‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। প্রত্যাবাসন ইস্যুর সব বিষয়েই জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করা হচ্ছে। শিগগিরই স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফেরত যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের তালিকা করা হবে। প্রত্যাবাসন হবে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়। কাউকে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না।’
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিকালে কক্সবাজারের টেকনাফে ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (মিয়ানমার উইং) মাইনুল কবির এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে যাওয়ার পর বিকালে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে অংশ নেন তারা। তবে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল গণমাধ্যমে কোনও কথা বলেনি।
ব্রিফিংয়ে শরণার্থী কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা কালে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব, ভিটেমাটি ফেরতসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। আলোচনা কালে রোহিঙ্গারা রাখাইনে কোনও ক্যাম্পে নয়, নিজেদের ভিটেমাটিতেই ফেরত যেতে চান বলে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে উত্থাপন করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জানান, রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের টেকসই এবং ভলান্টারি প্রত্যাবাসন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে ১৪ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ আসে। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মিনিস্টার অং মাইউ।
মিজানুর রহমান জানান, প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। ঢাকার মিয়ানমার দূতাবাসের দুজন সদস্যও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রয়েছেন। তারা টেকনাফে ২৬ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এবার ২৮০ রোহিঙ্গা পরিবারের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।
মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি মূলত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের মূল আবাস মিয়ানমারের রাখাইনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং স্বদেশে ফেরত গেলে তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে দীর্ঘ বর্ণনা দেন।
আলোচনাকালে নাগরিকত্ব, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা। এ সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের দাবি পূরণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন শরণার্থী কমিশনার। এতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে উল্লেখ করে শরণার্থী কমিশনার বলেন, ‘স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহীদের তালিকা করেই রাখাইনে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
এর আগে গত ৫ মে রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইনে মংডু শহরের আশেপাশে পরিদর্শন করে এসেছে। পরিদর্শন করে আসা রোহিঙ্গা নেতারা তখন জানিয়েছিলেন, রাখাইনে এখনও প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা এসেছেন। তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের দাবি, নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন।
এর আগে, ১৫ মার্চ মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিল। সে সময় প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ফিরে যায় দলটি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের রাখাইনে ফেরত নিতে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষর করলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি। এই কমিটি দুটি সভা করলেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমার ফেরত যায়নি।
পূর্বকোণ/জেইউ