চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুক্তিযোদ্ধা-রাজনীতিক মঈনুদ্দিন খান বাদল এবং চট্টগ্রামে জাসদ গঠনকালের নানা কথা

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

২৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে জাসদের একটি অধ্যায়ের অবসান হলো। সদ্য প্রয়াত জাসদ নেতা জনাব মঈনুদ্দিন খান বাদলকে দিয়ে এই অধ্যায়ের সূচনা এবং তাঁর প্রয়াণের মধ্য দিয়ে সেই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। জাসদ আছে, জাসদ থাকবে কিন্তু বাদল ভাই জাসদের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রাজনৈতিক ধারার জন্ম দিয়েছিলেন, সযত্ন পরিচর্যায় তাকে লালন করেছিলেন, বিকশিত ও পরিবর্ধিত করেছিলেন, সেটি তো আর রইলো না।
৭২-৭৩ সালে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের বন্দর শহর চট্টগ্রামে জাসদ রাজনীতির উদ্ভবের খবর যারা রাখেন, তারাই একমাত্র আমার কথার মর্মার্থ বুঝতে পারবেন। আজ যে রাজনীতিক মঈনুদ্দিন খান বাদলকে বাংলাদেশ চেনে, তিনি একান্তভাবে স্বাধীনতার সন্তান, বাংলাদেশের সৃষ্টি। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন; কিন্তু তখনো তাঁর ওপর পাদপ্রদীপের আলো পড়েনি। তিনি সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছিলেন, সে তাঁর মতো অনেকেই ছিলেন। ৭১-এর মার্চের অসহযোগ আন্দোলন যখন দ্রুত বেগে চূড়ান্ত পরিণতি অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছিলো, তখন সিরাজুল আলম খান তাঁকে কিছু পোস্টার আর লিফলেট বিতরণের অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে চট্টগ্রামে পাঠিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে এসে তাঁর সেসব বিলি-বন্দোবস্ত করতে করতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বোয়ালখালীতে তাঁর বাড়িতে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে তেমন কারো সঙ্গে তাঁর জানাশোনা ছিলো না। শহরে তাঁর কন্টাক্ট ছিলো; আগ্রাবাদের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা মরহুম জালাল ভাই ছিলেন তাঁর খালাতো ভাই আর পতেঙ্গার কাঠগড়ের আড়কাঠি জনাব আলী মেম্বারও ছিলেন তাঁর আত্মীয়। একারণে যুদ্ধ করার জন্য শহরই ছিলো তাঁর পছন্দ আর তিনি নিজেও বই টই পড়ে আরবান গেরিলা ওয়ারফেয়ার-এর ওপর কিছু এলেম হাসিল করেছিলেন। অতএব গোলাগুলির মধ্যে একদিন শহরে এসে আগ্রাবাদে তাঁর খালার বাসায় হাজির হয়ে গেলেন। তাঁর খালার বাসাটা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি; জালাল ভাই, আলাউদ্দিন ভাই এবং তাঁদের আরো এক ভাই যাঁর নামটা এখন মনে করতে পারছিনা, সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মৌলভী সৈয়দের গ্রুপে কাজ করছিলেন। বাদল ভাইও অনতিবিলম্বে খালাতো ভাইদের অনুসরণ করে সৈয়দ ভাই’র সঙ্গে ভিড়ে গেলেন। বাদল ভাই’র সাহস ছিলো; অতুলনীয় সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ছিলেন তিনি। অচিরেই তিনি সৈয়দ ভাই’র আস্থাভাজন লেফটেন্যান্ট রূপে পরিগণিত হলেন। আবু সাঈদ সরদার মনে করিয়ে দিয়েছেন, সৈয়দ ভাই তাঁকে অন্যতম বেইজ কমান্ডার নিযুক্ত করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান হলো, তিনি দুনিয়া কাঁপানো ‘অপারেশন জ্যাকপটে’র অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন। এই অপারেশনের জন্য নৌ কমান্ডো ও তাদের লিমপেট মাইনসহ অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র শহরে আনয়ন, তাদের থাকা-খাওয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং অপারেশনের জন্য কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরবর্তী বর্তমান কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা, চরলক্ষ্যা, শিকলবাহা প্রভৃতি গ্রামে পাঠানো এবং অপারেশনের পর তাদের আবার শহরে ফিরিয়ে এনে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার এই কাজটি যত সহজে আমি লিখলাম, তখন এত সহজ ছিলো না। কিন্তু বাদল ভাইরা কী নিপুণভাবে না এই কঠিনতম ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলি করেছিলেন। কোথাও এতটুকু অসতর্কতা বা শৈথিল্যের ফলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারতো। কিন্তু বাদল ভাইদের দক্ষ তদারকি ও ব্যবস্থাপনার কারণে পান থেকে চুনও খসেনি। পাকিস্তানি বাহিনী ছিলো উল্লুক, প্রায় অর্ধশতাধিক নেভাল কমান্ডো মাইন, বিস্ফোরক, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শহরের বুকের ওপর দিয়ে এলেন গেলেন, থাকলেনও দু’একদিন, কিন্তু মাথামোটা পাকিস্তানি জানোয়াররা কিছুই ঠাহর করতে পারেনি। এইখানেই বাদল ভাইকে আমি বেশি নম্বর দিতে চাই। নেভাল কমান্ডোদের কমান্ডার এ ডব্লিউ চৌধুরী বীর উত্তম, বীর বিক্রম চট্টগ্রামের বিজয় মেলায় এসে তাঁর স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতায় বাদল ভাই’র কৃতিত্বকে স্বীকার করে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হারিছদা, ইঞ্জিনিয়ার হারুন ভাই, শাহজাহান খান এবং আনিস কাদেরী প্রমুখের সঙ্গে বাদল ভাই’র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং আজীবন সে সম্পর্ক অটুট ছিলো।

বাদল ভাই’র অনেক পরিচয় এখন বাংলাদেশের মানুষের জানা হয়েছে। যেমন তিনি একজন অসাধারণ সংগঠক, তুখোড় বক্তা, দুর্দান্ত পার্লামেন্টারিয়ান, প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, জনদরদী রাজনীতিক এবং চট্টলপ্রেমি নেতা ছিলেন। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয়, বাদল ভাই’র সম্পূর্ণ পরিচয় ‘ইহাতে’ পাওয়া যায় না। তিনি যে একজন ড্রিম মার্চেন্ট ছিলেন, রোমান্টিক বিপ্লবী ছিলেন, যেটা তিনি গণতান্ত্রিক ও পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে প্রবিষ্ট হওয়ার পর সচেতনভাবে আড়ালে রেখে দিয়েছিলেন, সেইখানে আদি ও অকৃত্রিম মঈনুদ্দিন খান বাদলকে পাওয়া যাবে। মুক্তিযুদ্ধের দুরন্ত দিনের পলাতক সময়ে তিনি রেজিস দেব্রে, জুলিয়াস ফুচিক, চেগুয়েভারা, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, জেনারেল গিয়াপ, মাওসেতুং-এর বই পড়ে পড়ে তাঁর বিপ্লবী চেতনাকে শাণিত করে তুলেছিলেন। আমার একথার সমর্থনে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। স্বাধীনতার পরপরই বাদল ভাই, রুশ্নি ভাই, সম্ভবত শাহাজাহান ভাইও (খান) জুবিলি রোডে ইউসুফ চৌধুরীর (পরবর্তীকালে পূর্বকোণের মালিক) সিগনেট প্রেসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আড্ডা জমালেন এবং কিছুদিনের মধ্যে তাঁরা ‘গণমত’ নামে একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকা প্রকাশ করলেন। ঐ পত্রিকায় বাদল ভাই ক্যাস্ট্রোর ‘ঐরংঃড়ৎু রিষষ ধনংড়ষাব সব’ বইটির ধারাবাহিক অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশে বিপ্লব চর্চার পথ উন্মুক্ত করে দেয়। পাকিস্তান আমলে যা’ ছিলো স্বর্গের নিষিদ্ধ ফল ‘গন্ধম’, যা’ খেয়ে মা হাওয়া ও বাবা আদম স্বর্গচ্যুত হয়ে ধরণীপ্রপাত হয়েছিলেন এবং ধরাধামে মানবজাতির সূচনা করেছিলেন বলে পবিত্র কেতাবে বর্ণিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে সেই নিষিদ্ধ ফল ‘বিপ্লব’ ভক্ষণের জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। পাকিস্তান আমলে অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন, সুধাংশু বিমল দত্ত, পূর্ণেন্দু দস্তিদার-সুখেন্দু দস্তিদার-শরদিন্দু দস্তিদার ভ্রাতাত্রয়, দেবেন শিকদার, চৌধুরী হারুনুর রশিদ, আবদুস সাত্তার, কালীপদ চক্রবর্তী, পূর্ণেন্দু কানুনগো-রা বছরের পর বছর আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন কাটিয়ে দিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কিন্তু বিপ্লবচর্চার ওপর কোন বাধা-বিঘœ রইলো না। ফলে সিরাজ শিকদার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলেন। বনেদী বিপ্লবীরা তখন নকশালবাড়ির পথ পেয়ে গেছেন। ওদিকে বহু বছর বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীনতার ম্ক্তু হাওয়ায় আনন্দের ওড়াওড়ির মধ্যে আওয়ামী লীগের অনুগামী ছাত্র সংগঠন খোদ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরেই বিপ্লবের দামামা বেজে উঠলো এবং বিদ্রোহী গরিষ্ঠ অংশ ও আওয়ামী লীগ থেকেও ক্ষুদ্র একটি অংশ বেরিয়ে গঠন করে ফেললেন একটি সমাজতান্ত্রিক দল। যার পোশাকি নাম জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সংক্ষেপ জাসদ। স্বাধীন বাংলাদেশের জঠর থেকে উদ্ভূত প্রথম বিরোধী দলও জাসদই ছিলো। স্বাধীনতার বেশ আগে থেকেই এই দিনটির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন নিউক্লিয়াসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ-এর চার প্রধানের অন্যতম জনাব সিরাজুল আলম খান। সুতরাং কর্ষিত জমিতেই তিনি বিপ্লবের (জাসদের সৃষ্টিকে ‘বিপ্লব’ বলতে আপত্তি থাকলে আওয়ামী লীগে ‘বিদ্রোহ’ বললে নিশ্চয়ই আপত্তি হবে না; এই বিদ্রোহও তো এক অর্থে বিপ্লবই) বীজ বুনলেন এবং ভালোই ফসল উৎপন্ন করলেন।

চট্টগ্রামে জাসদের বেশ সাড়াই মিলেছিলো। জাসদের জন্ম বাদল ভাইয়ের বিপ্লবী চেতনার পরিপোষকতা করলো। ‘দাদা’ অর্থাৎ সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে পূর্ব যোগাযোগের সূত্রে তিনি চট্টগ্রামে জাসদে দাখিল হলেন।
এই প্রসঙ্গেই আমার পূর্বের কথার জের টেনে বলতে চাই, চট্টগ্রামের জাসদ রাজনীতিতে বাদল ভাইয়ের অন্তর্ভুক্তি একটি স্বতন্ত্র ধারার সূচনা করেছিলো। কেন চট্টগ্রামে জাসদের রাজনীতি দুই ধারায় প্রবাহিত হয়েছিলো, তার কারণ আমি বলতে পারবো না। তবে তা’ গোপন ছিলো না। আন্দরকিল্লায় একটা জাসদ অফিস ছিলো বটে; কিন্তু জাসদ নেতা-কর্মীদের কাছে সেই অফিসের চেয়ে ‘সাগর হোটেল’ ও ‘বাংলা হোটেল’-এর আকর্ষণই ছিলো বেশি।
চট্টগ্রাম শহরের মুক্তিযুদ্ধের এক প্রধান নায়ক এবং মৌলভী সৈয়দের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ও অপারেশন কমান্ডার আবদুল্লাহ আল হারুন, যাঁকে আমি বড় ভাই ও মুরুব্বী জ্ঞানে খুবই মান্য করি, তিনি বললেন, মুক্তিযুদ্ধে বাদল আমার সঙ্গে ছিলো। তিনি অত্যন্ত সাহসী, উৎসাহী, আন্তরিক এবং সৎ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি তাঁকে প্রথম শ্রেণিতে স্থান দিতে চাই। মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের অর্থাৎ সৈয়দ ভাই’র গ্রুপে অনেক বেইজ ওয়ার্কার ছিলেন; তন্মধ্যে চারজন ছিলেন প্রধান-হারিছদা, আবু (আবু সাঈদ সরদার) ও বাদলের নাম একসঙ্গেই বলতে হয় এবং জালাল ভাই।
সাগর হোটেলের অবস্থান এনায়েতবাজার বাটালী রোডে, বাংলা হোটেল কাজির দেউড়িতে। সাগর হোটেলের কেন্দ্রীয় চরিত্র আহমদ শরীফ মনীর (অধ্যক্ষ); মনীর ভাইয়ের সিনিয়র মোখতার ভাই, সমসাময়িক ছাবের ভাই (ছাবের আহমদ আজগরী) ও মঞ্জু ভাইও (অধ্যাপক নুরুদ্দিন জাহেদ মঞ্জু) সাগর হোটেল-কেন্দ্রীক রাজনীতির মুখ্য সংগঠক ছিলেন। শরীফ ভাই তাঁদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামে জাসদের বিশাল সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। আমার মামা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের অবদানও অনস্বীকার্য। তিনি তো সবার সিনিয়র; মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে নিউক্লিয়াস তথা স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতির তিনিই তো প্রধান সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ভারতে যেতে পারেন নি, এটাই ছিলো তাঁর একমাত্র দুর্বলতা। ভারতে যেতে পারলে তিনিই হতেন চট্টগ্রামে জাসদের মূল নেতা এবং কেন্দ্রেরও অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা। আমার মামা বাংলা ও সাগরের মধ্যে শাটল করতেন এবং দু’গ্রুপের মধ্যে সেতুবন্ধ স্বরূপ ছিলেন। বাংলা হোটেল পরে তাঁর শ্বশুর বাড়ি হয়ে যায়।

সাগর হোটেলের মালিক ছিলেন শরীফ ভাইয়ের বড় ভাই ইমাম শরীফদা। জাসদের জন্য তিনি যে অপরিসীম ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করেছেন তার কোন তুলনা হয় না। কিন্তু তাঁর কথা এখন কেউ বলেন না। অর্থ দিয়ে, তাঁর আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাসাও জাসদ নেতা-কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে তিনি নবীন রাজনৈতিক দলটিকে চট্টগ্রামের মাটিতে শিকড় গাড়তে ব্যাপক অবদান রাখেন। আমি আরিফ ভাই, মার্শাল মনি ভাই, জিকু ভাই, ইনু ভাই, মাহবুব ভাইকে তাঁর বাসায় রাত্রিযাপন করতে দেখেছি। তিনি সমাজতন্ত্রের অনুরাগী এবং মওলানা ভাসানী ও এমএ আজিজের অনুরাগী ছিলেন।
বাংলা হোটেলের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন বাদল ভাই। বাদল ভাই’র প্রথম আখড়া ছিলো রুবী মুদ্রণালয়। পরে ৫ দল, বাসদ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বিশিষ্ট নেতা কাজী শাহাজাহান ছিলেন রুবী মুদ্রণালয়ের মালিক। পুরো কাজির দেউড়িই ছিলো কাজিদের সম্পত্তি। কাজির দেউড়ির প্রতিষ্ঠা করেন মীর আবদুল গণি; তাঁর বংশের সবচেয়ে কীর্তিমান পুরুষ মীর ইয়াহিয়া। কাজিরা চট্টগ্রামে প্রথম আরবি শিক্ষা প্রচলনের জন্য একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
কাজি বংশের সর্বশেষ গৌরব বা মহিমান্বিত পুরুষ ছিলেন কাজি এনামুল হক; তাঁরই পুত্র কাজি শাহজাহান এবং জামাতা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। বাদল ভাইয়ের সিনিয়র আগরতলা মামলা-খ্যাত বিধানদা (বিধান কৃষ্ণ সেন), অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ, হাশেম ভাই (অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেম), রুশ্নি ভাই (শওকত হাফিজ খান রুশ্নি), ফজলু ভাই (এসএম ফজলুল হক), এ বি এম নিজামুল হক, শাহজাহান ইসলামাবাদী, কাজী শাহজাহান, তসলিম চৌধুরী, প্রমুখ রুবী মুদ্রণালয়কে আলোকিত করে নিত্য জমজমাট রাজনৈতিক আলোচনা ও গল্প-গুজবের আসর বসাতেন। তাঁদের সাহায্য ছাড়া বাদল ভাই মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জাসদে একটি স্বকীয় ও স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টি করে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে টিকে থাকতে পারতেন কিনা সে ব্যাপারে আমার ঘোর সন্দেহ রয়েছে। তা সত্ত্বেও সত্য এটাই যে, প্রথমে রুবী মুদ্রণালয় ও পরে বাংলা হোটেলকে ঘিরে জাসদ নেতা-কর্মীদের যে একটি বলয় সৃষ্টি হয়েছিলো সেটি ‘বাদল গ্রুপ’ নামেই পরিচিতি পেয়েছিলো।আমি সেই সময়ের কথা বলছি, যখন এক ঝাঁক উজ্জ্বল তাঁরার ঝলকানিতে বাংলা হোটেল ঝলমল করে উঠেছিলো। বাদল ভাইকে ঘিরে যেন চাঁদের হাট বসে গিয়েছিলো। (চলবে)

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট