চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

‘বিদ্যানন্দ’র চলমান অভিযোগ নিয়ে যা বললেন কিশোর কুমার

১৮ এপ্রিল, ২০২৩ | ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় দিয়ে তৈরি অলংকারের ছবিসহ ‘মজিদ চাচা’ ও গরুর ছবি নিয়ে সমালোচনার ঝড় চলছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে নিয়ে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়েও কেউ কেউ অভিযোগ কিংবা সমালোচনা করছেন।

এসব সমালোচনা নিয়ে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস নিজের বক্তব্য দিয়েছেন।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক-এ বিদ্যানন্দের বিরুদ্ধে ওঠা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কিশোর কুমার দাস। পাঠকদের জন্য ফেসবুকের স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে দেয়া হল-

১. পাহাড়ের জমির মালিকানা প্রজেক্ট (শতভাগ আদিবাসী অনাথ শিশুর জন্য এতিমখানা) শেষে মূল মালিকের কাছে ফিরে যাবে। প্রথম ছবিতে সে চুক্তিপত্রে শর্তে দেখতে পাবেন।
২. কক্সবাজারের রামুর জমিটি নগদ অর্থে তখনকার বাজার মুল্যে কেনা। যদি জমি বিক্রেতা আজও সে জমি ফেরত চান, তবে বিক্রিত মুল্য পরিশোধ করে (ডিপ্রিশিয়েশন এডজাস্ট করে) জমিটি ফেরত নিতে পারবেন। আমরা এটা নিয়ে বিক্রেতার সাথে কথা বললে, তিনি ফেরত নিতে রাজি হন নি। এই নিয়ে তার পরিবারের একজন মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে, যেটাকে পরিবারের কর্তা এড়িয়ে যেতে বলেছিলেন। দ্বিতীয় ছবিতে জমির দামের রেকর্ড পাবেন।
৩. বিদ্যানন্দের জমিগুলোর মালিকানা বিদ্যানন্দের, আমার নামে নয়। বিদ্যানন্দের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সাইন করতে পারে। তৃতীয় ছবিতে পাবেন।
৪. আমরা সব দলের মানুষকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছি। বিএনপি’র আমির খসরু সাহেবকে আমন্ত্রণ জানানোর ছবি দেয়া হয়েছে চতুর্থতে।
৫. বিদ্যানন্দের ব্যাংক একাউণ্টের টাকা একাধিক স্বাক্ষরে উঠে, এবং দেশে না থাকার জন্য আমার সাইন ব্যবহার হয় না।
৬. ফেসবুকের এক লাইভে শিখা নামে একজনকে আমার বোন দেখানো হয়েছে। শিখার পুরো নাম হচ্ছে সুলতানা জান্নাত। ধর্মপ্রাণ মুসলিম এই মেয়েটি বিদ্যানন্দের আমার প্রিয় এক স্বেচ্ছাসেবী ছিলো, তবে রক্তের সম্পর্ক নেই।
৭. রূপক নাম ব্যবহার হয় পেজের পোস্টে। মজিদ চাচা নয়, আপনি সুলতান, রহিমা কিংবা কলিম চাচা নামেও অনেক পোষ্ট পাবেন। গ্রামের নামগুলো সাধারণত কমন হয় এবং বিখ্যাত মানুষের নামেই থাকে। সে নামে একবার লিখে বিপদে পড়েছিলাম (মানহানী মামলার ঝুঁকি), কারণ একই নামে একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন।
৮. একই ইভেন্টের ছবি একাধিক পোস্টে দেয়া হয়। যেমন – গরু কেনা হয়েছে, গরু প্রসেস করা হয়েছে, রান্না হচ্ছে, আহার করছেন ইত্যাদি। বিদ্যানন্দের কাছে দাতব্য কাজটি অভিযাত্রার মতো। শুধু লক্ষ্যটা মূখ্য নয়, যাত্রাপথে আপনাদের সঙ্গী করতে চাই।
৯. সীমিত রিসোর্সে প্রতিষ্ঠান চলে। এখানে খুব পেশাদার আপডেট দেয়া সম্ভব হয় না। অনাথালয়ের দাতাদের কিছু অনুরোধ রাখতে পারি নি বলে ক্ষমা চাচ্ছি। এটা অল্প সময়েও সমাধান আমরা দেখছি না অল্প রিসোর্সের জন্য। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের স্ট্যান্ডার্ডে আমরা হয়তো যেতে পারবো। কিন্তু তাঁদের মতো বিশাল এডমিন খরচের বোঝাটা আমরা নিতে চাই নি।
১০. ৯৫% বিশেষ খাবার আয়োজন স্পেসিফিক দাতার স্পন্সরে হয়। আয়োজনের আগেই শিডিউল জানানো হয় যেন তিনি উপস্থিত থাকেন। আয়োজন শেষে খাবার ছবি প্রমাণসহ পাঠানো হয়। আর যদি তাতেও বিশ্বাসযোগ্য না হয় তবে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিবো।
১১. বিদ্যানন্দ মূলত নিজেদের ফেসবুক পেজগুলোতে অনুপ্রেরণার পোষ্ট শেয়ার (৩০,০০০ এর কাছাকাছি হবে) করে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের শেয়ার করা হয়ে থাকে। ৯৯.৯% শুদ্ধ হলেও কিছু অনুসারী ০.১% ভুলকে বড় করে দেখতে চাচ্ছেন। আমরা সে ভুলটাকেও শুদ্ধ করতে চাই।
বিদ্যানন্দের দশ বছরের ইতিহাসে কয়েকজন কর্মীকে বহিস্কার করা হয়েছে নৈতিক স্থলনের জন্য। তরুণ বয়সে তাঁদের ক্যারিয়ার নষ্ট না করতে আমরা লিগ্যাল একশনে যাই না। এই মানুষগুলো কিছু বছর পর উল্টা ব্লেইম দিতে থাকে নিজের চলে যাওয়াটা জাস্টিফাই করতে। এতেও বেশ ক্ষতিতে পড়ে আমাদের ইমেজ।
পরিশেষে বলি, ভুল থাকবেই বিদ্যানন্দের অনেক পদক্ষেপে। শুধু বলতে পারি, কাজটা শুদ্ধভাবেই করার চেষ্টা করি। ভবিষ্যতে শুদ্ধ করার সুযোগ না পেলেও আফসোস থাকবে না। মানুষের প্রতিষ্ঠান, মানুষই ভাঙ্গবে, মানুষই গড়বে।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট