চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

দুদক কর্মকর্তাকে অপসারণে নজিরবিহীন প্রতিবাদ, কী বলছেন শরীফ উদ্দিন?

অনলাইন ডেস্ক

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১১:১৬ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া সহ দুর্নীতির বিভিন্ন ঘটনা তদন্ত করে আলোচনায় এসেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের যে কর্মকর্তা, তাকে চাকরি থেকে অপসারণের প্রতিবাদ জানিয়ে তার সহকর্মীরা বুধবার ঢাকায় দুদক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

এই প্রথম দুদক কর্মকর্তারা কোন ঘটনায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা এটাকে নজিরবিহীন বলে বর্ননা করেন।

চাকরিচ্যুত হওয়া দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন দুদক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন।

তিনি বলেছেন, বড় বড় কয়েকটি দুর্নীতির মামলার তদন্ত করে তিনি অনেক আমলা ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিলেন।

সেজন্য তিনি প্রভাবশালী মহলের রোষানলের শিকার হয়েছেন।তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে দুদকের পক্ষ থেকে।

এদিকে দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি এক বিবৃতিতে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তার অভিযোগের তদন্ত চেয়েছে।

দুদকের কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণের এই ঘটনা এবং এর প্রতিক্রিয়ায় দুদক কর্মকর্তাদের মানববন্ধন কর্মসূচি-এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক এবং অভূতপূর্ব বলে বর্ণনা করেছে টিআইবি।

কেন প্রতিবাদ
দুদকের কর্মকর্তারা তাদের একজন সহকর্মী শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সচিবের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এরপর তারা ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন।

তারা অভিযোগ করেন, দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে তারা নানা হয়রানির শিকার হন। কিন্তু দুদক তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে একজন কর্মকর্তাকে অপসারণ করে উদাহরণ সৃষ্টি করলো।

চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা যা বললেন
যাকে অপসারণ করা হয়েছে, দুদকের সেই উপ সহকারি পরিচালক শরীফ উদ্দিন অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী চক্র তাকে প্রাণনাশের এবং চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়েছিল। এর দু’সপ্তাহ পরই তিনি চাকরি হারালেন।

শরীফ উদ্দিন অভিযোগ করেন: “কক্সবাজারে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার যে অধিগ্রহণ প্রকল্প, সেই প্রকল্পে অধিগ্রহণের দুর্নীতি নিয়ে আমি সরকারের স্থানীয় প্রশাসন লেভেলের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতা-এমন ১৫৫জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জশিটে সুপারিশ করেছি। এ কারণে একটি প্রভাবশালী চক্রের রোষানলে আমি পড়েছি।

“দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট দেয়া নিয়ে আমি ২০টা মামলার সুপারিশ করেছি। যেখানে দুই থেকে তিন লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধভাবে বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করেছে। এগুলো নিয়ে আমি মামলার সুপারিশ করেছিলাম,” বলেন শরীফ উদ্দিন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “কর্ণফুলীতে পেট্রোবাংলার বেশ কিছু অনিয়মের আমি তদন্ত করেছিলাম। এবং মামলাও করেছিলাম।

“কিন্তু দুদক এর কোনটার মূল্যায়ন না করে আমাকে চাকরি থেকে অপসারণ করলো। এরআগে আমাকে পদোন্নতি থেকেও বঞ্চিত করেছে,” অভিযোগ করেন মি. শরীফ উদ্দিন।

তিনি তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের খুলশি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন গত ৩০ জানুয়ারি।

তিনি তার সাত বছরের চাকরি জীবনের সাড়ে তিন বছর চট্টগ্রামে কাজ করেছেন।

তিনি অভিযোগ করেছেন, কক্সবাজারে জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের দুর্নীতির মামলা এবং রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ঘটনা তদন্ত করে প্রভাবশালীদের অভিযুক্ত করার কারণে তাকে পাটুয়াখালীতে বদলি করা হয়েছিল।

দুদক কী বলছে
তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন দুদকের একজন কমিশনার ড: মোজাম্মেল হক খান।

তিনি বলেছেন, শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় তাকে কর্তৃপক্ষ অপসারণে বাধ্য হয়েছে।

“তার (শরীফ উদ্দিন) বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ আছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। দীর্ঘদিন সেই অভিযোগ পর্যালোচনা করা হয়েছে,” বলেন দুদকের কমিশনার ড: খান।

দুদক কমিশনার ড: মোজাম্মেল হক খান আরও বলেন, “তার (শরীফ উদ্দিন) বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেটা আইনসিদ্ধ। দুদক তার আইনের বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

“কাজেই কেউ যদি বলে যে তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে, সেকারণে অপসারণ করা হয়েছে- এসব অভিযোগের সাথে দুদকের সিদ্ধান্তের কোন সম্পর্ক নেই,” বলেন ড: মোজাম্মেল হক খান।

দুদকের সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন, শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে তিনটি বিভাগীয় মামলা ছিল। সেসব মামলায় দুদক বিধি অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কিন্তু চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী ছিল, সে ব্যাপারে দুদকের পক্ষ কিছু বলা হয়নি।

তদন্ত প্রয়োজন
দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের একজন সংগঠক সুলতানা কামাল বলেছেন, চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা যে অভিযোগ তুলেছেন, সে ব্যাপারে তদন্ত করা উচিত।

“যে অভিযোগ উঠেছে, তৃতীয় পক্ষ দিয়ে তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।”

তিনি আরও বলেন, যারা ভাল কাজ করে, তারা যদি শাস্তির মুখোমুখি হয়, তাহলে সেটা প্রকারান্তরে দুর্নীতিতে জড়িতদের উৎসাহিত করবে।

তবে কর্মকর্তাকে অপসারণের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী চক্রের হাত থাকাসহ যে সব অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করার প্রশ্নে দুদক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন জবাব মেলেনি। সূত্র: বিবিসি

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট