চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

চমেক হাসপাতাল : বিতর্কিত ‘টেন পার্সেন্ট’ বন্ধ

১০ জানুয়ারি, ২০২২ | ১:৩৬ অপরাহ্ণ

ইমাম হোসাইন রাজু 

 

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন তো দূরের কথা, গঠিত কমিটিরও কোন পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত কিংবা আলোচনাই হয়নি। তবুও ইউজার ফি নামে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ অর্থ আদায় করে আসছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা, চিকিৎসকসহ খোদ স্বাস্থ্য বিভাগেই সৃষ্টি হয় নানা বিতর্কের। শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত সেই ‘টেন পার্সেন্ট’ বন্ধ করে দিয়েছে বর্তমান প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সরকারি ফি’র বাইরেও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ অর্থ আদায় শুরু করা হয়। টাকা আদায়ে সরকারি রসিদের বাইরে হাসপাতালের নামে পৃথক ‘সার্ভিস চার্জ গ্রহণের রশিদ’ দিয়ে ১০ শতাংশ বেশি অর্থ আদায় করা হয়। এ কার্যক্রম ওই সময়ে শুধুমাত্র হাসপাতালে জরুরি বিভাগেই চালু করা হলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই বিতর্কের কারণেই অন্য বিভাগগুলোতে আর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ বিশেষ চার্জ আদায় চালু করা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির ৬ষ্ঠ সভায় প্যাথলজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ সরকারি ফি’র বাইরে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ অর্থ আদায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সে প্রেক্ষিতে সদ্য বিদায়ী পরিচালক এ কার্যক্রম চালু করেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় রেডিওলজিসহ বাকি বিভাগগুলোতে আলোচ্য অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া চালু করেননি স্ব স্ব বিভাগের প্রধানরা।

খবর নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ৮ মে হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির ৬ষ্ঠ সভায় ‘একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের’ পরই কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়। একই সঙ্গে বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পরিচালক, চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয় সভায়।

কিন্তু সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন দূরের কথা, গঠিত কমিটির দুই সদস্যের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সদ্য বিদায়ী হাসপাতালের পরিচালকের নির্দেশে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই খাতে যে অর্থ আদায় হতো, তা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালকের নামে ব্যক্তিগত একাউন্টে রাখা হতো। এ নিয়ে নানান বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

সভায় উপস্থিত এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে তার পর এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কিন্তু আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোন আলোচনাই করা হয়নি। কবে চালু হয়েছে কিংবা বন্ধ করল তাও জানা নেই।’

জানতে চাইলে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে পরিচালক বলেছিলেন। তাই সভায় তা নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এরপর এ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুই জানা নেই।’

এদিকে, পরিচালকের বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে হাসপাতালের বর্তমান প্রশাসন তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেহেতু মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনই নেই, তাই এটি কোনভাবেই বৈধ নয়। এখন পরিচালকও নেই, তাই এর দায়ভার আমরা নিতে পারবো না। সে কারণেই  এটি বন্ধ করা হয়েছে।’

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (উপ-পরিচালক) ডা. আফতাবুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘এটা আসলে প্রশাসনিক ব্যাপার, তাই সবাইকে বলতে পারছি না।’ নতুন পরিচালক না আসা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত কাউকে বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক।

‘ইউজার ফি’ আদায় বন্ধ তো আপনি করেছেন, এমন প্রশ্ন করা হলে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘সবকথা তো আপনাকে বলতে পারব না। আমি পরিচালক না, আমি পরিচালকের চার্জে আছি। এ বিষয়ে জানতে হলে পরিচালক আসা পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন