চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চাপে নতিস্বীকার নয় কার্যকর হোক নতুন সড়ক আইন

২৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চলতি নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার ঘোষণায় সচেতন দেশবাসীর মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছিল। সবারই বিশ^াস, আইনটির কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে চালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল হবে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ হবে। এতে যাত্রীসাধারণের ভ্রমণ অনেকটাই নিরাপদ হবে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা বাড়বে পথচারীদেরও। সবারই ধারণা আইনে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে গুরুদ- নিশ্চিত হলে পরিবহন খাতে সুশাসন ফিরে আসবে। এতে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল ধীরলয়ে হলেও ছোট হয়ে আসবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ঘোষণা অনুযায়ী আইনটির প্রয়োগ হয়নি। নানা টেকনিক্যাল অসুবিধার কথা বলে ১ নভেম্বরের পরিবর্তে গত রবিবার থেকে আইনটির প্রয়োগ শুরু করার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তাও তেমন দৃশ্যমান হলো না। আইনটি সংশোধনের জন্যে চাপ প্রয়োগ করতে একদিকে কর্মবিরতির নামে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট ডেকে মালিক-শ্রমিকরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় বিধিমালা না হওয়ায় বেকায়দায় প্রয়োগকারীরা। এ অবস্থায় আইনটির যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীলরা বলছেন, নতুন আইনে সব ধারায় আগের চেয়ে সাজা বাড়ানো হয়েছে। ফলে আইনটি কার্যকর হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমে আসবে। তবে আইনটির বাস্তবায়নে যে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তা অস্বীকারের উপায় নেই। শুরুতেই তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইনের ৪ নম্বর ধারাটি ড্রাইভিং লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট। এ ধারার ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘মোটরযানের শ্রেণি বা ক্যাটাগরি ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।’ ঠিক একইভাবে মোটরযানের নিবন্ধন, ফিটনেস সনদের মেয়াদ, গণপরিবহনের চলাচলের অনুমতি (রুট পারমিট)সহ আরও বেশ কিছু ধারায়ও বিধির কথা বলা আছে। কিন্তু গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বরে সংসদে আইন পাস করার পর এখনো পর্যন্ত এ আইনের অধীনে কোনো বিধিমালা হয়নি। এই আইন কার্যকরে বড় ভূমিকায় থাকা পুলিশও সফটওয়্যার আপডেট না হওয়ায় ট্রাফিক আইন ভঙ্গে জরিমানা বা মামলা করতে পারছে না। বৈধ চালকের অভাবও প্রকট। আইনজ্ঞরা বলছেন, বিধিমালা হচ্ছে আইনের চালক। আইনের অস্পষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট করার জন্য বিধিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিধিমালা প্রণয়ন ছাড়া এই আইন পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব নয়। ফলে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এক বছর আগে সংসদে আইনটি পাস হওয়ার পরও কেনো এ পর্যন্ত বিধিমালা হয়নি তা বোধগম্য নয়। এ এক বছরে নতুন আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতেও কোনো কর্মসূচি কেনো দৃশ্যমান হয়নি, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে। অন্যদিকে কয়েকটি বিধান সংশোধনের জন্য চাপ রয়েছে মালিক-চালক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। দাবি আদায়ের জন্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মঘট ডেকে তারা নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষও তাদের হেনস্থার শিকার হয়েছেন। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নৈরাজ্যিক তৎপরতা দেখে মনে হয় তারা জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় করতে চান। আইন বাস্তবায়নে সহায়ক জনবল সংকটও রয়েছে বিআরটিএর। এই পরিস্থিতিতে ১ নভেম্বর কার্যকর হওয়া নতুন সড়ক আইন শেষ পর্যন্ত কাগজেই রয়ে যাবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

আমরা মনে করি, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন পরিবহন আইনটি কার্যকরের বিকল্প নেই। আইনটি কার্যকর হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমে আসবে। উল্লেখ্য, সড়কদুর্ঘটনায় হতাহতের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান। বিশেষ করে গত দু’দশকে মাথাপিছু সড়কদুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে গড়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের সড়কনিরাপত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে বছরে ২৪ হাজারের বেশি মানুষ সড়কদুর্ঘটনায় মারা যায়। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দেশে দিন দিন সড়কদুর্ঘটনার মাত্রা বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন পরিবহন আইন কার্যকর হলে সড়কদুর্ঘটনার হার ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে। এতে টেকসই উন্নয়নের পথ মসৃণ হবে। সহজ হবে ভিশন ‘২১-‘৪১ অর্জন। তাছাড়া ২০২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সড়কদুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা সরকারের একটা ভিশনও রয়েছে। এই ভিশন পূরণেও নতুন আইন সাহায্য করবে। তবে সব ফলই নির্ভর করছে আইনটির কার্যকর প্রয়োগের উপর। আমরা আশা করবো, আইনটি বাস্তবায়নে দেশ ও জনস্বার্থে সব পক্ষই সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট