জামায়াতে ইসলামী কখনো ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেলে গণমাধ্যমে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, হিংসা ও বিভক্তির রাজনীতির কবর চায় জামায়াত। অতীতে জাতিকে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখা হয়েছিল। কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সাংবাদিকরা চাইলেও সত্য বলতে পারেননি। এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। আসুন সমাজের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্বার্থে এক হই। এ জায়গায় আমরা সমঝোতা করব না। আপনাদের (সাংবাদিক) কলম মুক্ত হোক। চিন্তা স্বাধীন হোক। আপনারা যাতে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, প্রধান নির্বাহী, বার্তা সম্পাদক ও চিফ রিপোর্টারদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় বক্তব্য দেন- নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, বাংলাভিশনের প্রধান সম্পাদক ড. আব্দুল হাই সিদ্দিক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি এমএ আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই শিকদার, মানবজমিনের নির্বাহী যুগ্ম সম্পাদক শামীমুল হক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, সিনিয়র সাংবাদিক এলাহী নেওয়াজ খান সাজু প্রমুখ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, নয়া শতাব্দী সম্পাদক নাঈম সালেহীন, আমার সংবাদ সম্পাদক হাশেম রেজা প্রমুখ।
শফিকুর রহমান বলেন, এবারের আন্দোলন কোনো দলের ছিল না, তবে শুধু ছাত্রদেরও ছিল না। সাধারণ মানুষও ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর ১৫ বছরের আন্দোলন এবং ১৫ বছরের নির্যাতনের প্রতিফলন ঘটেছে। তবে অবশ্যই ছাত্রদের কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। তরুণদের প্রতিপক্ষ ভাবার কারণ নেই। যদি তারা পথ হারিয়ে ফেলে তাদের পথ দেখানোটাও আমাদের দায়িত্ব।
জামায়াতের আমীর বলেন, ধর্ম কিংবা দলের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে বিভক্ত করা হলে, তৃতীয় পক্ষ দেশ নিয়ে মাতব্বরির সুযোগ নেবে। জামায়াত ক্ষমতায় এলে ধর্মের ভিত্তিতে কোনো মূল্যায়ন করা হবে না। সংখ্যালঘু শব্দটা দিয়ে সমাজকে বিভক্তি করা হচ্ছে। আমরা চাই এ সংস্কৃতি উঠে যাক।
তিনি বলেন, সর্বশেষ জামায়াতকে যে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেটা প্রত্যাহার করা হয়েছে। মানুষকে ডাইভারর্ড করতে এটা (নিষিদ্ধ) করা হয়েছিল। অধিকার নিশ্চিতের জন্য কাজ করার সময়ই দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ছাত্র আন্দোলন চাপা দেওয়ার জন্য আমাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। তবে আমাদের কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর ক্ষোভ নেই। আমরা ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু ন্যায় বিচারের স্বার্থে যারা সুনির্দিষ্ট অপরাধী তাদের শাস্তি পেতে হবে। যাতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি না হয়। বিভক্ত রাজনীতির কবর চাই। গণহারে ৫০০ জনকে আসামি করা, হত্যা মামলা করা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
জামায়াতের ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী অনেক আগে থেকেই গণমানুষের দল হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার হামলা, মামলা, নির্যাতন করেছে। কিন্তু সে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। জামায়াত আবারও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে। মানুষও জামায়াতকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে। আমাদের এ পথচলায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে নির্ভয়ে তা আমাদের ধরিয়ে দেবেন। আমাদের সমালোচনা করবেন।
বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, আপনারা আমাদের সাহায্য করেন, কিন্তু বাধ্য করবেন না। দেশের কোনো সিদ্ধান্ত দেশের মানুষই নেবে। সমাজ থেকে ভয়ের সংস্কৃতি দূর হবে। শাসক যেন সমাজের কাউকেই দাস মনে না করে। এমন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সমাজ থেকে ভয়ের সংস্কৃতি দূর করতে হবে।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ