চট্টগ্রাম বুধবার, ২২ মে, ২০২৪

অস্থিতিশীল বাজার ও মজুদদারি

রায়হান আজাদ

৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজমান। এমন নিত্য পণ্য দ্রব্যের ক্রমশ উর্দ্ধগতি বাজার পরিস্থিতিকে মারাত্বক হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

গত মাসের তুলনায় এ মাসে পেঁয়াজের দাম তিনগুণ বেশী। গ্রাম-গঞ্জ-শহরে পেঁয়াজের আকাশ ছোঁয়া দামে কৃষক-শ্রমিক-স্বল্পজীবীদের জীবন ধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এদিকে ক্ষুদ্র পুঁজির সাধারণ ব্যবসায়ীরাও বেকায়দায় রয়েছেন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, মজুদদারি এবং দূরদর্শি পরিকল্পনা না থাকা তদুপরি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কঠোর নজরদারির অভাব এর জন্য দায়ী। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষ বড়ই অসহায় হয়ে পড়েছে। যেখানে যাবতীয় অসদুপায় নিয়ন্ত্রণ করে বাজার মূল্য স্থিতিশীল কিংবা ক্রমহ্রাসমান রাখার কথা ছিল সেক্ষেত্রে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম। মাঝে মাঝে সরকারি অভিযান চালালেও পাইকারী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অতিরিক্ত মুনাফা হাছিলের অশুভ কৌশলের কাছে তা কিছুই না। আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের আচার-আচরণ যেমনি রহস্যজনক তেমনি চরম নৈতিক অধ:পতনের পরিচায়কও বটে।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখা এবং সহজ উপায়ে সবার দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করা সরকার ও ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব ছিল। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বিশেষত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন। যা কোন মতেই ইসলাম সমর্থন করে না। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মজুদদারি, দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, ধোঁকা, প্রতারণা, ভেজাল দেয়া ও অন্যায়ভাবে মূল্য নির্ধারণ কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, “যে পণ্য মজুদ রাখে সে পাপী।” (মুসলিম শরীফ) যে পণ্য গুদামজাত করে রাখে সে অভিশপ্ত।” (ইবনে মাজাহ)“যে পণ্যে ভেজাল দেয়-ব্যবসায় প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়”। হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, মহানবী সা. বলেছেন, “ যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে রাখবে (এর দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেবে) সে এ সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না। (মেশকাত:২৭৭২)অন্য এক হাদীসে মহানবী বলেছেন,“ যে ব্যক্তি আমদানি করবে সে রিজিকপ্রাপ্ত হবে আর যে ব্যক্তি গুদামজাত করবে সে অভিশপ্ত হবে। ( ইবনে মাজাহ: ২১৪৪) পণ্য মজুদদারি গণমানুষের প্রতি চরম অবিচার। এ জুলম সমাজে শান্তি ও স্থিতি বিনষ্ট করে। মানুষের মাঝে হতাশা ঘনিয়ে আসে। অসন্তোষ দানা বাঁধে। তাই আল্লাহ পাক এ ধরনের জুলমের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেছেন, “যে ব্যক্তি সীমালংঘন করে জুলম করতে চায় আমি তাকে বেদনাদায়ক শাস্তি দেব”। (সূরা হজ্ব: আয়াত-২৫)

দেখা যায়, কিছু কিছু ব্যবসায়ী ওজনে কম দেয়। বিভিন্নভাবে ক্রেতাকে ঠকানোর কসরত করে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, “দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষদের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় তখন পুরোপুরি আদায় করে। আবার নিজেরা যখন অন্যের জন্য ওজন কিংবা পরিমাপ করে তখন কম দেয়।” (সূরা আল মোতাফ্ফেফীন: ০১-০৩) “ন্যায়ের সাথে ওজন কর, দাঁড়িপাল্লাকে উঁচু নিচু করো না। ”(সুরা আর রহমান-০৯) পবিত্র আল কুরআনে এ ধরণের আরো বহু আয়াত রয়েছে। উক্ত আয়াতগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে কোন ব্যক্তিকে ওজনে কম দেয়া বৈধ নয়। সুতরাং লোকের প্রাপ্য তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে প্রদান করা অপরিহার্য। বরং লোকের প্রাপ্য তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে প্রদান করার সাথে সাথে তাদেরকে আরো কিছু অংশ বেশী প্রদান করাই উত্তম। তাইতো মহানবী বলেছেন,“তোমরা যখন কোন জিনিস কোন ব্যক্তিকে ওজন করে দেবে তখন তাকে ওজনে কিছু বেশী প্রদান করবে”। (সুনানে ইবনে মাজাহ) ইসলামী শরীয়তে পণ্যে সব ধরনের ভেজাল দেয়া নিষিদ্ধ। এটি চরম গর্হিত কাজ। হোটেল-রেঁেস্তারায় বাসি ও পঁচা খাবার পরিবেশন দন্ডনীয় অপরাধ। ইসলামের স্বর্ণযুগ খোলাফায়ে রাশেদার আমলে এ ধরনের অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির প্রচলন ছিল। কুরআনে কারীমে এসেছে,“ মানুষকে খারাপ বা ত্রুটিযুক্ত জিনিস দিও না, দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। ”(সুরা শুয়ারা-১৮৩) আশা করছি, ইসলামী ও নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ ক্রেতা সাধারণদের কোনভাবেই ঠকাবেন না, তারা মজুদদারি পরিহার করবেন, দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হবেন। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রেখে গরীব মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীলতা প্রদর্শন করবেন ইনশাল্লাহ। আল্লাহ পাক সবাইকে সে তৌফিক দান করুন। আমীন ॥

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট