চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জীবের প্রতি ভালবাসা

সাইমুম চৌধুরী

২৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

১৯ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ভালুকের ১৫ বছর কারাবাস শিরোনামে একটি চমকপ্রদ খবর নজরে এলো। ২০০৪ সালে কাজাখস্তানের বিজ্ঞ আদালত এক ভালুককে ১৫ বছর কারাদ- দিয়েছিল। ওই ভালুকের অপরাধ ছিল দু’জন মানুষকে আহত করা। উল্লেখ্য ওই ভালুকের গায়ের রং ছিল বাদামি। বাদামি রঙের ভালুকটির নাম ছিল কাতিয়া। কাতিয়া বাদামি রঙের হওয়ায় সবার আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। কাতিয়ার কারাদ-ের খবরটি প্রচার মাধ্যমে প্রচারের পর সে মানুষের কাছে বিখ্যাত হয়ে যায়। কাতিয়াকে কারাদ- ভোগের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কাজাখস্তানের কোস্তানি নামক কারাগারে। সেই কারাগারে ওই সময় ওই দেশের ভয়ংকর ৭৩০ জন অপরাধী ছিল। কাতিয়া ওই জেলে বেশ ভালই ছিল। জেলের মধ্যে সুইমিংপুল ছিল। ওই সুইমিংপুলে কাতিয়া খেলতো। সুইমিংপুলের কাছাকাছি কর্তৃপক্ষ কাতিয়ার ঘুমানোর জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বন্দীরা কাতিয়াকে খুব পছন্দ করতো এবং ভালবাসতো। কারাকর্তৃপক্ষ যে কাতিয়াকে খুব ভালবাসতো তার, প্রমাণ এখনো রয়ে গিয়েছে। তা হলো কর্তৃপক্ষ কাতিয়ার একটি ভাস্কর্য তৈরী করে রেখেছে। কাতিয়া যতই আরাম আয়েশে থাকুক না কেন সবশেষে বলতে হয় কাতিয়া একটি বন্যপশু। বন হলো তার আবাসস্থল। যাক কাতিয়ার ১৫ বছর জেল জীবন শেষে কারাকর্তৃপক্ষ তাকে আবাক শিনো নামের ছোট্ট চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেয়। ওই চিড়িয়াখানায় আরো ক’টি ভালুক ছিল। সেই চিড়িয়াখানায় ইয়াশকা নামের এক ভালুকের সাথে কাতিয়ার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ইয়াশকা প্রথমেই কাতিয়াকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। পশুর সাথে পশুর কি ঘনিষ্ঠতা। তা আবার একই প্রজাতির হলে কথাই নেই। দৈনিকের পাতায় উল্লেখিত বিষয়টি পড়ে আমার মনে একটি বিষয় নাড়া দিয়েছে। সেটা হলো কাজাখস্তানের প্রশাসন ও বিজ্ঞ আদালত দোষী ভালুক কাতিয়াকে মৃত্যুদ- না দিয়ে ১৫ বছর কারাদ- দিয়েছিল। কাতিয়াকে কারাভোগের জন্য রাখা হয়েছিল কারাবন্দী মানুষের সাথে। এই যে জীবের প্রতি কাজাখস্তানবাসীদের ভালবাসা তা অবাক হবার মত।

আমাদের দেশে সাধারণত ভাদ্র মাসে কুকুর পাগল হয়ে থাকে। পাগল কুকুরকে আমরা পিটিয়ে মেরে ফেলি। অথচ এই বেওয়ারিশ কুকুরগুলো ডাস্টবিনের বা রাস্তার পাশে আমাদের ফেলে দেয়া বাসাবাড়ির বর্জ্য খেয়ে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিদিন।

এছাড়া ঘরবাড়ি চোরের উপদ্রব থেকে রক্ষায় কাজ করে থাকে। তাই বলবো পাগলা কুকুরকে পিটিয়ে বা বিষ প্রয়োগে না মেরে কুকুরের চিকিৎসার জন্য সরকারের এগিয়ে আসতে হবে। অনেকেই বিড়াল পোষেণ। বিড়ালের স্বভাব হলো, কোন খাবার পেলেই তাতে মুখ দেয়া। তাই বিড়ালের এই বদাভ্যাস বন্ধে আমাদের সাবধানী হতে হবে। খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে, বিড়ালের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। ঠিক তেমনি কাকের ছোঁ মেরে খাদ্য দ্রব্য রক্ষা করতে হবে। জীব, জন্তু, পাখীসহ প্রতিটি জীব মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন। তাই সকল জীব জন্তুকে মানুষ ভালবাসতে হবে। এটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট