চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

অটিজম কেন বেড়ে চলেছে বিশ্বব্যাপী?

অনলাইন ডেস্ক

১৪ নভেম্বর, ২০২২ | ১০:১০ অপরাহ্ণ

অটিজম নিয়ে আমাদের ভাবনার শেষ নেই। একসময় ভাবা হতো—অটিজম এক ধরনের বিরল ডিসঅর্ডার বা বৈকল্য। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে গবেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী অটিজমের শিশুদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন গবেষণা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, আলাপ-আলোচনায়ও অটিজমের প্রকোপ ও ব্যাপক বিস্তারের কথা শোনা যাচ্ছে।

আরো লক্ষণীয়—এই বিস্তার কোনো দেশ, জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠী কিংবা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অন্য এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অটিজম এক ধরনের সংকট বা ক্রাইসিস এবং অটিজমের কোনো দেশ, সীমানা বা বর্ডার নেই, জাতীয়তা নেই, জাতিগত বা সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে একে দেখার কোনো উপায়ও নেই; বিশ্বব্যাপীই সমান। অথচ ১৯৪৩ সাল পর্যন্তও গোটা বিশ্বেই অটিজম নামটি ছিল অজানা। অটিজমের আবিষ্কারকর্তা অস্ট্রীয়-আমেরিকান মনোচিকিৎসক ড. লিও ক্যানার নিজেও বলেছিলেন, অটিজম বিরল ধরনের এক প্রকারের বৈকল্য। নিউরো ডেভেলপমেন্টাল শ্রেণির ডিসঅর্ডার হিসেবে অটিজম আসলেই একটি ঘটনা বটে!

১৯৯০ সালের গোড়ার দিকেও বিশ্বে অটিজস সনাক্তের হার নগণ্য পর্যায়ে ছিল। ‘দ্য সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন-ইউএসএ’-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা মতে, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অটিজমের শিকারদের সংখ্যা প্রতি ৬৮ জনে এক জন। জনস্বাস্থ্যের জন্য অটিজমকে এ দেশে প্রধান একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনও বলা হচ্ছে, বেশ কিছু মারাত্মক এবং জটিল রোগের চেয়েও অটিজম ভীতিজনক পর্যায়ে রয়েছে। এ দেশে ভুক্তভোগী, গবেষক, বিজ্ঞানী, লেখক এবং সচেতন মানুষসহ সবাইকে বিষয়টি খুব বেশ ভাবিয়েও তুলেছে। অনেকের অনুমান, অটিজম নির্ণয় চেষ্টা বেড়েছে বলে এই বৃদ্ধির হার দেখতে হচ্ছে। বিষয়টির সত্যতা যে নেই তা নয়; কেননা অটিজম আগেও ছিল। বাংলাদেশেও অটিজমের শিশু-কিশোরদের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য অটিজমের নানা দিক নিয়ে আমাদের চিন্তার সময় এসে গেছে। তবে সরকার অটিজম এবং প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে বেশ সচেতন বলে এই কাজটি অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি দেশের বর্তমান সরকারপ্রধান নিজেই অটিজম ও প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।

আধিক্য বিবেচনায় বেশ কয়েক প্রকারের অটিজমের কথাও জানা গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, আমরা পাঁচ ধরনের অটিজমের কথা জেনেছি। গবেষণায় কোনটি প্রধান এবং কোনটি বিরল শ্রেণির—সেটিও নির্ণীত। যেমন, অ্যাস্পারগারস সিনড্রোম, পারভেসিব ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার, অটিস্টিক ডিসঅর্ডার প্রধান এবং রেটস সিনড্রোম ও চাইল্ডহোড ডিসইন্টিগ্রেটিভ ডিসঅর্ডার বিরল শ্রেণির। তবে উল্লেখ্য, প্রকার ভেদে এদের এতদিন নানা প্রকারে পরিচিত করা হলেও ২০১৩ সালের মে মাসের পর অটিজমের সবকটি প্রকারকে একটি স্পেকট্রামের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখন থেকে অটিজমের শিকার প্রত্যেকেই ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার, সংক্ষেপে ‘এএসডি’ নামে পরিচিত। এমনকি তীব্রতা মাত্রায় গুরুতর, মাঝারি এবং মৃদু যে ভাগেই পড়ুক, উপসর্গের ধরন যে রকমেরই হোক—সকলেই ‘এএসডি’-এর আওতায় পড়বে।

আসলে ‘অটিজম স্পেকট্রাম’ হলো শিশুর বিকাশ এবং ডিসঅর্ডারজনিত অবস্থা বর্ণনা করে এমন একটি সেট। এই স্পেকট্রামের আওতায় সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, মৌখিক বা অ-মৌখিক কমিউনিকেশন, পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ, সীমিত ক্রিয়াকলাপ এবং শখ প্রভৃতির ক্ষেত্রে ডেভেলপমেন্টাল বৈকল্যকে চিহ্নিত করে এমন বিস্তৃত এক গোষ্ঠীকে উপস্থাপন করে। অটিজমের প্রকোপের কথা উল্লেখ করেছি। এই প্রকোপ বিবেচনায় বিজ্ঞানী-গবেষকদের মধ্যে বিশ্বাস—অটিজম নিয়ে গবেষণায় কোনো দেশ, সীমানা নেই। অটিজমের কারণ, প্রতিরোধ, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে অনুসন্ধান হতে পারে অটিজম সমন্ধে জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এসব গবেষণায় আমরা বাংলাদেশিরা ততটা অগ্রগামী নই। তবে কিছু কিছু গবেষণায় জানা গেছে, বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অটিজমের শিকার শিশু-কিশোরদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১ শতাংশ শিশু ও ব্যক্তি অটিজমের বৈশিষ্ট্য বহন করছে বলে জানা গেছে এক সমীক্ষা থেকে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ মতে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় রাজধানী শহর ঢাকায় অটিজমের শিকার শিশুর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। এজন্য দেশে অটিজমের শতকরা হার কত সে বিষয়টিও জানা দরকার। এই হার যদি বিশ্বের অন্য দেশের সমপর্যায়ে হয় তাহলে আমাদের দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি হবে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে বাড়ছে বয়স্ক অটিজমের শিকারদের সংখ্যা। অটিজম বিষয়ক গবেষক এবং অভিজ্ঞদের সন্দেহ—অটিজমের বয়স্কদের এই সংখ্যা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে না পৌঁছলেও অনেকটাই উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। এসব বয়স্কদের যত্নের বিষয়েও চিন্তা করার সময় এসে গেছে। তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক

লেখক: সাবেক অধ্যাপক, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন