চট্টগ্রাম রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

আরও সাড়ে ২১ লাখ ভারতীয় ভেনামি চিংড়ির পোনা আসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ জুলাই, ২০২৪ | ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এবার আরও ২১ লাখ ৬২ হাজার ৬শ ভেনামি চিংড়ির পোনা আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গত ৬ মাসে ভারত থেকে ৭২ লাখ ৮২ হাজার ভেনামি চিংড়ির পোনা আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।

 

সম্প্রতি সাতক্ষীরার ভোমরার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডি এ এন্টারপ্রাইজকে ২১ লাখ ৬২ হাজার ৬শ ভেনামি চিংড়ির পোনা আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিরহাটের প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুহানি এক্সপোর্টের কাছ থেকে পোনাগুলো আমদানি করছে।

 

এর আগে গত মার্চ মাসে ভারত থেকে ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৪শ ভেনামি চিংড়ির পোনা আমদানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মৎস অধিদপ্তরের সুপারিশের প্রেক্ষিতে গ্রিনবায়ো টেক (বিডি) কর্পোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ওই আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৭২ লাখ ৮২ হাজার ভেনামি চিংড়ির পোনা আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।

 

উল্লেখ্য, গতবছরের ২৯ মার্চ প্রথমারের মতো বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয় সরকার। একইসঙ্গে ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়ি চাষ নির্দেশিকা ও অনুমতি দেওয়া হয়।

 

বিশ্বের বহু দেশ ভেনামি চিংড়ি চাষের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসলেও বাংলাদেশে এই চিংড়ি চাষের কোন অনুমতিই ছিল না। চিংড়ি হ্যাচারি ও বিভিন্ন চাষিদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি দুটি সংস্থাকে ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয় সরকার। তবে নানা সংকটে দীর্ঘদিন ধরে তারা চাষাবাদ শুরু করতে পারছিল না। পরে ২০২১ সালের ১ এপ্রিল হোয়াইট গোল্ড বা সাদা সোনা নামে পরিচিত ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়। অবশ্য এরপর চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলার আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষে সফল চাষি ও চিংড়ি রপ্তানিকারকরা পরে এর বাণিজ্যিক চাষের দাবি করে আসছিলেন।

 

খুলনার পাইকগাছায় পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষ করে সফল হন যশোরের এক চাষি। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ এমইউসি ফুডস থাইল্যান্ড থেকে ১০ লাখ ভেনামি জাতের পোনা আমদানি করে। ৪টি পুকুরে ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু করেন। পোনা ছাড়ার ৮০তম দিনেই এক-একেকটি চিংড়ি গড়ে ৩০ থেকে ৩২ গ্রাম ওজন হয়। যেখানে গলদা বা বাগদা বিক্রয়যোগ্য হতে সময় নেয় কমপক্ষে ১২০ দিন।

 

চাষিদের দাবি, ভেনামি চিংড়ি রোগসহনীয় এবং বৃদ্ধিও সন্তোষজনক। এতে খরচও কম। বাগদা চিংড়ি চাষে যদি ১০০ টাকা খরচ হয়, তাহলে ভেনামি চিংড়ি চাষে মাত্র ৫০ টাকা খরচ হবে।

 

প্রসঙ্গত, বিশ্বের ৬২টি দেশে ভেনামি চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে এশিয়ার দেশ রয়েছে ১৫টি। বিশ্বে চিংড়ি বাণিজ্যের ৭৭ শতাংশ দখল করে আছে ভেনামি চিংড়ি। বাগদা চিংড়ির তুলনায় দাম কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বেশি। এশিয়ার চিংড়ি রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশে বহু বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষ নিষিদ্ধ ছিল।

 

বাংলাদেশের বাগদার চেয়ে ২০ গুণ বেশি উৎপাদন ক্ষমতার উচ্চ ফলনশীল ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ করে সফল হয়েছেন চাষিরা। অর্ধেক কম খরচে বেশি উৎপাদন হয়েছে এ জাতের চিংড়ির। এ অবস্থায় ভেনামি চাষে বিপুল সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশিষ্টরা।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট