স্বনামধন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানী, জনপ্রিয় লেখক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী আর নেই। প্রায় আট বছর মাল্টিপল মায়েলোমা নামক রক্তের ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে অবশেষে হার মানতে হয়েছে শুভাগত চৌধুরীকে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার ভাই অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শুভাগত চৌধুরী ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সকালে বাসায় অচেতন হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. গুলজার হোসেন জানান, ডা. শুভাগত চৌধুরী বুধবার সকালে মৃত্যুবরণ করেছেন। সকালে বিএসএমএমইউয়ে এডমিট হওয়ার কথা ছিল। গতকালই আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন বিএসএমএমইউয়ে আসবেন এবং ভর্তি হবেন৷ যে কারণে গতকালই আমি ভর্তির সব কাগজপত্র রেডি করে রেখেছিলাম।
তিনি বলেন, শুভাগত চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে মাল্টিপল মায়েলোমা নামক রক্তের ক্যানসারে ভুগছিলেন। সর্বশেষ তিনি আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রিটমেন্টে ছিলেন। তিনি একজন ক্যানসার যোদ্ধা হিসেবে প্রায় আশি বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ডা. শুভাগত চৌধুরীর জন্ম সিলেটে ১৯৪৭ সালে। লেখাপড়া শুরু সিলেটের শিশু স্কুলে; এরপর রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতন পাঠভবনে, আবার দেশে স্কুল-কলেজে ও মেডিকেল কলেজে এবং পরে দেশ-বিদেশের নানা উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০৪ সালে। দীর্ঘ ৩৫ বছর সরকারি চাকরিজীবনে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেছেন। অধ্যক্ষও ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে।
এছাড়াও চিকিৎসা বিষয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকা। তার গবেষণার বিষয় প্রাণ রসায়ন, পুষ্টি ও চিকিৎসা শিক্ষা পদ্ধতি। তিনি নিউইয়র্ক সায়েন্স একাডেমির নির্বাচিত সদস্য।
দেশি-বিদেশি পত্র-পত্রিকা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান জার্নালে তিনি অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের লেখক হিসেবে তিনি সুপরিচিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকও বাংলায় অনুবাদ করেছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩৮টি। চিকিৎসাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেরে বাংলা জাতীয় পুরস্কার-২০০৯ লাভ করেন তিনি।
পূর্বকোণ/মাহমুদ