চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

মীনা কার্টুনের অমর স্রষ্টা রাম মোহন

রুবী আকতার

২২ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৫ পূর্বাহ্ণ

মীনা (ইংরেজি: গববহধ) দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত একটি জনপ্রিয় টিভি কার্টুন ধারাবাহিক ও কমিক বই। এই কার্টুন ধারাবাহিকের মূল চরিত্র বাংলা ভাষায় নির্মিত কার্টুনগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র। দক্ষিণ এশীয়ার দেশগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক একটি অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ইউনিসেফের সহায়তায় এই কার্টুন ধারাবাহিকটি নির্মিত হয়ে থাকে। যে-সকল সচেতনতা মীনা কার্টুনের মাধ্যমে তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে তার মধ্যে আছে, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ ও ব্যবহারে উৎসাহিত করা, মেয়েদের স্কুলে পাঠানো, কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে থেকে স্কুলকে বেশি গুরুত্ব দেয়া, যৌতুক বন্ধ করা, ছেলে-মেয়ে সমান পুষ্টি ও সুযোগ-সুবিধার দাবিদার, প্রয়োজনীয় ও সমঅধিকার পেলে মেয়েরাও অনেক কিছু হতে পারে তা বোঝানো, শহরের বাসায় বাসায় কাজে সাহায্য করে এমন মেয়েদের প্রতি সুবিচার ও তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

মীনা কার্টুন কম বেশি সবার পরিচিত। তোমরা হয়তো জানো না এ কার্টুনের রূপদানকারী হল রাম মোহন । তিনি আর বেঁচে নেই। কার্টুনিস্ট রাম মোহন গত ১০-১০-২০১৯ ইং বৃহস্পতিবার মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
১৯৯০ সালে মেয়েদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মীনা কার্টুন প্রচারের উদ্যোগ নেয় ইউনিসেফ। এরপর কার্টুনিস্ট রাম মোহনের রঙ-তুলিতে মীনা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। রাম মোহন ইউনিসেফের সহযোগিতায় মীনা কার্টুনের প্রথম অ্যানিমেশন করেন ১৯৯১ সালে। মোট ১৬ টি এপিসোড তৈরি করেন যার কার্যকাল ছিল ২০০১ সাল পর্যন্ত।
বাংলাদেশের বিটিভিতে প্রথম মিনা কার্টুন প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে আরো বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। বর্তমানেও বিটিভি-সহ আরো অনেকগুলো চ্যানেলে এই জনপ্রিয় মীনা কার্টুন প্রচার হচ্ছে।

তথ্যসূত্র অনুসারে যদিও কার্টুনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল মেয়েদের অধিকার নিশ্চিত করা,কিন্তু মেয়েদের অধিকার নিশ্চিত এর পাশাপাশি এই কার্টুনটি আরো অনেকগুলো নীতি শিক্ষা দেয় বাচ্চাদের। যেমন কিভাবে বাচ্চাদের সাথে আচরণ করতে হয়, তাদের যত্ন নিতে হয়, কিভাবে সবার সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করতে হয়, অস্বাভাবিক বাচ্চাদের সাথে কিভাবে মিলেমিশে থাকা যায়, কিভাবে বড়দের সম্মান করতে হয়,কিভাবে নম্র-ভদ্রভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে পরিবারের সবার সাথে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ভাবে থাকতে হয়, স্বাস্থ্য সচেতনতা, শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ ও মনোভাব, কুসংস্কার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার উপায় সহ আরো নানান ধরনেরই শিক্ষা পাওয়া যায় এ কার্টুনে।

এই মীনা কার্টুন থেকে আমরা সেই ছোট্ট বেলা থেকেই অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। সম্পূর্ণ শিক্ষামূলক একটি কার্টুন।
রামমোহনকে বলা হয় ‘ফাদার অফ ইন্ডিয়ান অ্যানিমেশন’। ইন্ডিয়ার অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা একরকম তাঁর হাত ধরেই শুরু। বাংলাদেশের শিশুরা তাঁকে চেনেন তাঁর সৃষ্টি মীনা চরিত্রটি দিয়ে।

চলচ্চিত্র পরিচালক বৈভব মোর লিখেছেন, ‘আজকের দিনটি অ্যানিমেশন শিল্পের জন্য দুঃখের দিন। আশ্চর্য প্রতিভাধর মানুষটি ছিলেন অত্যন্ত নম্রভদ্র।’ পরিচালক স্বরূপ দেব শোক জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে ব্যক্তি হিসেবে তাঁর আশীর্বাদ পেয়েছি। তাঁর কর্ম আমাদের মাঝে আজীবন টিকে থাকবে।’

সিরিজগুলো পরিচালনা করেছিলেন রাম মোহন নিজেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মেয়েশিশুদের যেসব সমস্যা রয়েছে, তার সুন্দর সমাধান এই কার্টুন সিরিজগুলোর মাধ্যমে অত্যন্ত সহজভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আপনার বাসায় বাচ্চাদের মিথ্যাচারর ভর্তি ডোরেমন,শিনচ্যান না দেখিয়ে মীনা কার্টুন দেখান। যে কয়টা এপিসোডই আছে সে কয়টাই দেখান। টিভিতে না পারলেও ইউটিউব এ দেখান। অন্তত খারাপ কিছু শিখবে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট