চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্ধ হোক ছাত্ররাজনীতির অপব্যবহার

২৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রত্ব শব্দটির সাথে বই-খাতা কিংবা কলমের যতটা সম্পর্ক থাকা উচিত ছিল ঠিক ততোটা সম্পর্ক নেই; শুধু ছাত্রের সাথে রাজনীতি শব্দটি যোগ হওয়ার কারণে। যে সময়টাতে ছাত্রদের কলম দুর্বার হওয়ার কথা ঠিক সেই সময়টাতে যখন ছাত্রের হাতে অস্ত্র গর্জন করে ওঠে তখন জাতির ভবিষ্যৎ কোনদিকে গড়াচ্ছে তা অনুমান করতে খুব বেশি পন্ডিত হওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না।

ছাত্র রাজনীতি বাংলাদেশে নতুন নয়, বাংলাদেশের জন্মের সাথেই ছাত্র রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছাত্র রাজনীতির সেই সোনালী অধ্যায় এখন ইতিহাসের অংশমাত্র। যে ছাত্ররা ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং ’৯০-এর গণআন্দোলনে এক গৌরবোজ্জল ভূমিকা রেখেছিল, সেই ছাত্রদের উত্তরসূরীরা আজ ছাত্রত্বের শপথ হারিয়ে প্রায় নীতিভ্রষ্ট। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা নীতি আদর্শ থেকে দূরে সরে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন সহিংস কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে থাকে।

ছাত্র যখন শিক্ষার সংস্পর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতা দখলের চেষ্টা, অবৈধ অর্থ উপার্জন, শিক্ষার্থীদের নিকট আতংকের এবং ছাত্রীদের নিরাপত্তার সংহারক হয় তখন তাদের সেই কর্মকা-কে ছাত্রত্ব বিশেষণের সাথে মেলানো যায় না কিংবা উচিতও নয়।
ষাট এবং সত্তরের দশকে এদেশের ছাত্র রাজনীতি ছিল মানুষের কল্যাণের জন্য, জনস্বার্থ রক্ষার জন্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য। বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের বিপরীতে নিজেদের এবং দলীয় হীনস্বার্থে শিক্ষাঙ্গনগুলোয় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পূর্বে ছাত্ররা ব্যবহার করত তাদের মেধাশক্তি, প্রজ্ঞা, সৃজনশীলতা। বিপরীতে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে সরাসরি বিভিন্ন ধরনের দেশী বিদেশী অস্ত্রশস্ত্র। রাজনীতিতে তাদের যে আদর্শ ছিল তা আজ ভূলন্ঠিত। স্বার্থ যেখানে মূখ্য, সংঘাত সেখানে অনিবার্য। বর্তমান ছাত্ররাজনীতির বিভিন্ন নেতিবাচক দিক উল্লেখপূর্বক বহু বুদ্ধিজীবী ছাত্ররাজনীতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে, নতুন করে সংস্কার করতে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। চলমান ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিও তুলেছেন।
দেশের সাধারণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নয়। আগামী দিনের নেতৃত্ব গড়ে তোলার প্রশ্নে ছাত্র রাজনীতির এখনো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তারাও রাজনীতিতে আসতে প্রস্তুত কিন্তু বর্তমান সময়ে চলমান নোংরা রাজনীতিকে তারা ঘৃণা করে। ছাত্র রাজনীতির কথা শুনলেই তাদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নয় বরং ছাত্ররাজনীতিকরা যেন আদর্শবান হয়ে দল-মতের ওপর সত্যকে, শিক্ষার আলোকে স্থান দিতে পারে অন্তত সে নিশ্চয়তাটুকু তো জাতি দাবি করতেই পারে। ছাত্র রাজনীতির সংস্কার সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। জাতির স্বার্থেই ছাত্র রাজনীতি টিকিয়ে রাখা দরকার কেননা জাতি এ স্তর থেকে ভবিষ্যতে তুখোড় রাজনৈতিক নেতা পাবে কিন্তু সেটা বর্তমান পদ্ধতিতে অবশ্যই সম্ভব নয়।
এখনি সময় ছাত্ররাজনীতিকে নতুন করে সাজানোর। প্রথমেই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের অধিকারভিত্তিক হয়, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিক নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্রছায়া থেকে ছাত্র সংগঠনগুলোকে বের করে আনতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত ও সদিচ্ছা। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব সুযোগ্য নেতাদের হাতে তুলে দিতে হবে। যেন তারা দেশের মঙ্গলের জন্য শিক্ষার্থীদের যথোপযুক্ত রাজনৈতিক শিক্ষা দান করতে পারে। একবেলা কিংবা একদিন ভুখা পেটে থাকা যায় কিন্তু বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে এক মুহূর্ত কাটানো কোন বিবেকবান মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

ছাত্ররা রাষ্ট্রের স্তম্ভ। সে স্তম্ভ যদি নড়বড়ে হয় তবে রাষ্ট্রের অন্য সব কিছু ঝুঁকিতে থাকে। রাষ্ট্রকে ঝুঁকিমুক্ত এবং জাতিকে দুশ্চিন্তামুক্ত করতে ছাত্রসমাজকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুস্থ জীবনে ফিরে যাওয়ার পথ এখনই তৈরি করতে হবে।

নাইমা নাসির, সৈয়দা আফরোজা, ফারজানা আকতার
লেখকত্রয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট