চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুরগি খামারে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে পাঁচ নারী

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া

৩১ মে, ২০২১ | ৬:৫০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক এরকম উখিয়ার পাঁচ নারী উদ্যোক্তাও যৌথভাবে মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

যৌথভাবে অর্গানিক ব্রয়লার মুরগির খামারে সফল পাঁচ নারী উদ্যোক্তা হলেন, উপজেলার পালংখালী পুটিবনিয়ার নারী লায়লা বেগম, আনোয়ার বেগম, সাকেরা বেগম, আনোয়ারা ও রহিমা বেগম।

জানা যায়, আইওএম’র অর্থায়নে ইউনাইটেড পারপাসের সহযোগিতায় ইকরা প্রকল্পের অধীনে ৩৫ হাজার টাকা করে পাঁচ নারী উদ্যোক্তা মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পেয়ে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে। ওই প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিক উপায়ে মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ১ হাজার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা নিয়ে শুরু তাদের খামার। গেল রমজানের শুরুতে আবারও ১ হাজার মুরগির বাচ্চা নিয়ে শুরু করে ২য় ব্যাচ। উদ্যোক্তাদের কঠোর পরিশ্রম ও বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যার ফলে প্রতিটি মুরগি ২৭ দিনে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ গ্রাম ওজনের হয়। প্রতি কেজি ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করে প্রায় ১ লক্ষ টাকা লাভ হয়। এবারও আশানুরূপ লাভ করতে সক্ষম হয়েছে তারা। এভাবে যৌথ খামারে প্রতিদিন ৫ জনই কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। খামারকে রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নিয়মিত বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিতসহ ভ্যাকসিন প্রদান করে থাকে।

মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার বেগম বলেন, দীর্ঘদিন অন্যের খামারে নামমাত্র মজুরিতে কাজ করেছি। সেখান থেকে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করি। পরবর্তীতে ইউনাইটেড পারপাসের ইকরা প্রকল্পের কল্যাণে বাণিজ্যিক মুরগি পালন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি ও নগদ ৩৫ হাজার টাকা পাই। এভাবে আমরা পাঁচজন মিলে যৌথভাবে ব্রয়লার মুরগির খামার শুরু করি। প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৩০-৫০ টাকায় ক্রয় করি। বাচ্চাগুলো বিক্রির উপযোগী করতে ২৫-৩৫ দিন সময় লাগে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা, বেসরকারি সেবাদান সংস্থা ও ইউনাইটেড পারপাসের কর্মীরা নিয়মিত খামার পরিদর্শন করে সকল প্রকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমিসহ খামারে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে একই এলাকার পাঁচজন নারী উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তা লায়লা বেগম জানান, নিজেরা কাজ করে ব্যবসায় লোকসানের চেয়ে লাভের অংশটাই বেশি থাকে। এখন পোল্ট্রি খামার করে স্বাবলম্বী আমরা। বর্তমানে আমাদের পোল্ট্রি খামার দেখে এলাকার নারী সমাজ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই উখিয়ায় অনেকেই এই ব্যবসায় উৎসাহী হয়ে উঠেছে।

উদ্যোক্তা সাকেরা বেগম বলেন, বর্তমানে আমরা পোল্ট্রি করে সংসার চালাই। স্বামীর একার পক্ষে ভালভাবে সংসার চলতো না। এখন আমি খামার করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলছে।

খামারে ভাগ্য বদলে যাবার কথা স্বীকার করে আনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা একজন ৩৫ হাজার টাকা করে পাঁচ জন যৌথভাবে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এখন লাভের টাকা দিয়ে পাশে একটি পুকুর খননে মাছ চাষ করার পরিকল্পনা করছি।

রহিমা বেগম বলেন, আমাদের দেখে এলাকার অনেক নারী-পুরুষ পোল্ট্রি খামার করে তারাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। অবহেলিত নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, গবাদি পশু পালন, নকশীকাঁথা, টেইলারিং, হস্তশিল্প ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার গড়ে তুলতে চাই আমরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাহাব উদ্দিন বলেন, উখিয়ায় এমন নারী উদ্যোক্তা খুবই কম। লায়লা বেগম, আনোয়ার বেগম, সাকেরা বেগম, আনোয়ারা বেগম ও রহিমা বেগমের মতো আরও উদ্যোক্তা তৈরি হলে শুধু উখিয়া নয়, কক্সবাজার জেলায় বেকার সমস্যা দূর করা সম্ভব। চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে হাঁস-মুরগি, গরু ও ছাগলের খামার করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট