চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চাই কঠোর পদক্ষেপ অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল

২৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৩৭ পূর্বাহ্ণ

মশা নানা জটিল রোগের কারণ। আবার মশার কয়েল জনস্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকারক। মশার কয়েলের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে শ্বাসঃকষ্ট সহ নানা ধরনের ব্যাধির শিকার হয় মানুষ। যার কারণে মশার কয়েল ব্যবহার না করে মশারি ব্যবহারকে উৎসাহিত করছেন চিকিৎসকরা। তবে, এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রচার-প্রচারণার অভাব রয়েছে দেশে। ফলে সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ এখনও মশা তাড়াতে মশার কয়েলের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এ সুযোগে একটি অশুভচক্র অবৈধ ও অনুমোদনহীন পন্থায় মশার কয়েল উৎপাদন করে তা নানা কৌশলে ভোক্তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনিক শৈথিল্যের সুযোগকে ব্যবহার করে এরা রাতারাতি ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে গেলেও বারোটা বাজছে জনস্বাস্থ্যের। এমন চিত্র জনকাম্য নয়।

অনুমোদনহীন এসব মশার কয়েল ডেকে আনছে জনস্বাস্থ্যের চরম বিপর্যয়। অনুমোদনহীন পন্থায় বিষাক্ত মশার কয়েল উৎপাদন ও বিপণন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারণ এসব কয়েল ব্যবহারে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালিতে প্রদাহ, ক্যান্সার হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভস্থ শিশুদেরও বিকলাঙ্গতাসহ মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে এখন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব বিষাক্ত কয়েল। সাধারণত নি¤œ আয়ের অসচেতন মানুষজনই এসব কয়েলের প্রধান ব্যবহারকারী। উল্লেখ্য, বৈধ ও অনুমোদিত পন্থায় উৎপাদিত মশার কয়েলও স্বাস্থ্যহানিকর বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ মশার কয়েল একটা কীটনাশক। অন্যান্য কীটনাশকের মতো মশার কয়েলও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। কোনো কোনো গবেষকের দাবি, একটি মশার কয়েল ৫২টি সিগারেটের চেয়েও ক্ষতিকর। নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃত মশার কয়েলও ক্ষতিকর প্রভাব রাখে জনস্বাস্থ্যে। কয়েলের ধোঁয়াতে নাক, গলা, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মারাত্মক নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় ব্যবহারকারীরা। মশা নিধনের কয়েল শিশু ও মায়ের জন্যে অনেক বেশি ক্ষতিকর। আর অবৈধ ও অনুমোদনহীন পন্থায় উৎপাদিত মশার কয়েল তো সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষিত মাত্রার চেয়ে ভিন্ন বা বেশি মাত্রার এসব কয়েল আমাদের দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। দীর্ঘদিন এসব কয়েল ব্যবহারের ফলে মানবশরীরে বাসা বাঁধছে ভয়ঙ্কর সব রোগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুমোদনহীন কয়েলে ‘একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’ (ক্যামিকেল) যথেষ্ট ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার, শ্বাসনালীতে প্রদাহসহ বিকলঙ্গতার মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে। এমনকি গর্বের শিশুও এসব ক্ষতির শিকার হতে পারে। খাদ্যের ফরমালিন ও পানির আর্সেনিকের প্রভাব যেমন দীর্ঘমেয়াদী, তেমনি এসব কয়েলের বিষাক্ত উপাদান মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগের বাসা তৈরি করছে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যহানি রোধ করতে দেশের অবৈধ ও অনুমোদনহীন মশার কয়েল উৎপাদনকারী কারখানাগুলো বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে নির্লিপ্ততা বা কোনো ধরনের শৈথিল্য জাতির জন্যে মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। পাশাপাশি মশার কয়েল যে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানিকর তাও প্রচার করতে হবে ব্যাপক মাত্রায়। মশার কয়েলের পরিবর্তে মশারি ব্যবহারকেই উৎসাহিত করতে হবে। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নিতে হবে নানামুখী কর্মসূচি।

তবে, মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধংস করে মশা নিধনে দুর্নীতিমুক্ত কার্যকর আন্তরিক পদক্ষেপ না থাকলে মশার উৎপাত দিন দিন বেড়েই যাবে। আর এর সুযোগ নেবে অবৈধ ও অনুমোদনহীন পন্থায় মশার কয়েল উৎপাদনকারীরা। মনে রাখা দরকার, সদিচ্ছা থাকলে মশা নিয়ন্ত্রণ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। মশার উৎপাদনস্থলগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। একটি মশামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে আন্তরিক ও সুচিন্তিত বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ থাকলে সুফল অবশ্যই আসবে। সুচিন্তিত পদক্ষেপে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তেমনিভাবে মশা নিয়ন্ত্রণেও সাফল্য আসবে, যদি থাকে আন্তরিকতা এবং সুপরিকল্পনা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট