চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

ডেঙ্গু জ্বরে আধুনিক চিকিৎসা

অনলাইন ডেস্ক

১২ অক্টোবর, ২০২২ | ১১:৪৬ অপরাহ্ণ

মৌসুমি জ্বর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সমান্তরালে চলে এবং অভিজ্ঞতা বলে জুলাই-অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু সবচেয়ে বেশি হয়। খবর- যুগান্তর

চেনার উপায়: জুলাই মাস থেকে আমাদের দেশে স্বল্প দিনের জ্বর হলে ডেঙ্গু ভাবাতে কোনো দোষ নেই। সাধারণত ৭-৮ দিন থাকে। প্রথম দিকে ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করলেও মাথাব্যথা জ্বরই আসল উপসর্গ। যে কোনো জ্বরের মতো ক্ষুধামন্দা, বমি বমিভাব, নাক ঝরা, চোখ লালচে হতে পারে তবে বিশেষত্ব হল ব্যথা। সারা শরীরে ব্যথা হয় এত বেশি যে অনেকে একে ব্রেক বোন ডিজিজ বলে। চোখ নাড়ালে অনুভূত ব্যথা একটা বৈশিষ্ট্য। কফ কাশি, গলায় ব্যথা থাকতে পারে তবে বিশেষত্ব নয়। দুর্বল লাগা, গ্লান্ড ফোলা থাকে কারও কারও তবে কিঞ্চিৎ।

জ্বর: অন্য জ্বরের মতো তবে বিশেষত্ব হল দুই দফার; ৩-৪ দিন পর ২ দিন বিরতি দিয়ে আবার দু’দিন জ্বর। জ্বরের সঙ্গে বা পাল্স রেট কমাও কিন্তু বিশেষত্ব; অনেকের বেশ কিছুদিন অবসাদ থাকে।

র‌্যাশ: যেটা দেখে নিশ্চিত বলা যায় সেটা হল কনফ্লুয়েন্ট কনভাল্সেন্ট র‌্যাশ যেটা উঠে ৬ষ্ঠ দিনে। আগে শরীরে হয় পরে বাহু অন্য জায়গায় ছড়ায়। হাতের পায়ের তালুতে হয় না। স্কারলেট ফিভার (২য় দিন) হামের মতো (৪র্থ দিন) র‌্যাশও হতে পারে।

রক্তক্ষরণ: জ্বর, র‌্যাশ, রক্তক্ষরণ ডেঙ্গুর বিশেষত্ব। যে কোনো জায়গা (নাক, চোখ, চামড়া, খাদ্যনালি মূত্রনালি) থেকে হতে পারে। সবচেয়ে বেশি হয় মেয়েদের; মাসিক হয়ে গেলেও দ্বিতীয়বার মাসিক হয়। রক্তক্ষরণ মানেই কিন্তু ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার নয় এটা মনে রাখতে হবে।

জটিলতা: ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার, ডেঙ্গু শক সিনড্রোম, রক্তনালিতে সর্বত্র রক্তক্ষরণ (ডিআইসি), সব অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি। (মাল্টি অরগান ফেইলর)।

সম্ভাব্য ডেঙ্গু ফিভার: ডেঙ্গু হয় এমন এলাকায় থাকলে এবং জ্বর হলে তার সঙ্গে যদি যে কোনো দুটি যেমন বমি/বমি ভাব, র‌্যাশ, ব্যথা-বেদনা, পজেটিভ টুরনিকেট টেস্ট, লিউকপেনিয়া, ওয়ারনিং সাইন।

এদের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরি টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। চিকিৎসা হল পর্যবেক্ষণে রাখা, ওয়ার্নিং সাইন সম্পর্কে সতর্ক থাকা। অন্য কোনো বড় অসুখ বা প্রেগন্যান্সি না থাকলে বা ভর্তির দরকার নেই। আগে এরা ছিল গ্রেড-১ ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার।

সতর্ক সংকেতসহ ডেঙ্গু: ডেঙ্গুর সম্ভাবনাসহ যদি যে কোনো একটি থাকে যেমন পেটের ব্যথা, পেট শক্ত হওয়া, অনবরত বমি, প্লুরাল ইফুশন/এসাইটিস, রক্তক্ষরণ, লিভার এক ইঞ্চির বেশি বড়, হিমাটক্রিট দ্রুত বাড়া বা প্লাটিলেট দ্রুত কমা। এটা আসলে গ্রেড-২ ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা লাগবে; ওপিডি বা ইনডোরে নিতে হবে, স্যালাইন দিতে হবে, ভর্তির সুপারিশ করতে হবে।

মারাত্মক ডেঙ্গু: মারাত্মক প্লাজমা লিকেজের ফলে শক (ডেঙ্গু শক সিনড্রোম), প্লুরাল ইফুশন হয়ে শ্বাসকষ্ট।

মারাত্মক রক্তক্ষরণ: খাদ্যনালির রক্তক্ষরণ (হেমাটেমেসিস, মেলেনা)

মারাত্মক অরগান ইনভলভমেন্ট (atypical features)
লিভার: AST or ALT >_ 1000
স্নায়ুতন্ত্র: খিঁচুনি, জ্ঞান লোপ পাওয়া

হার্ট ও রক্তনালি: কার্ডিও মায়োপ্যাথি, হার্ট ব্লক, এরিথমিয়া

অন্যান্য: কিডনি ফেইলুর, প্যানক্রিয়াটাইটিস, এআরডিস (ফুসফুস অকেজো হওয়া), সর্বাঙ্গে রক্তক্ষরণ ও জমাট বাঁধা (ডিআইসি), মাংসপেশির ছিঁড়ে ছুটে যাওয়া (রাব্ডোমায়োলাইসিস)।

ডেঙ্গু ভাইরাল ফিভার, ক্লাসিকাল হলে সর্দিজ্বরের মতই অতীব সহজতর অসুখ। তা না হলে মারাত্মক। ওয়ার্নিং সাইন তীব্রতার উপসর্গগুলো খেয়াল রাখতে হবে অর্থাৎ সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা: সব জ্বরের মতই তিন বা চার দিনের দিন টিসি, ডিসি, ইএসআর, প্লাটিলেট কাউন্ট করতে হবে। টিসি (টোটাল কাউন্ট) পাঁচ হাজারের নিচে কমে যাওয়া ডেঙ্গুর বিশেষত্ব। প্লাটিলেট কাউন্ট (স্বাভাবিক ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার) প্রায় সব জ্বরেই কমে; এক লাখের চেয়ে কম হলে সেটা ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার; সেক্ষেত্রে সতর্কতা নিতে হবে ও ফলোআপ করতে হবে। এসজিপি, এসজিওটি লিভার ক্ষতের আলামত দেয়, ডেঙ্গুতে ওটি বেশি বাড়ে। এনএস-১ এ্যান্টিজেন ডেঙ্গুর পরীক্ষা তবে এর চেয়ে এলাইজা বেশি নির্ভরযোগ্য। ওয়ার্নিং সাইন বা মারাত্মক কোনো উপসর্গ থাকলে অন্যান্য পরীক্ষা করতে হবে।

চিকিৎসা: জ্বর নামানোর জন্য প্যারাসিটামল এবং প্রয়োজনীয় পানি পান করতে হবে; এ দুটাই মূলত: ডেঙ্গুর চিকিৎসা। ডেঙ্গু ভীতি ওভারকাম করাও জরুরি।

লেখক: মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন