনে (৫ এপ্রিল ১৯৯১) এরশাদ আমলের স্পিকার শামসুল হুদা চৌধুরী সভাপতিত্ব করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে ধার করে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা।’ এরশাদের পতনের পরপরই চতুর্থ সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, গত ২৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা থাকা না-থাকার বিষয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে গত ২২ অক্টোবর বঙ্গভবন ঘেরাও করে কয়েকটি সংগঠন। একইদিন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে আলটিমেটামও দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। পরদিনই বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা জানান, এই মুহূর্তে কোন সাংবিধানিক সংকট তৈরি হোক সেটি তারা চান না।
এরপর ২৬ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈঠক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। কিন্তু ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও তাদের আগের অবস্থানে অনড় ছিল বিএনপি। তাই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। তাতে সরব হয়ে ওঠে দেশের রাজনৈতি অঙ্গন।
পূর্বকোণ/ইব