চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

এইচএসসি : এসাইনমেন্ট মিলছে অলিগলিতেও

ইমরান বিন ছবুর

২২ আগস্ট, ২০২১ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চকবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে মিলছে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট। ফটোকপি ও প্রিন্টের (কম্পিউটার) দোকানে এসাইনমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানের সামনে ‘এসাইনমেন্ট প্রস্তুত করা হয়’ রীতিমত এমন স্টিকার টাঙানো রয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা গিয়ে তা কিনে নিয়ে আসছেন। এছাড়াও, অনলাইনে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগের এসাইনমেন্ট রয়েছে। যে কেউ চাইলেই তা ডাউনলোড করতে পারছে। অন্যদিকে, কপি-পেস্ট করে জমা দেওয়া এসব এসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের কোন কাজে আসবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা। তবে এসাইনমেন্ট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে নকল বা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে তা বাতিল করা হবে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক (কলেজ)।
কপি-পেস্ট বা নকল বন্ধ করতে এসাইনমেন্ট কার্যক্রম সরেজমিনে মনিটরিংয়ে সব সরকারি বেসরকারি স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গত ১৮ আগস্ট মাউশি এ নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থী নকল করে বা অসদুপায় অবলম্বন করে এসাইনমেন্ট করলে তা বাতিল করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে কমিটিকে। অধিদপ্তর থেকে সব স্কুল কলেজের প্রধানদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নগরীর ‘শিক্ষা পাড়া’ খ্যাত চকবাজার এলাকার বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এইচএসসি শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিভাগের এসাইনমেন্ট বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু প্রশ্ন নিতে চাইলে প্রশ্ন, আর প্রশ্ন উত্তর দু’টিই নিতে চাইলে তাও বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি পেইজের দাম নেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা। শিক্ষার্থী, অভিভাবক অথবা যে কেউ দোকানে গেলেই মিলছে এসাইনমেন্ট।
নগরী ছাড়াও এখন উপজেলা ও গ্রামের বিভিন্ন ফটোকপি ও প্রিন্টের দোকানে শিক্ষার্থীদের এসব এসাইনমেন্ট বিক্রি করতে দেখা যায়। দোকানের বাইরে ‘এইচএসসি শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট প্রস্তুত করা হয়’ এমন লেখাও রয়েছে। এসব দোকানদারের সাথে কথা বলেন, তারা বিভিন্ন কোচিং এবং অনলাইন থেকে শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট প্রস্তুত করছেন। এসব এসাইনমেন্ট মানসম্মত কিনা জানতে চাইলে দোকানদাররা বলেন, অনেকেই তো নিয়ে যাচ্ছেন।
নগরীর বিভিন্ন কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন বা ফটোকপি ও প্রিন্টের দোকান থেকে এসাইনমেন্টের প্রশ্ন উত্তর কপি করে বাসায় বসে হাতে লিখছে। এ এসাইনমেন্টের ফলে কোন উপকার হবে কিনা জানতে চাইলে, উপকার হচ্ছে না বরং সময় নষ্ট হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তারা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, উন্নত বিশে^ সফটওয়্যার অনলাইনে পাঠাতে হয় এবং এসাইমেন্টে নকল ধরার সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এসাইনমেন্ট কেউ নকল করলে সফটওয়্যারে তা ধরা পড়ে। এসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার্থীরা নতুন। তাছাড়া, করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় শিক্ষার্থীদের কোন রকমে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট রাখার জন্য এসাইনমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের নির্দেশনা রয়েছে, এসাইনমেন্টগুলো বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে। কোনভাবে এসাইনমেন্ট মিলে গেলে বা কপি মনে হলে, প্রয়োজনে ওই শিক্ষার্থীকে আবার ডাকা হবে। এসাইনমেন্টের ব্যাপারে আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, গত বছর করোনার জন্য পরীক্ষা নিতে পারেনি। এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে। তবে সবাই দেখছি অনলাইনে বসে দেখে দেখে হাতে লিখছে। কপি-পেস্ট করা এসব এসাইনমেন্ট যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এছাড়া, দেখে দেখে লিখে জমা দেওয়া এসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কী উপকার হবে তা আমার বোধগোম্য নয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক (কলেজ) ড. গাজী গোলাম মাওলা বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- এসাইনমেন্ট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থী যদি নকল বা অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তার এসাইনমেন্ট বাতিল হয়ে যাবে। আমাদের শিক্ষকবৃন্দের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে, যদি কোন শিক্ষার্থী নেট বা অন্য কোথাও থেকে এসাইনমেন্ট কপি করে তা যেন বাতিল করা হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর ৩০টি এসাইনমেন্ট থাকবে। কোন শিক্ষার্থীর যদি একটি এসাইনমেন্ট বাতিল হয়, তাহলে তার ২৯টি এসাইনমেন্ট কাউন্ট করা হবে।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন