চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রবৃদ্ধির গতি কমে বাড়বে মূল্যস্ফীতি: পূর্বাভাস এডিবির

অনলাইন ডেস্ক

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১১:৩৩ অপরাহ্ণ

ক্ষমতার পালাবদলে শিল্পে নৈরাজ্য, অস্থিরতা আর উৎপাদনের স্থবিরতার মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কঠিন হবে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। তারা এই অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির যে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল, সেটি কমানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতিও ধারণার চেয়েও বেশি বাড়বে বলে মনে করছে তারা।

 

ম্যানিলাভিত্তিক সংস্থাটি তাদের ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক, সেপ্টেম্বর ২০২৪’ এ পূর্বাভাস জানিয়েছে।

 

এপ্রিল সংস্করণে চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে জানিয়েছিল এডিবি। এখন তারা তা নামিয়ে এনেছে ৫ দশমিক ১ শতাংশে।

 

এপ্রিলে এডিবি বলেছিল, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসবে, তবে এখন তারা মনে করছে সেটি বেড়ে বরং ১০ শতাংশে উন্নীত হবে।

 

আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত বাজেটে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পরিকল্পনা সাজায়। তবে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের দিকে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

 

প্রবল গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন ও ব্যবসা বাণিজ্য বিঘ্নিত হয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ কাটেনি।

দৃশ্যত অকার্যকর পুলিশি ব্যবস্থার মধ্যে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্পে অস্থিরতা ছড়িয়েছে। একের পর এক কারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিলের কথা ১০ দিন আগেই জানানো হয়েছে সরকারের তরফে। এই কয়দিনে তা আরও বাড়তে পারে।

 

এরই মধ্যে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির এলসি কমার তথ্য এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। অসন্তোষ আছে ওষুধসহ অন্যান্য শিল্প শ্রমিকদের মধ্যেও। দেশে পানির ট্যাংক ও টায়ার বাজারের অন্যতম প্রভাবক গাজী টায়ারস ও গাজী ট্যাংক কারখানা লুটপাটের পর আগুন দেওয়া হয়েছে।

 

দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। ১০টিরও বেশি ব্যাংকে বেতনের টাকাও তুলতে পারছে না গ্রাহকরা। বিদেশি সহায়তাও খুব একটা পাওয়া যাবে না জানিয়ে রাজস্ব আদায়ে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

 

উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক প্রকল্পকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘রাজনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করার কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার।

 

সরকার পতনের পর নিত্যপণ্যের দাম কমে আসা নিয়ে ব্যাপকভাবে যে আশা ছড়িয়েছিল, বাজারে ঘটেছে তার বিপরীত চিত্র। পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, যা মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলছে।

 

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অর্থমন্ত্রী হাসান মাহমুদ আলী। ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ।

 

তবে আন্দোলন, সংঘাত, কারফিউ আর অচলাবস্থার মধ্যে জুলাইয়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে যায় মূল্যস্ফীতি। আগস্টে সেখান থেকে কিছুটা কমলেও এখনও তা ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

 

এর মধ্যে দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১১টি জেলায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যায়। আমদানি ও দাম নির্ধারণ করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ডিমের বাজার। নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো সুখবর নেই। দাম বেঁধে ও আমদানি করেও ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর অবশ্য আশা করছেন মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।

 

গত সোমবার তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে একটি ভালো জায়গায় চলে আসবে। কতখানি ভালো জায়গায় আসবে সেটা হয়ত বলা যাবে না। তবে আমরা পলিসি টাইট করব, যাতে মূল্যস্ফীতি কমে আসে।মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা হিসেবে গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর নীতি সুদহার বা রেপো দুইবার বাড়িয়েছেন। সবশেষ তা ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯.৫০ শতাংশ করা হয়েছে।এডিবির পূর্বাভাস বলছে, মূল্যস্ফীতি কমানোর এই উদ্যোগে সুফল মিলবে না।

 

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট