চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

ওহুদের যুদ্ধ

৮ মে, ২০১৯ | ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

হিজরী তৃতীয় সন। শাওয়াল মাস। কুরাইশ মুশরিকরা বদরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে মদিনার দিকে অগ্রসর হয়। মদিনার প্রায় চার মাইল দূরে ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশে তাদের ছাউনি ফেলে। এখানেই সংঘটিত হয় মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত যুদ্ধটি। এ যুদ্ধের শুরু থেকেই মুসলিমদের কাছে মক্কার কুরাইশরা কোণঠাসা হতে শুরু করে। ধারাবাহিকভাবে পর্যুদস্ত হতে থাকলে কুরাইশরা দিগ্বিদিক পালাতে শুরু করে। বিজয় নিশ্চিত না হয়ে মুসলিম বাহিনী এক ভুল করে বসে। নিজেদের বিজয় হয়েছে ভেবে যুদ্ধাস্ত্র ও শত্রুশিবির লুন্ঠন করতে থাকে প্রধান সেনাদল। মূল বাহিনীর এহেন কাজ দেখে প্রতিরক্ষায় থাকা তীরন্দাজ বাহিনী এবং আব্দুল্লাহ যুবাইরের অশ্বারোহী দল হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর নির্দেশ বেমালুম ভুলে লুন্ঠনযজ্ঞে যোগ দেয়। হঠাৎ করে যুদ্ধ নতুন বাঁক নেয়, পেছন দিক হতে পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়ে মুসলিম বাহিনী। এই সুযোগ শতভাগ কাজে লাগালেন কুরাইশদের অশ্বারোহী সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ। দুর্ধর্ষ এ দূরদর্শী নেতা মুহূর্তেই যুদ্ধের গতি বুঝে ফেলেন এবং পালিয়ে যাওয়ার ভান করে পেছন দিক হতে মুসলিম শিবিরে অতর্কিত আক্রমণ শুরু করে দেন। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর শত চেষ্টা করেও খালিদকে প্রতিরোধ করতে না পেরে প্রাণ দেন। ছত্রভঙ্গ মুসলিমদের ওপর তখন পালিয়ে যাওয়া কুরাইশরা আবার নতুন করে আক্রমণ শুরু করে দেয়। দিশেহারা বাহিনীকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকেন হযরত মুহাম্মাদ (স.)।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই কাজটি করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এরই মধ্যে কুরাইশ যোদ্ধা ইবনে কামিয়া প্রবল আক্রোশে মুহাম্মাদ (স.)-কে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারে। এতে তাঁর দুটি দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ সময় দশ-বারো জন সাহাবী নবী করীম (সা:)-কে ঘিরে রেখেছিলেন। সাহাবীরা তাকে একটি পাহাড়ের ওপর গুহায় নিয়ে এলেন।
এরই মধ্যে মুসলিম বাহিনীর পতাবাহক হযরত মুসয়াব (রা.) নিহত হলে কুরাইশরা রটায় যে হযরত মুহাম্মদ (স.) যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এখানে বলা প্রয়োজন যে হযরত মুসাবের চেহারার সাথে মুহাম্মাদ (স.) এর চেহারার কিছু মিল ছিল। এ গুজবে মুসলিম বাহিনী পুরোপুরি আশাহত হয়ে পড়ে। হযরত মুহাম্মাদ (স.) নিহত হয়েছেন এবং মুসলিমরা পরাজিত হয়েছে ভেবে মহা আনন্দে কুরাইশরা যুদ্ধ ময়দান ত্যাগ করে। এ যুদ্ধে কুরাইশরা চরম পৈশাচিকতার পরিচয় দেয়। নিহত মুসলিমদের নাক ও কান ছিড়ে বীভৎসতার ন্যাক্কারজনক উদাহরণ টানে। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা হযরত হামযার হৃদপি- চিবিয়ে চূড়ান্ত পৈশাচিকতা প্রদর্শন করে।
অতঃপর অন্য মুসলমানরাও জানতে পারলেন যে, নবী করীম (সা.) সুস্থ ও নিরাপদ আছেন। তাই তারা আবার দলে দলে তার কাছে একত্রিত হতে লাগলেন। কিন্তু এ সময় কি কারণে যেন কাফিরদের মনোযোগ হঠাৎ অন্যদিকে নিবদ্ধ হলো এবং নিজেদের বিজয়কে পূর্ণ পরিণতি পর্যন্ত না পৌঁছিয়েই তারা ময়দান ছেড়ে চলে যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট