চট্টগ্রাম বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

বেশি সহিংসতার শিকার নারীরা

নষ্টের মূল অনলাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ নভেম্বর, ২০২৩ | ১:৫১ অপরাহ্ণ

মাত্র লাখ টাকা যৌতুকের জন্য সাতকানিয়ার গৃহবধূ নিশা আক্তার (১৯) গলায় ফাঁস আত্মহত্যা করে। নিহতের পিতার দাবি- যৌতুকের জন্য তার মেয়েকে স্বামী এবং শাশুড়ি মিলে হত্যা করেছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের কামিয়ার পাড়ায়। এছাড়া চলতি মাসের ১০ তারিখ টিকটকে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ের প্রলোভনে এক পোশাক শ্রমিককে নগরীর ফ্রিপোর্ট এলাকার একটি হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করে একব্যক্তি। শুধু নিশা কিংবা পোশাক শ্রমিকই নয়, প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে এমন ঘটনা। যৌতুক, পারিবারিক কলহ, ধর্ষণ কিংবা নতুন করে যোগ হওয়া অনলাইন মাধ্যমে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষাবিদরা বলছেন, বর্তমান সময়ে অনলাইনে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। এতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় নারী। আবার বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ালেও পারিবারিক জীবনে খুব অল্প সময়ে নেমে আসে অন্ধকার।

 

চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, চলতি মাসের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলায় শুধুমাত্র যৌতুক, পারিবারিক কলহের কারণে ছয় জন নারীর আত্মহত্যার খবর জানা যায়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সম্পর্কে জড়িয়ে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আবার সম্পর্কে জড়িয়ে ধর্ষণের খবরও তিনটি।

 

গণমাধ্যম ও পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে নারীদের নিয়ে কাজ করা ঢাকার এনজিও প্রতিষ্ঠান লাইট হাউস’র এক তথ্যে দেখা যায়, সারাদেশে পাঁচ বছর আগের তুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাসে গড়ে ৩৫০টি মামলা বেড়েছে। এরমধ্যে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, প্রতারণা, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনলাইন প্লাটফর্ম। এছাড়া ৬৪ শতাংশই ধর্ষণের খবর ছিল। এর একটি কারণ ছিল অনলাইনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া সম্পর্ক।

 

লাইট হাউস’র নির্বাহী প্রধান মো. হারুন আর রশিদ জানান, সাধারণত নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা গুরুতর না হলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট সেন্টার ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিইউ) অনুসারে গতবছর ভুয়া আইডি, আইডি হ্যাক, ব্ল্যাকমেইলিং, মুঠোফোনে হয়রানি, আপত্তিকর কনটেন্ট বা বিষয় ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন ৮ হাজার ৭১৫ জন নারী। এটি প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।

 

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হাসিনা জাকারিয়া বেলা বলেন, দেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা থাকলেও নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না। বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে নারী নির্যাতন।

 

মানবাধিকার কর্মী জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, নারীরা এখন পুরুষের পাশাপাশি পথ চলতে শুরু করেছে। কিন্তু এ সময় এসেও পথেঘাটে, বাস-ট্রেনে এমনকি বাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলেও নারীরা ব্যাপক হারে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ধর্ষণ, হত্যাসহ নারী সহিংসতার ঘটনা নিত্যদিনের। সমাজে নারীদের প্রতিনিয়ত শারীরিক মানসিকভাবে অপদস্থ হতে হচ্ছে। এসব আইন করেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট