চট্টগ্রাম বুধবার, ২২ মে, ২০২৪

হিন্দু বিবাহে কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা মাতার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

সনাতন ধর্ম দর্শনে দশবিধ সংস্কারের অন্যতম প্রধান সংস্কার হচ্ছে বিবাহ। পবিত্র এই বিবাহ পূজা, যজ্ঞ ও মাঙ্গলিক বৈদিক অনুষ্ঠানে মাধ্যমে হয়ে থাকে; যা ধর্মীয়ভাবে খুবই গুরুত্ব বহন করে থাকে। শাস্ত্রানুসারে কন্যাকে সামর্থ্য অনুযায়ী বস্ত্র ও অলংকার দ্বারা আচ্ছাদন করে সৎপাত্রে সম্প্রদান করাই উপযুক্ত বিবাহ। কিন্তু আজ বিবাহ গরিব, নি¤œমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার মাতার জন্য হৃদয়ের রক্তক্ষরণ।

আজকাল বিবাহের লাগামহীন খরচ ও নীরবে যৌতুক প্রথা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা মাতাকে পথে বসানো যেন মুখ্য উদ্দেশ্য। আজ আপনি আপনার জমি অথবা শেষ সম্বল বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন; কিন্তু একদিন আপনার ছেলের বা মেয়ের কন্যা সন্তান হলে তারা কি বিক্রি করবে! একবার কি ভেবে দেখেছেন? কোন পরিবারে যদি ২/৪ টি কন্যা সন্তান থাকে তাহলে সে পিতা মাতার চোখে ঘুম আসে না তার কারণ এ সমাজে অপসংস্কৃতির প্রসার। বরপক্ষের মেয়ে পছন্দ হলে বলে, আমাদের কোন দাবি নেই শুধু বরযাত্রীদের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন ও মেয়েকে সাজিয়ে দেবেন। দাবি না করা মানে সবকিছু দেওয়া; যার অর্থ হচ্ছে নীরবে যৌতুক।

এভাবে নীরব যৌতুক প্রথা হিন্দু সমাজে দিন দিন প্রকোপ আকার ধারণ করছে। ৮০-৯০ দশকের দিকে ক্লাবভিত্তিক বিবাহ প্রচলন ছিল না; কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে কিছু মানুষের আরাম-আয়েশের জন্য ক্লাবভিত্তিক বিবাহের প্রচলন শুরু হয়। আজ থেকে ২০০ বছর আগে নব জাগরণের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার সংস্কার করেছিলেন। তাই আজ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বিবাহের নামে বিলাসী আয়োজনের মতো নীরব যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে পুনঃজাগরিত হতে হবে। আর কোন পিতার যেন সম্পদ বিক্রি করতে না হয় এবং কারো কাছে হাত পাততে না হয়। পিতা-মাতার কাছে কন্যা সন্তান বোঝা নয়, বোঝা হচ্ছে আমাদের অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার।

শ্রীধর দত্ত
মেলঘর, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট