চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব

সনেট দেব

৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

“শিল্প সাহিত্য বিপ্লবকে দিক ভাষা / বিপ্লব শিল্প সাহিত্যকে দেবে মুক্তি” এই স্লোগানকে চূড়ান্ত করে নান্দীমুখ যাত্রা পথের সূচনা করে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ নভেম্বর এক ঝাঁক তরুণের কণ্ঠে দৃঢ় প্রত্যয় ও অঙ্গীকার ধারণ করে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করল মঞ্চের প্রাদপ্রদীপের আলোয়। বাংলাদেশের অন্যতম নাট্য-সংগঠন নান্দীমুখ এর পথচলার ৩০বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম আয়োজন ‘নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৯’ গত ১৪ থেকে ২২ নভেম্বর, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের উৎসবে ভারত, ইরান, স্পেন ও বাংলাদেশের আটটি নাট্যদল তাদের প্রশংসিত প্রযোজনা সমূহ মঞ্চস্থ করেন। এছাড়া বাংলা রাজনৈতিক থিয়েটার ও উৎপল দত্ত শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নান্দীমুখ সারাদেশের চারজন প্রতিশ্রুতিবান নাট্য নির্দেশককে নান্দীমুখ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের অন্যতম সক্রিয় নাট্য সংগঠন নান্দীমুখ’র প্রতিষ্ঠার ত্রিশ বছর উপলক্ষে গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শুভ উদ্বোধন হয় “নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৯”। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ¦ালনের মধ্য দিয়ে নান্দীমুখ আয়োজিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব এর শুভ সূচনা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নয় দিন ব্যাপী নাট্যোৎসব’র শুভ উদ্বোধন করেন বিশ্ব আইটিআই এর সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। নান্দীমুখ দল প্রধান অভিজিৎ সেনগুপ্ত’র সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী, বিশিষ্ট নাট্য গবেষক আশীষ গোস্বামী ও ভারতের নাট্য পত্রিকা ভাবনা থিয়েটার সম্পাদক অভিক ভট্টাচার্য। প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক রামেন্দু মজুমদার উৎসব উদ্বোধন করে বলেন, ‘এ ধরনের আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এতে একদিকে নতুন দর্শক তৈরি হয়, তেমনি তা নাট্য চর্চাকে সমৃদ্ধ হয়। নাটক বা নাটকের দল বাছাইয়ে মানটা দেখা উচিত। অর্থাৎ কোন নাটকের দল বা নাটক এদেশে নিয়ে আসা বা অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা জরুরি। নাট্য চর্চায় জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। দর্শকের গ্রহণযোগ্যতার উপর জোর দিতে হবে। নিয়মিত ও মানসম্মত নাট্য চর্চায় নাট্য সংশ্লিষ্টদের অগ্রণী অবদান রাখতে হবে। অন্যান্য বক্তারা বলেন নান্দীমুখ’র এই সাহসী উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’ যা নিয়মিত করে যাচ্ছে নান্দীমুখ। এটি বাংলা নাট্যচর্চায় নতুন মেল বন্ধন তৈরি করবে। সংগীত শিল্পী শ্রেয়সী রায়’র নেতৃত্বে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করে অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন। প্রমা অবন্তী’র পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ওড়িশি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় অসীম দাস এর রচনা ও নির্দেশনায় নান্দীমুখ প্রযোজিত নাটক ‘আমার আমি’।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ১৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় রয়েছে সেমিনার, বাংলা রাজনৈতিক থিয়েটার ও উৎপল দত্ত, প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাট্য গবেষক আশীষ গোস্বামী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কলকাতার ভাবনা থিয়েটার পত্রিকার সম্পাদক অভিক ভট্টাচার্য, ড. কুন্তল বড়–য়া; ১৬ নভেম্বর তির্যক নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করেন রোমিও জুলিয়েট, ১৭ নভেম্বর ভারতের আমতা পরিচয় মঞ্চস্থ করেন সাবিত্রীবাঈ ফুলে, ১৮ নভেম্বর ভারতের প্রান্তিক মঞ্চস্থ করেন সবার প্রতি, ১৯ নভেম্বর স্পেন এর মুন প্যালেস মঞ্চস্থ করেন ডিলেমাস উইথ মাই ফ্লামেনকো টেইলকোট, ২০ নভেম্বর ভারতের চাকদহ নাট্যজন মঞ্চস্থ করেন বিল্বমঙ্গল, ২১ নভেম্বর ইরানের ক্রেজি বডি গ্রুপ মঞ্চস্থ করেন মিস্টিরিয়াস গিফ্ট।
অনুষ্ঠানের শেষ দিনে গত ২২ নভেম্বর মুক্তমঞ্চে ছিল নান্দীমুখ সম্মাননা ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশবরেণ্য নাট্যজন আতাউর রহমান ও বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন ম. হামিদ। এবারের নান্দীমুখ সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন- অসীম দাশ, ত্রপা মজুমদার, স্বপন ভট্টাচার্য ও মো. মোসলেম উদ্দিন সিকদার। সম্মাননা অনুষ্ঠান শেষে মিলনায়তনে ভারেতের জ্যোতি ডোগরা পরিবেশন করে নাটক ‘ব্লাক হোল’। নাটক শেষে অতিথিরা ফানুস উড়িয়ে এই আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট